মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

দোয়ারাবাজারে পাউবো'র দায়সারা কাজ ২৫ লাখ টাকার ফসলরক্ষা বাঁধ চুইয়ে বের হচ্ছে পানি

ধসে পড়ার শঙ্কা
দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
দোয়ারাবাজারে পাউবো'র দায়সারা কাজ ২৫ লাখ টাকার ফসলরক্ষা বাঁধ চুইয়ে বের হচ্ছে পানি
দোয়ারাবাজারে পাউবো'র দায়সারা কাজ ২৫ লাখ টাকার ফসলরক্ষা বাঁধ চুইয়ে বের হচ্ছে পানি

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের নামে দায়সারা কাজ করে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ ও পিআইসি সংশ্লিষ্টরা। উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামে খাসিয়ামারা নদীর ডান তীরে ১৩ নং পিআইসির ফসলরক্ষা বাঁধ চুইয়ে পানি বের হচ্ছে। এতে যেকোনো সময় বাঁধ ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। টেকসই বাঁধ নির্মাণে কাজের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় খাসিয়ামারা নদীর ডান তীরে নোয়াপাড়া এলাকার বাঁধে বড় ধরণের ভাঙন সৃষ্টি হয়। এতে ব্যাপক ফসলহানী ঘটে এবং তলিয়ে যায় শতাধিক ঘরবাড়ি। পুরোপুরি বাস্তুচু্যত হয় প্রায় ৩০ পরিবার। পাউবোর মাধ্যমে এবার এই বাঁধের ৩৪০ মিটার ভাঙা বন্ধ ও পুনরাকৃতিকরণে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৫ লাখ ১০ হাজার ৮১৫ টাকা। বাঁধের একপাশে খাসিয়ামারা নদী ও অপরপাশে নোয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দাদের বসতবাড়ির অবস্থান। কিন্তু এতো বিপুল পরিমাণ টাকা বরাদ্দ দিয়েও ফসল রক্ষা বাঁধের টেকসই কাজ হচ্ছে না। বাঁধ নির্মাণের নামে দায়সারা কাজ করে স্থানীয় পাউবোর কর্মকর্তাদের যোগসাজশে পিআইসির অন্তরালে থাকা প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মাটির বদলে বালু মিশ্রিত দোঁআশ মাটি ও খাসিয়ামারা নদীর বালুমাটি দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে বাঁধ। ফলে এখনি বাঁধ চুইয়ে নদীর পানি বের হচ্ছে। এভাবে দায়সারা ভাবে বাঁধ নির্মাণ করলে বর্ষা মৌসুম আসার আগেই বাঁধ ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৩ নং পিআইসির বাঁধের নিচের অংশ চুইয়ে বের হচ্ছে খাসিয়ামারা নদীর পানি। এছাড়াও বাঁধের একাংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। বাঁধের উচ্চুতার তুলনায় ঢালুর দিকে যে পরিমাণ প্রশস্থ হওয়ার কথা তা এখনো করা হয়নি।

বাঁধের পাশেই ১৩নং পিআইসির সভাপতি আমির হোসেনের দেখা পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, যদিও তিনি এই পিআইসির সভাপতি, কিন্তু তার মাধ্যমে পিআইসির কাজ করাচ্ছেন বক্তারপুর গ্রামের হারুন নামের এক ব্যক্তি।

বাঁধ চুইয়ে পানি বের হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে পিআইসি সভাপতি আমির হোসেন বলেন, 'নদীর পাড়ের সব বাঁধ দিয়েই এভাবে চুইয়ে পানি বের হয়।' এভাবে চুইয়ে পানি বের হলে বাঁধ টেকসই হবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বাঁধের আরও কাজ বাকি আছে। মাটি কেটে ড্রেসিং করা হবে। দুর্মুজ মারার পরে মাটি আরও চাপবে। পরে কার্পেট বিছানো হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'এ এলাকার সব মাটিই এরকম বালু মিশ্রিত দোঁআশ মাটি। এছাড়া আর কোনো মাটি নাই। এসব মাটি দিয়েই বাঁধ নির্মাণ করা হয়।' বাঁধের একাংশে যে ফাটল দেখা দিয়েছে তা মেরামত করা হবে বলে তিনি জানান।

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, 'বাঁধ চুইয়ে এখনি পানি বের হচ্ছে তার মানে এখানে বাঁধের টেকসই কাজ হচ্ছেনা। এখানে পাউবো কর্তৃপক্ষ ও পিআইসি সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি রয়েছে। কাজের মান টেকসই হচ্ছে কীনা এটা নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব। আমরা এখানে দুর্নীতির আলামত দেখতে পাচ্ছি না।'

পানি উন্নয়ন বোর্ড দোয়ারাবাজারের উপসহকারি প্রকৌশলী সাদ্দাম হোসেন বলেন, 'এখানের পিআইসির কাজ খারাপ হয়েছে। আমি ইউএনও'র সঙ্গে আলাপ করেছি। এখানে পিআইসি বাতিল করা হবে।'

জানতে চাইলে দোয়ারাবাজার ইউএনও ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি নেহের নিগার তনু বলেন, 'কিছুদিন আগে আমি এই পিআইসি পরিদর্শন করেছি। এখানে কাজের মান ভালো হয়নি। আমি তাদের আবারও সতর্ক করব।'

পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ পওর বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ইমদাদুল হক বলেন, 'বিষয়টি দেখার জন্য জন্য আমি এখনি এসওকে সংশ্লিষ্ট পিআইসিতে পাঠাচ্ছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে