শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

পোষ মেনেছে বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণি সজারু

জোবায়েদ মলিস্নক বুলবুল, টাঙ্গাইল ও উত্তম আর্য ঘাটাইল প্রতিনিধি
  ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
পোষ মেনেছে বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণি সজারু
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সজারু ছানাটিকে পরম যত্নে খাবার খাওয়াচ্ছেন অটোরিকশা চালক লিটন -যাযাদি

ভালোবাসার মানবিক অনুভূতি ও আবেগকেন্দ্রীক অভিজ্ঞতা এবং উদারতা, সহানুভূতি, স্নেহ এবং বিপরীতের ভালোর জন্য নিঃস্বার্থ-উদ্বেগ প্রকাশে যেমন প্রস্ফূটিত হয়। তেমনই বিশেষ কোন মানুষ বা প্রাণির জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশও ঘটে। মানুষ ও প্রাণির এমনই এক ভালোভাসার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে টাঙ্গাইলে ঘাটাইল উপজেলার সন্ধানপুর ইউনিয়নের কুশারিয়া গ্রামের বাসিন্দা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক লিটন মিয়া। লিটন মিয়ার অকৃত্তিম ভালোবাসায় সারা দিয়ে কুড়িয়ে পাওয়া বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণি সজারু পোষ মেনেছে।

কুড়িয়ে পওয়া বন্য সজারুটির তার ও এলাকার লোকজনেরও দারুণ সখ্যতা গড়ে ওঠেছে। প্রাণিটি দিনরাত লোকালয়ে ইচ্ছেমতো ঘুরে বাড়ির এদিক-সেদিক দৌঁড়ে বেড়াচ্ছে। প্রায় ১১ মাস আগে রমজানের পঞ্চম রাতে ঘাটাইল-সাগরদদিঘী স্থানিক সড়কে কুড়িয়ে পেয়ে কুশারিয়ায় নিজের বাড়িতে আনার পর থেকে সজারুর ছানাটিকে পরম যত্নে লালন-পালন করছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক লিটন। ভালোবাসা পেয়ে বর্তমানে প্রাণিটি অবিশ্বাস্য পোষ মেনে পরিবারের সদস্যের মতো বসবাস করছে।

ঘাটাইলের সন্ধানপুর ইউনিয়নের কুশারিয়া গ্রামে লিটনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির এপার-ওপার দৌঁড়ে বেড়াচ্ছে সজারুর ছানা। কেউ চলার পথে বাধা দিলে পুরো শরীরের কাঁটাগুলো মেলে ধরছে। আদরে গায়ে হাত বুলিয়ে দিলে আনন্দ পাচ্ছে। প্রতিদিন দুপুর ও বিকালে গর্ত থেকে বের হয়ে বাড়ির আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রাণিটি দেখতে উৎসুক জনতা লিটনের বাড়িতে ভিড় করছে। কুড়িয়ে পাওয়া বন্য সজারু ছানাটির নাম রেখেছেন 'পাগলা'।

ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক লিটন মিয়া বলেন, 'পাগলা' বলে ডাক দিলে সজারুটি খাবারের জন্য ছুটে আসে। পেছন পেছন যেতে বললে সে পোষা অন্য প্রাণির মতো সঙ্গে সঙ্গে চলতে থাকে। পোষ মানা সজারু 'পাগলা' সাধারণত কলা, আলু, ফুলকপি, বাধাকপি, পাউরুটি, ভাত, দুধ, বিস্কুট ইত্যাদি খেতে বেশি পছন্দ করে।

লিটন মিয়া জানান, প্রায় ১১ মাস আগে রমজানের পঞ্চম রাতে ঘাটাইল-সাগরদিঘী সড়কের পাশে কুশারিয়া এলাকায় একটা কলার বাগানে ভেজা পড়ে থাকা অবস্থায় সম্ভবত দুই-চারদিন বয়সের সজারুর ছানাটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরিবারের সবার পরিচর্যার মাধ্যমে অসুস্থ সজারু ছানাটিকে সুস্থ করে তোলা হয়। এরপর থেকে সজারু ছানাটি পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে আনন্দে তাদের সঙ্গে বসবাস করছে। ঘরের ভেতর খড় দিয়ে থাকা ও ঘুমানোর জন্যে জায়গা তৈরি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সজারু ছানাটি সেখানে না ঘুমিয়ে ঘরের বাইরে একটা জায়গায় মাটির নিচে নিজেই সুরঙ্গ তৈরি করে সুন্দরভাবে বসবাস করছে।

ওই গ্রামের সাগর আহমেদ জানান, বন্যপ্রাণি সজারু ছানাটি পোষ মানার বিষয়টি আশ্চর্যজনক। এ প্রাণি তো লোকালয়ে মানুষের কাছে পোষ মানার কথা নয়। এগুলো সাধারণত পাহাড়ে গর্তে লুকিয়ে থাকে। লিটনের পরিবারে প্রাণিটি প্রাকৃতিক উপায়ে পোষ মানার বিষয়টি তাকে চরম মুগ্ধ করেছে।

টাঙ্গাইল জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সজারু একদিকে হিংস্র ও অন্যদিকে ভীত একটি প্রাণি। মানুষ বা বনের অন্য প্রাণিদের ভীষন ভয় পায়। অত্যন্ত ছোট অবস্থায় পেয়ে আদর-যত্ন পাওয়ায় ওটা পোষ মেনে থাকতে পারে। তবে ওটা পোষ মানার কোনো প্রাণি নয়- অটোরিকশা চালকের ক্ষেত্রে অনেকটা না মেনে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।

টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ডক্টর আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, সজারু একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণি। বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী সজারু একটি সংরক্ষিত প্রজাতি এবং এর শিকার বা হত্যা আইনগত দন্ডণীয় অপরাধ। তিনি অটোরিকশা চালকের বাড়িতে লোক পাঠিয়ে সজারুটিকে এনে বনে অবমুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে