দেশের উত্তর সীমান্তের ওপারে ভারত নেপার-ভুটান ও চীন ভু-কম্পনে কেঁপে উঠলে তার প্রভাব এসে পড়ে এপারের বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের রংপুর অঞ্চলের আট জেলার ওপর। বাহের দ্যাশের মানুষজনকে থাকতে হয় চরম আতঙ্কে। কারন ভূমিকম্পের উচ্চ লাল তালিকায় রয়েছে উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের আট জেলা রংপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা।
বিগত ২৬ বছর আগে এই রংপুর অঞ্চলকে ভূমিকম্পের রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বলা হয়েছে, এখানে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প দেড় মিনিটের বেশি স্থায়ী হলেই নেমে আসবে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। কিন্তু আগাম প্রস্তুতি নিতে এখানকার আবহাওয়া অফিসে নেই ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্র।
বিভাগীয় শহর রংপুর সহ অন্যান্য জেলায় ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা ও তাৎক্ষণিক উদ্ধারকাজের জন্য কী ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া যায়, তা নির্ধারণে ২০২০ সালে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে তিন দিনের বৈঠক হয়। রংপুর সেনানিবাসে সেই বৈঠকে ছিলেন তৎকালিন সিটি মেয়রসহ ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা। তারা প্রত্যেকেই সুপারিশ আকারে একটি প্রস্তাব পাঠান সরকারের উচ্চ দপ্তরে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারী চার দফায় ভুমিকম্পের আগে গত বছর (২০২৪) ২১ নভেম্বর দুপুর ২টা ২৭ মিনিটে ৩.১ মাত্রার ভূমিকম্প হয় রংপুর অঞ্চলে, যার স্থায়িত্ব ছিল ২৭ সেকেন্ড।
যার উৎপত্তিস্থল ছিল রংপুর সদর উপজেলায়। এর আগে ওই বছরে ৬ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা ২৮ মিনিটে ৪.১ রিখটার স্কেলে এই অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়েছে। এ ছাড়া ২০০৯ সালের আগস্ট থেকে ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এ অঞ্চলে ৯৫ বার ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল ২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল। সেবার নেপালের সেই প্রভাব এসে পড়েছিল এ অঞ্চলে।
রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৭.৫। স্থায়িত্ব ছিল ২৫-৩০ সেকেন্ড। সে বছরের ৫ জানুয়ারি ভোরে দুই দফায় ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে রংপুর অঞ্চল। এর আগে ২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৪১ মিনিট থেকে ভূমিকম্প শুরু হয়, চলে প্রায় সোয়া এক মিনিট। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬.৮। জানা গেছে, ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে ভূমিকম্প হয় দুবার। ২০০৯ সালের আগস্টে পাঁচবার ও সেপ্টেম্বরে তিনবার ভূমিকম্প হয়। এ ছাড়া ২০০৭ সালে ২৫ বার এবং ২০০৮ সালে ৪০ বার ভূমিকম্প হয়েছে এই অঞ্চলে। ২০২০ সালে রংপুর অঞ্চলে ৭৪ বার ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে ৩ থেকে ৪ মাত্রার কম্পন ৩৫ বার, ৪ থেকে ৫ মাত্রার কম্পন ৩৩ বার আর ৫ থেকে ৬ মাত্রার কম্পন হয়েছে ছয়বার।এ ছাড়া ২০২১ সালের ৬ এপ্রিল রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.১, উৎপত্তিস্থল ভুটান।
বেরোবির ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ড. সিফাত রুমানা বলেন, বাংলাদেশের নিচে টেকটনিক পেস্নটের সংঘর্ষের কারণে রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার খুবই শঙ্কা আছে বলে আমরা ধরছি। বিভাগীয় রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান জানান, রংপুর অঞ্চল মিডিয়াম-হাই ডেঞ্জার অবস্থায় আছে। মূলত রাডার দিয়ে আগাম তথ্য জানার সম্ভাবনা কম।
রংপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক কাজী নয়মুজ্জামান জানান, আমরা ভূমিকম্পসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফল্ট লাইনে বড় ভূমিকম্প হয়। আর বাংলাদেশে ফল্ট লাইনে আশেপাশের দেশ। সেই হিসেবে বড় ভূকম্পনে বড় প্রভাব পড়বে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে উৎপন্ন হওয়া প্রত্যেকটা বড় ভূকম্পনের প্রভাবই দেশে বড় করেই এসেছে। রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা, কুমিলস্না ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের কিছু অংশ উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকার একটি অংশ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কুমিলস্না, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিছু অংশ মাঝারি ঝুঁকিতে রয়েছে। আর খুলনা ও বরিশাল বিভাগকে কম ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।