বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২
গফরগাঁওয়ে ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে

মানিকছড়িতে পরিবেশবান্ধব মালচিং পদ্ধতিতে স্কোয়াশ চাষে সফলতা

স্বদেশ ডেস্ক
  ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
মানিকছড়িতে পরিবেশবান্ধব মালচিং পদ্ধতিতে স্কোয়াশ চাষে সফলতা
খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে মালচিং আবাদকৃত স্কোয়াশ ক্ষেতের পরিচর্যা করছেন কৃষক আব্দুর রাজ্জাক -যাযাদি

পরিবেশবান্ধব মালচিং পদ্ধতিতে বিদেশী সবজি স্কোয়াশ চাষে সফলতার সপ্ন দেখছেন খাপগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার কৃষকরা। এদিকে, বেশি লাভের আশায় ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ভুট্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর-

মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে প্রথমবারের মতো অধিক গুণাগুণ সমৃদ্ধ বিদেশী সবজি স্কোয়াশ চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন কৃষক আব্দুর রাজ্জাক। চলতি মৌসুমে উপজেলার এয়াতলংপাড়ায় বেসরকারি সংস্থা আইডিএফের সহযোগিতায় ৩৪ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে এই বিদশী সবজি চাষ করেছেন তিনি। নিয়মিত পরিচর্যায় প্রতিটি গাছেই আশানুরূপ ফলন আসতে শুরু করেছে।

স্কোয়াশ কুমড়ার একটি ইউরোপীয় জাত, যা খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু এবং ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও হার্টের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। স্কোয়াশ মূলত উত্তর আমেরিকা ও মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাষ হয়ে থাকে। স্কোয়াশ অনেকটা দেখতে শশা আকৃতির। এটি শশার মতো লম্বা হলেও রং মিষ্টি কুমড়োর মতো। চাষ পদ্ধতিও মিষ্টি কুমড়োর মতোই। একটি স্কোয়াশ ওজনে ২-৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। উচ্চ ফলনশীল জাতের এ সবজি ভাজি, মাছ ও মাংসের তরকারিতে রান্নার উপযোগী, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এছাড়া এটি সালাদ হিসেবেও খাওয়া যায়।

এ নিয়ে কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, বেসরকারি সংস্থা 'আইডিএফ'র সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো ৩৪শতাংশ জমিতে এ বছর তিনি স্কোয়াশ চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে প্রতিটি গাছেই ফুল-ফলে পরিপূর্ণ হয়েছে। এক বিঘা জমিতে যে পরিমাণ কুমড়া লাগানো যায় তার চেয়ে দ্বিগুণ স্কোয়াশ লাগানো সম্ভব। স্কোয়াশের একেকটি গাছের গোড়ায় ৮ থেকে ১২টি পর্যন্ত ফল বের হয়েছে। বাজার ভালো থাকলে লাভবান হওয়া যাবে।

আইডিএফের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দর্পন চাকমা বলেন, স্কোয়াশ সবজিতে ভিটামিন সি, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামসহ নানা খাদ্য গুণাগুণ রয়েছে। গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে ১০ শতাংশ জমিতে স্কোয়াশ চাষের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছিল। ফলন ভালো হওয়ায় চলতি মৌসুমে ৩৪ শতাংশ জমিতে এই বিদেশি সবজি চাষ হচ্ছে। ফলনও খুবই ভালো এসেছে। আমরা কৃষককে সার, বীজ, মালচিং, বালাইনাশক ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে কৃষি বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে স্কোয়াশের বানিজ্যিক চাষাবাদের বিকাশ হবে।

মানিকছড়ি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা জহির রায়হান জানান, স্কোয়াশ উচ্চ ফলনশীল জাতের একটি সবজি। এখানকার মাটি স্কোয়াশ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। গত বছরও ১০ শতাংশ জমিতে এই বিদেশি সবজির চাষ হয়েছিল। ফলনও বেশ ভালো এসেছিল। উপজেলায় দেশীয় সবজি বাজারে এই স্কোয়াশ নতুন মাত্রা যোগ করবে।

গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে চরাঞ্চলসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দিন দিন ভুট্টার আবাদ বাড়ছে। গবাদিপশুর খাদ্য তৈরিতে ভুট্টার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হওয়ায় সারাবছর চাহিদা থাকে। অন্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে খরচ কম, লাভ জনক, ঝুঁকিহীন, কম পরিশ্রমে বেশি ফসল, অল্প সেচ ও সার প্রয়োগের সুবিধা থাকায় কৃষকেরা এ ফসল চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

তাছাড়া একসময় চরের জমিতে হতো না তেমন ফসল। শত শত একর জমি পড়ে থাকতো অনাবাদি। এসব জমিজুড়ে জন্ম নিতো আগাছা। এখন সেসব জমিতে চাষ করা হচ্ছে ভুট্টা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গফরগাঁও উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত চরআলগী, পাঁচবাগ, দত্তের বাজার, টাঙ্গাব ও নিগুয়ারী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আবাদ হয়েছে ভুট্টা। চরগুলো আগের মতো বছরের অধিকাংশ সময় পানির নিচে থাকে না। এখন বছরের ৩ থেকে ৪ মাস পানি থাকে। এতে বাড়ছে ভুট্টা চাষ।

সরেজমিনে জানা যায়, একসময় চরাঞ্চলবাসীর জীবন-জীবিকা ঘিরে ছিল গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস ও মুরগি পালন। প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেওয়া আগাছার ওপর ভর করেই পশুপালনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন তারা। তবে বেশ কয়েক বছর আগে পশুর খাবারের চাহিদা মেটাতে কেউ কেউ ভুট্টা চাষ শুরু করেন। প্রায় এক যুগ আগেও তারা ভুট্টার গাছকে গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করতেন। তবে প্রায় এক দশক আগে থেকে হলেও ভুট্টার চাষাবাদ বেড়েছে।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আলু ও বোর ধানের চেয়ে ভুট্টা চাষ লাভজনক। উৎপাদন খরচও কম। তাই কৃষকরা কমবেশি লাভবান হওয়ায় ভুট্টাকে বেছে নিয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরে চরাঞ্চলসহ গফরগাঁও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে ভুট্টার চাষাবাদ। ২০২৪-২৫ মৌসুমে ভুট্টার লক্ষমাত্রা ছিল ১৮০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ১৮৫ হেক্টর। গতবছর থেকে এবার ৫ হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। এই আবাদের অধিকাংশই ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চল এলাকার। প্রতি হেক্টর জমিতে ১০ টনের বেশি ভুট্টা উৎপাদিত হয়। কয়েক বছর আগে প্রতি মণ ৫-৬শ' টাকা বিক্রি হলেও এখন বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি মণ ভুট্টা ১২-১৫শ' টাকা বিক্রি হচ্ছে। এতে অন্য ফসলের তুলনায় যথেষ্ট লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। উপজেলার দত্তেরবাজার ইউনিয়নের বরইগাও গ্রামের নাছির উদ্দিন জানান, এ বছর ১০ কাটা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। আবাদ খরচ হবে ২০ হাজার টাকা। আশা করছেন ৭০মণ ভুট্টা পাবেন। প্রতিমণ বিত্রিম্ন করা যাবে ১ হাজার থেকে ১২শ' টাকায়।।

গফরগাঁও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাকুরা নাম্নী বলেন, ভুট্টার বহুবিধ ব্যবহার থাকায় এর চাষ বেড়েই চলছে। মানুষের খাবারের পাশাপাশি ভুট্টা থেকে গো, মাছ ও হাঁস মুরগির খাদ্য তৈরি হয়। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এবার ভালো ফলনের আশাবাদী কৃষক। আমাদের মাঠ কর্মীরা কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে