বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়ে বরাবরের মতোই সরব যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। যবিপ্রবির ১০৪তম রিজেন্ট বোর্ডের সভায় দ্বিতীয় বারের মতো ক্যাম্পাসে সকল প্রকার রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। এদিকে যবিপ্রবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি দেওয়ার জন্য আগ্রহীদের জীবন বৃত্তান্ত আহ্বান করলে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ লক্ষ্য করা যায়। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুক্ত নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ উঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর কমিটির কয়েকজন নেতা শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পরিবর্তে কিছু শিক্ষকের পক্ষ হয়ে কাজ করছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ কোনো রাজনৈতিক দলের কমিটি চায় না শিক্ষার্থীরা। এমনটাই জানিয়েছেন যবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা।
যশোর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম ও নানা অভিযোগ তুলে যবিপ্রবির শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, 'যবিপ্রবি থেকে শুরু হয় কোটা আন্দোলন, যা পরবর্তী জুলাই বিপস্নবে রুপান্তরিত হয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর কমিটিতে অধিকাংশ যবিপ্রবির শিক্ষার্থী হলেও ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি তারা। বরং দেখেছি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সুবিধাবাধী শিক্ষকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদের স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত ছিল, তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করেছে। যবিপ্রবির যে কয়েকজন শিক্ষক ৫ আগস্টে সরকার পতন হওয়ার মাঠে নেমে জয়োলস্নাস করেছে, তাদের টাকায় শহরের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খেয়ে তাদের স্বার্থ হাসিলের বিষয়টি ক্যাম্পাসে ওপেন সিক্রেট। অথচ যারা ফ্যাসিস্টদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বিভিন্নভাবে পাশে ছিল তাদেরকে বিভিন্নভাবে অবহেলিত করছে। সমন্বয়করা যাদের হয়ে কাজ করছে তাদের বেশিরভাগের জুলাই বিপস্নবের পূর্বে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। বরং খোঁজ নিলে দেখতে পাবেন একসময় স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী ছিলেন কিন্তু ভাগবাটোয়ারা-সুবিধা বঞ্চিত হওয়ায় তারা নিজেদের ফ্যাসিবাদী হিসেবে উপস্থাপন করছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের শাস্তির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই, ছাত্রলীগের কয়েকজন দাগী আসামি হল ও ক্যাম্পাসে থাকলেও নিরব ভূমিকা পালন করছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।'
তিনি আরও বলেন, 'এছাড়াও সমন্বয়করা কয়েকজন মাদকসেবনের সঙ্গেও জড়িত থাকার প্রমাণ দেখতে পাই আমরা। এই ধরনের অসৎ নেতৃত্ব আমরা যবিপ্রবি ক্যাম্পাসে দেখতে চাই না। ক্যাম্পাসের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আরও কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করুন সেই দাবি জানাচ্ছি।' জুলাইয়ে ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন চলাকালে যশোরে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনার কথা উলেস্নখ করে আরেক জুবায়ের নামে যবিপ্রবির এক শিক্ষার্থী বলেন, 'যশোরে ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন চলাকালে তৎকালীন ওসির নেতৃত্বে ছাত্রীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ ও ডিবি। এমন হামলার পরও কোতোয়ালি থানার ওসি ও পুলিশ বহাল তবিয়তে রয়েছে। স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কোনো পদক্ষেপ বা কর্মসূচি দেখতে পাচ্ছি না।'
যবিপ্রবি ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রকিবুল হাসান বলেন, 'ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি কখনো শুভ নয়। বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখেছি ক্যাম্পাসের ছাত্র রাজনীতির ভয়ঙ্কর এবং আগ্রাসন রূপ। যশোরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি শিক্ষার্থীদের কল্যাণে দৃশ্যমান কোনো কাজ করতে পারেনি, তাই এই ক্যাম্পাসে কমিটির কোনো প্রয়োজনবোধ মনে করছি না। তবে শিক্ষার্থীদের মাঝে রাজনৈতিক চেতনা, মূল্যবোধ, নেতৃত্ববোধ এবং ব্যক্তিত্ববোধ নিয়ে আসার জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত জরুরী।' যশোরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে পদত্যাগ করা যবিপ্রবির কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান সাব্বির বলেন, 'ছাত্র রাজনীতি ঐতিহাসিকভাবে সমাজ পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হলেও, বর্তমান সময়ে এটি অনেক ক্ষেত্রে দলীয়করণের কারণে বিপথগামী হয়েছে। যদি ছাত্ররাজনীতি সত্যিকারের শিক্ষার্থী অধিকার, গণতন্ত্র ও নেতৃত্ব বিকাশের জন্য হয়, তবে এটি ক্যাম্পাসের জন্য ইতিবাচক হতে পারে। তবে সহিংসতা, দলীয় স্বার্থ ও দুর্নীতিমুক্ত রাখাই আসল চ্যালেঞ্জ। আমরা দেখে এসেছি দলীয় ছাত্র রাজনীতির ভয়ালরুপ। দেশে দলীয়করণ ছাড়া ছাত্ররাজনীতি সম্ভব না। তার প্রেক্ষিতে আমি এবং আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটাই কথা থাকবে ছাত্র রাজনীতির দরকার নেই। অন্তত পক্ষে কোন দলীয় রাজনীতি একদম না।'