রোববার, ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

মরা নদীতে পরিণত হয়েছে দাউদকান্দির খিরাই নদী

দাউদকান্দি (কুমিলস্না) প্রতিনিধি
  ০৭ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
মরা নদীতে পরিণত হয়েছে দাউদকান্দির খিরাই নদী
কুমিলার দাউদকান্দিতে দখল ও খননের অভাবে মরা নদীতে পরিণত হওয়া খিরাই নদী -যাযাদি

কুমিলার দাউদকান্দি-চান্দিনা-কচুয়া-দাউদকান্দি হয়ে মতলব ধনাগোদা পর্যন্ত খিরাই নদীটি অবৈধ দখল ও খননের অভাবে নদীটি মরা নদীতে পরিণত হয়েছে।

ছোট্ট এ নদীটি গোমতীর একটি শাখা নদী। এটির দৈর্ঘ্যে প্রায় ৪০ কি.মি. প্রস্থে সর্বোচ্চ ৬০ মিটার। এটি দাউদকান্দি-চান্দিনা-কচুয়া-দাউদকান্দি হয়ে মতলবে ধনাগোদা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।

আরও সুক্ষ্ণভাবে বললে এটি গৌরিপুর বাজারের উত্তর পাশে গোমতী নদীর একটি অংশ থেকে উৎপত্তি লাভ করে পূর্ব দিকে ইলিয়টগঞ্জের বীরতলায় এসে দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি অংশ মুরাদনগরের সর্বদক্ষিন ইউনিয়ন বাবুটিপাড়া হয়ে পূর্বদিকে মাধাইয়া, চান্দিনা উপজেলার মুখী চলে যায়। যেখানে এসে এটি কয়েকটি খালের সাথে মিলিত হয়।

অন্য অংশটি (প্রধান নদী) ইলিয়টগঞ্জ বাজারের পূর্বপাশ হয়ে ইলিয়টগঞ্জ -শুহিলপুর রোডের পাশ দিয়ে দক্ষিণ মুখী চলতে থাকে। এটি চান্দিনার রানিপুর, উজিরপুর, পিপুইয়ার পাশ দিয়ে কচুয়ার বায়েক হয়ে সাচারে এসে ঘুরগা বিল থেকে আসা একটি খালের সাথে মিলিত হয়ে পশ্চিম মুখী চলতে থাকে। তারপর এটি সুয়ারুল- বড়দৈল- পিতামবর্দি- দক্ষিন নারানাদিয়া(মতলব) হয়ে নায়েরগাঁওয়ে এসে ধনাগোদা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। ধনাগোদা নদীটি পরে মেঘনার সাথে মিলিত হয়েছে।

নদী রক্ষা কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়েবসাইটে এই নদীটির কথা উলেস্নখ নেই চান্দিনা উপজেলার ওয়েবসাইটেও এই নদীটির কথা উলেস্নখ নেই।

এটি যে একটি নদী এবং চান্দিনার সাথে তার সম্পৃক্ততার কিছু তথ্য- গৌরিপুর, রায়পুরের মানুষরা এটিকে মরা নদী বলে ডাকে কারন শীতকালে এটি প্রায় শুকিয়ে যায়।

মুরাদনগরের বাবুটিপাড়া ইউনিয়নের ওয়েবসাইটে এটিকে খিরাই নদী নামে উলেস্নখ করা হয়েছে। পিতামবর্দি নামক জায়গায় দাউদকান্দি ও মতলব উপজেলাকে আলাদা করা নদীটিকে দুপাড়ের মানুষ খিরাই নদী বলেই জানে। আর এই এলাকার মানুষ মনে করে এটি ঘুরগা বিল-জলা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে।

নায়েরগাঁও, মতলবের মানুষরাও এটিকে খিরাই নদী বলেই ডাকে।

নদী সাধারনত আপ স্ট্রিম হতে ডাউনস্ট্রিমের দিকে যায়। খেয়াল করলে দেখবেন এটিও তেমনই। নদী তার নিজস্ব ধর্মের জন্য এঁকেবেকে চলে। এটিও তেমন, আমরা গুগল ম্যাপে তেমনটাই দেখতে পারছি।

চান্দিনা উপজেলার সঙ্গে নদীটির ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে। চান্দিনার উপর দিয়ে এটি প্রায় ৪ কি.মি. পথ বয়ে গেছে এবং বর্ষায় ঘুরগার বিল তথা চান্দিনার পানি প্রবাহ এই নদীর মাধ্যমেই সচল থাকে। আগে নদীতে প্রচুর পরিমান মাছ পাওয়া যেতো।

নদী মরে যাওয়ায় আগের মতো পানি প্রবাহিত না হওয়ায় এখন আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। ঈদ অথবা বিশেষ কোনো উৎসবে মানুষ দল বেধে ট্রলার নিয়ে পিকনিকে যায় নদীতে। আপস্ট্রিমের লোকেরা ডাউনস্ট্রিমের দিকে আর ডাউনস্ট্রিমের লোকেরা আপস্ট্রিমের দিকে।

এক সময়ের চির চঞ্চলা এই নদীটি দখল-দূষনের কারনে হারাতে বসেছে। আজ মানুষ এটিকে মরা নদী, গাঙ বলে ডাকে, দুইদিন পর এটিকে খাল বলে ডাকবে একদিন আসবে মানুষ এটিকে বাড়ির আঙিনা, উঠোন বলে ডাকবে।

সর্বসাধারণের দাবি এই নদীটি খনন করে পূর্বের চেনা-চরিত রূপ ফিরিয়ে দেয়া হোক।

একুশে পদক প্রাপ্ত পরিবেশবিদ মতিন সৈকত বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় খিরাই নদীটি খনন করা প্রয়োজন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে