রোববার, ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২
বস্নাস্ট ও ছত্রাকজনিত রোগের আক্রমণ

আজমিরীগঞ্জে লোকসানের শঙ্কায় অর্ধশতাধিক কাঁচা মরিচ চাষি

আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ০৭ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
আজমিরীগঞ্জে লোকসানের শঙ্কায় অর্ধশতাধিক কাঁচা মরিচ চাষি
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে বস্নাস্ট ও ছত্রাকজনিত রোগে ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচামরিচের ক্ষেত -যাযাদি

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বদলপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের ইউনুস আলী তার ৫৬ শতক জমিতে ব্র্যাক শিখা জাতের কাঁচামরিচ চাষ করেছেন। এ জমি থেকে প্রথম দফায় ৭ মণ মরিচ উত্তোলন করে বিক্রয় করেছেন। এখন দ্বিতীয় দফার উত্তোলন চলছে। বেপারীদের নিকট তিনি প্রতি মণ কাচামরিচ বিক্রি করছেন ১ হাজার ২০০ টাকা দরে। আরও কয়েক দফা মরিচ উত্তোলন করে বিক্রয় করতে পারবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

তবে গত বছর মরিচ চাষে লাভবান হলেও এবার বীজ বপনের সময় বস্নাস্ট ও ছত্রাকজনিত রোগ দেখা দেওয়ায় দু্থদফায় চাষ করতে হয়েছে বিধায় দ্বিগুণ খরচ পড়েছে। এজন্য এবার মরিচ চাষে লোকসানের শঙ্কা করছেন ইউনুস। একইভাবে লোকসানের শঙ্কা করছেন নোয়াগাঁও গ্রামের আরও অর্ধশতাধিক কাঁচামরিচ চাষী। সরেজমিনে দেখা যায়, আজমিরীগঞ্জ-পাহাড়পুর রোডের পিরিজপুর গ্রাম সংলগ্ন বোরো ক্ষেত লাগোয়া শুকনো ফসলের জমিতে অনেকে কাঁচামরিচ আবাদ করেছেন। মালিক-শ্রমিক, নারী-পুরুষ মিলে একসাথে জমি থেকে মরিচ উত্তোলনের কাজ করছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৮০ হেক্টর জমিতে নানাজাতের সজি চাষ হয়েছে। তার মধ্যে মরিচ আবাদ করা হয় ১০ হেক্টর জমিতে।

মরিচ চাষী ইউনুছ আলী জানান, তিনি ৫৬ শতক অর্থাৎ ২ বিঘা জমি ৩০ হাজার টাকায় ইজারা নিয়ে আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি সময়ে এতে ১৫ হাজার টাকার কাঁচামরিচ বীজ বপন করেন। কিন্তু বীজগুলো চারায় রূপান্তর হওয়ার সাথে সাথে রাস্ট ও ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। পরে অন্য এলাকা থেকে আরও ৯ হাজার চারাগাছ প্রতিটি ২ টাকা দরে ক্রয় করে জমিতে আবাদ করেন। পরিবারের নারী-পুরুষসহ শ্রমিকদের নিয়ে জমির পরিচর্যাকরছেন। এখন পর্যন্ত ১৭ মণ মরিচ বিক্রয় করেছেন। তবে খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবার লোকসানের শঙ্কা করছেন তিনি। একইভাবে পরিবারের নারী-পুরুষ সদস্যদের নিয়ে জমি থেকে কাঁচামরিচ উত্তোলন করছিলেন শিহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, গত বছর মরিচ চাষে লাভ হয়েছিল কিন্তু এবার লোকসানের শঙ্কা রয়েছে।

শিহাব আরও জানান, তার ২৮ শতক জমিতে ব্র্যাক শিখা জাতের মরিচ চাষ করতে ৪০ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। এখন পর্যন্ত ১০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন। আরও কিছু মরিচ উত্তোলন করতে পারবেন। অপর চাষী শরীফ উদ্দিনের ৫৬ শতক জমির কাঁচামরিচ চারা প্রথম দফায় বস্নাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়। দ্বিতীয় দফায় চারা রোপনের পর ফের ছত্রাকজনিত সমস্যা দেখা দেয়। ফলে তৃতীয় দফায় আবাদ করতে হয়েছে। আর কয়েকদিন পর মরিচ বিক্রয় করতে পারবেন। তিনিও লোকসানের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এ মৌসুমে বাজারে মরিচের মূলা কম ও পোকার আক্রমণ বেশি হওয়ায় খরচ বেশি পড়েছে এবং লোকসানের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আরও কয়েকজন চাষী।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফে আল মুঈজ বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ১০ হেক্টর জমিতে কাঁচামরিচ আবাদ হয়েছে ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা আছে।

সালথায় পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা

সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরের সালথায় পেঁয়াজের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে চাষিরা। নতুন পেঁয়াজ উত্তোলন শুরু হলেও ন্যায্যমুল্যে পাচ্ছে না তারা। পেঁয়াজ উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে পেঁয়াজের দাম কম। পুরো সৃজনে পেঁয়াজের দাম আরো কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে লোকসান গুনতে হবে পেঁয়াজ চাষিদের। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, গত বছরে চাষিরা পেঁয়াজের মুল্যে ভালো পাওয়ায় এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি (১২ হাজার হেক্টর) জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়। দুই লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদণের সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের চাষি ওহিদ মোল্যা ও গট্টি ইউনিয়নের চাষি জসিম মোল্যা জানান, পেঁয়াজ চাষে বিঘাপ্রতি খরচ ৭০ হাজার থেকে প্রায় ৮০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ ভালো হলে বিঘাপ্রতি ৭০-৮০ মণ ফলন হয়। আর বর্তমান বাজারে পেঁয়াজ প্রতিমন বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা থেকে ১০৫০ টাকা। খরচের চেয়েও কম মুল্যে পাচ্ছে কৃষকরা। প্রতিমণ পেঁয়াজের মুল্যে ২হাজার টাকা হলে কৃষকরা কিছুটা লাভবান হতো। বর্তমানে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

উপজেলার রায়হান শেখ নামে এক বর্গা চাষি বলেন, নিজস্ব জমিতে এবছর প্রতিমণ পেঁয়াজ উৎপাদনে যদি ১১শ' থেকে ১২শ' টাকা খরচ হয়, তাহলে বর্গা চাষিদের দেড়গুন খরচ হবে। তাতে প্রতিমণ পেঁয়াজ উৎপাদণে খরচ পড়বে ১৭শ' টাকা থেকে ১৮শ' টাকা। সর্বনিম্নে বাজারে ২ হাজার টাকা পেঁয়াজের দাম হলে চাষিরা দু-মুঠো ডাল-ভাত খেয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাঁচতে পারতো। পেঁয়াজের ন্যায্যমুল্যে না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে চাষিরা।

উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার সুদীপ বিশ্বাস বলেন, এবছর পেয়াজের বীজের দাম বেশি থাকায় এবং অধিক সেচের প্রয়োজন হওয়ার উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। নিজস্ব জমিতে উৎপাদন ব্যয় মনপ্রতি ৯০০টাকার কাছাকাছি এবং লিজ-বর্গা জমিতে ১৩০০ টাকার কাছাকাছি। মৌসুমের শুরুতে দাম কম থাকলেও আশা করা যায় পরবর্তীতে দাম বৃদ্ধি পাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে