যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরাম ২১ নভেম্বর ১৭ বছরে পদার্পণ করেছে। এ উপলক্ষে ফ্রেন্ডস ফোরাম গাজীপুরের উদ্যোগে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়। শনিবার ২৩ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ হয়। শোভাযাত্রা শেষে গাজীপুর শহরের শিববাড়ি মোড়ে অবস্থিত ইউরোবাংলা রেস্টুরেন্ট ও পার্টিসেন্টারে আলোচনা সভা, কেক কাটা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সবশেষে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডা. খোন্দকার শাহিদুল হক এবং সঞ্চালনায় ছিলেন তপন কুমার চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ রফিকুল কাদের। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নুরুল হক, সিনিয়র ম্যানেজার, দৈনিক যায়যায়দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যায়যায়দিনের বিশেষ প্রতিনিধি মো. জাহাঙ্গীর আলম; ফ্রেন্ডস ফোরামের বিভাগীয় সম্পাদক জ্যোতিষ সমাদ্দার বাবু; যায়যায়দিন গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেন, মহানগর প্রতিনিধি বায়েজীদ হোসেন, গাজীপুর সদর উপজেলা প্রতিনিধি আইয়ুব খান; অবসরপ্রাপ্ত জেলা রেজিস্ট্রার এসএকে রেজাউল করিম, তিতাস গ্যাস ঢাকা মহানগর রমনা জোন-৫ এর উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. এমদাদুল হক, ফ্রেন্ডস ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন ও সদস্য সচিব মো. আব্দুল হামিদ; ফ্রেন্ডস ফোরাম গাজীপুর মহানগর কমিটির সভাপতি মো. আক্তারুজ্জামান; আব্দুল সালাম বিন মান্নান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা; এমএ মুহিত, কলামিস্ট ও পরিচালক, বাংলাদেশ তথ্য ও মানবাধিকার ফাউন্ডেশন; আলমগীর হোসেন, সম্পাদক ও প্রকাশক মুক্ত বলাকা, মো. শাকিল আহমেদ, যায়যায়দিন কাপাসিয়া প্রতিনিধি, মাহফুজা আফরিন মনি, যায়যায়দিন কালীগঞ্জ প্রতিনিধি, কবি ও সাংবাদিক জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া, মো. তৌফিক ইসলাম, যায়যায়দিন মাল্টিমিডিয়া ও কোণাবাড়ি মেট্রোথানা প্রতিনিধি মো. মহসিন আজাদ পাপন, মাল্টিমিডিয়া প্রতিনিধি; সাংবাদিক অলিদুর রহমান অলি; মো. মাহবুবুর রহমান জিলানী, ফ্রেন্ডস ফোরাম টঙ্গী শাখার আহ্বায়ক।
অনুষ্ঠান শুরুর প্রথমে সভাপতির আসন গ্রহণ করেন মো. ডা. খোন্দকার শাহিদুল হক। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক জেল সুপার মোহাম্মদ রফিকুল কাদের, প্রধান অতিথি যায়যায়দিনের সিনিয়র ম্যানেজার নুরুল হকসহ অন্য অতিথিরা মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। এর পরে সম্মানিত অতিথিগণকে ফুলেল শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের মাধ্যমে বরণ করে নেওয়া হয়। প্রধান অতিথিকে ফুল দিয়ে বরণ করেন ডা. সাদিয়া সুলতানা। অন্য অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করেন ত্রেয়া, আফরোজা আক্তার সানি, সিনথিয়া আক্তার, জিসান ও দাইয়ান। এরপর অতিথিদের সম্মানসূচক ব্যাজ পরিয়ে দেন নূরে আলম সিদ্দিকী, ওমর ফারুক জিতু ও অন্য সদস্যগণ। ডা. খোন্দকার শাহিদুল হকের নিজের লেখা দুটি বই উপহার হিসেবে ও উপদেষ্টা আবুল হোসেন শুভেচ্ছাস্মারক অতিথিদের হাতে তুলে দেন।
এরপর পবিত্র কোরআন থেকে তেলায়াত করেন আল জাব্বির এবং গীতা থেকে পাঠ করে ত্রেয়া চক্রবর্তী। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন দন্ত্যন লিটন। তিনি স্বাগত বক্তব্যে সম্মানিত অতিথিদের শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানান। ফ্রেন্ডস ফোরামের ১৭ বছরে পদার্পণকে বন্ধুত্বের বন্ধনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে উলেস্নখ করেন। তিনি আরও বলেন, ফোরামের মূল ভিত্তি বন্ধুত্বের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করা। তিনি ফ্রেন্ডস ফোরামের সদস্য হয়ে বন্ধুত্ব, মানবিকতা ও সামাজিক উন্নয়নে অংশগ্রহণ করতে পেরে গর্ববোধ করেন। তিনি ফ্রেন্ডস ফোরামের সব সদস্যকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে ফোরামের বর্ণিল পথচলার মাধ্যমে আরও সাফল্য কামনা করে বক্তব্য শেষ করেন।
এরপর বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব তপন কুমার চক্রবর্তী, ডা. সাদিয়া সুলতানা, নূরে আলম সিদ্দিকী, মাধব চন্দ্র মন্ডল, মুক্ত বলাকার সম্পাদক ও প্রকাশক আলমগীর হোসেন, যায়যায়দিনের সাংবাদিক বায়েজিদ হোসেন, মো. আওলাদ হোসেন তন্ময়, রফিক আলম, কফিল মাহমুদ, সাখাওয়াত হোসেন, আব্দুল হামিদ, সাংবাদিক আবুল হোসেন, জ্যোতিষ সমাদ্দার বাবু, জেল সুপার মো. রফিকুল কাদের ও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সিনিয়র ম্যানেজার নুরুল হক।
বক্তব্যে সদস্য সচিব তপন কুমার চক্রবর্তী ফ্রেন্ডস ফোরামের আদর্শ ধারণ ও লালন করে দেশের সেবায় আত্মনিয়োগের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ডা. সাদিয়া সুলতানা সম্মানিত অতিথিদের কাছে দেশগড়ার কাজে ফ্রেন্ডস ফোরামের ভূমিকা সম্পর্কে আরও অধিক জানার আগ্রহ প্রকাশ করে বক্তব্য শেষ করেন।
নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, যারা মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ গড়ার কাজে অবদান রাখতে চায় তাদের জন্য ফ্রেন্ডস ফোরাম একটা আদর্শ পস্নাটফর্ম। তিনি এই ফোরামের বন্ধুদের আরও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্বপালনের মাধ্যমে এগিয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন। মাধব চন্দ্র মন্ডল বইপ্রেমী, গাছপ্রেমী, পাখিপ্রেমী সর্বোপরি প্রকৃতিপ্রেমী সবাইকে হেমন্তের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, বর্তমানে অনেক লেখক আছেন কিন্তু পাঠকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সমাজের জন্য লেখাটা যেমন জরুরি ঠিক তেমনই পড়াশোনার জন্য পাঠক সৃষ্টি করা আরও বেশি জরুরি। ফ্রেন্ডস ফোরামে যুক্ত হয়ে যারা বিভিন্নভাবে সমাজসেবামূলক কাজ করছেন তিনি তাদের অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান। আলমগীর হোসেন ফ্রেন্ডস ফোরামের সাফল্য কামনা করে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন। রফিক আলম ফ্রেন্ডস ফোরামের সাফল্য কামনা করে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন। কফিল মাহমুদ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে সংগঠনের সাফল্য কামনা করেন। তিনি বলেন এই সংগঠনের সভাপতি অত্যন্ত মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে সংগঠন উত্তোরোত্তর সাফল্য অর্জন করছে। এ ছাড়া তিনি একজন সুযোগ্য সংগঠক। তার সঙ্গে থেকে বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে দেশগড়ার কাজে অবদান রাখার পক্ষে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ডা. খোন্দকার শাহিদুল হক তার বক্তব্যে জানান যে, গত বছর ২৩ ডিসেম্বর ২১ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে গাজীপুরে ফ্রেন্ডস ফোরামের কার্যক্রম শুরু হয়। তিনি জানান সেই থেকে বিভাগীয় সম্পাদক জ্যোতিষ সমাদ্দার বাবুর দিকনির্দেশনা নিয়ে এই ফোরামের প্রতিটি কর্মসূচি সফলভাবে পালন করার চেষ্টা করেছেন। কর্মসূচির মধ্যে ছিল ইংরেজি নতুন বছর বরণ ও পলস্নী কবি জসীমউদ্দীনের ১২১তম জন্মদিবস পালন, মধুকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মদিবস পালন, অসহায় ও দুস্থ শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ, ২১ ফেব্রম্নয়ারি, ২৬ মার্চ গাজীপুর কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ১ বৈশাখ উদযাপন, মা দিবস পালন, যায়যায়দিন পত্রিকার ১৯ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান পালন, চারারোপণ ও বিতরণ কর্মসূচি, বন্ধু দিবস পালন, কবি সুকান্তের জন্মদিবস পালন বন্যাদুর্গতদের সহযোগিতা, বিশ্বশিক্ষক দিবস পালন করা হয়েছে। ফ্রেন্ডস ফোরামের একজন সদস্যের মায়ের মৃতু্যতে শোক প্রস্তাব গ্রহণসহ সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়েছে।
এ ছাড়াও প্রতি মাসে বন্ধুদের নিয়ে নানা রকম আলোচনা ও চা-চক্রের আয়োজন করা হয়েছে। প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানে ভার্চু্যয়ালি অংশগ্রহণ করে উৎসাহিত করার জন্য বিভাগীয় সম্পাদক জ্যোতিষ সমাদ্দার বাবুর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আগামীতে আরও গঠনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে এই সংগঠনকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। সম্মানিত প্রধান অতিথিসহ বিশেষ অতিথি ও আমন্ত্রিত অতিথিগণ এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে অনুষ্ঠানটিকে সাফল্যমন্ডিত করায় তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনসহ ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে প্রতিটি অনুষ্ঠানকে সফল করার পেছনে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, নানাবিধ সহযোগিতায় জড়িত আছে তাদেরকেও তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
আলোচনার এ পর্যায়ে বক্তব্য রাখেন ফ্রেন্ডস ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, বন্ধুত্ব করি দেশ গড়ি- এ স্স্নোগানে গাজীপুরের বন্ধুদের নিয়ে আরও নতুন নতুন কর্মসূচি পালন করার ইচ্ছা পোষণ করেন। দেশের মঙ্গলের জন্য সবাইকে একনিষ্ঠ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরামের বিভাগীয় সম্পাদক বিশেষ অতিথি জ্যোতিষ সমাদ্দার বাবু তার বক্তব্যে বলেন যে, ফ্রেন্ডস ফোরাম হাঁটি হাঁটি পা পা করে ১৬ বছর অতিক্রম করে ১৭ বছরে পদার্পণ করেছে। সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে বন্ধুদের নিয়ে এ পথচলার পাশাপাশি আর্থ সামাজিক উন্নয়নে অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং পেশার জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন, পরিবেশ উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ, প্রতিভা বিকাশে স্কুল-কলেজে কর্মশালাসহ নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। উপদেষ্টা আবুল হোসেন তার বক্তব্যে যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরামের ১৭ বছরে পদার্পণকে স্মরণীয় করে রাখতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজকদের তিনি ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক জেল সুপার মো. রফিকুল কাদের, তার বক্তব্যে বলেন যে, তাকে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোতে তিনি গর্ববোধ করছেন। তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে এবং ফ্রেন্ডস ফোরামের সঙ্গে যুক্ত থেকে দেশের সেবায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরিশেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিনিয়র ম্যানেজার নুরুল হক ফ্রেন্ডস ফোরামের দীর্ঘ ১৬ বছরের পথচলার বিভিন্ন কর্মসূচির ধারাবাহিক তথ্যচিত্র তুলে ধরেন এবং এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরাম পরিবারের সম্মানিত সদস্যদের আহ্বান জানান। তিনি এ আয়োজনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
প্রথম পর্বের শেষ অংশে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরামের সদস্য আব্দুল মান্নান। এক তারা তুই দেশের কথা/ বলরে এবার বল/ আমারে তুই বাউল করে সঙ্গে নিয়ে চল এ গানটি পরিবেশেন করেন ত্রেয়া চক্রবর্তী। তার সংগীতে সবাই করতালি দিয়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। পরবর্তী সময়ে এককভাবে সংগীত পরিবেশন করেন আব্দুল মান্নান। তার সংগীতে সবাই ব্যাপক আনন্দ প্রকাশ করেন এবং মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন। ওরে চিকন কালা, তুই যে গলার মালা/আমি যে তোর আছি চিরদাসি; বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে; আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম এরকম বেশ কয়েকটি গান পরিবেশন করে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। তার গানে খুশি হয়ে শেখ রেমায়েত হোসেন এক হাজার টাকা উপহার দিয়ে উৎসাহিত করেন। পরিশেষে মধ্যাহ্নভোজের জন্য প্রথম পর্বের কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
\হ
সভাপতি
ফ্রেন্ডস ফোরাম গাজীপুর, ঢাকা।