যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরাম গাজীপুরের আয়োজনে নতুন বছর ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ ইংরেজি সালকে বরণ করে নেওয়া এবং পলস্নীকবি জসীমউদ্‌দীনের ১২২তম এবং ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক অদ্বৈত মলস্নবর্মণের জন্মদিবস উদযাপন উপলক্ষে ১ জানুয়ারি বুধবার বিকাল ৫টায় সকাল-সন্ধ্যা হোমিও হল, গাজীপুরে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডা. খোন্দকার শাহিদুল হক, সভাপতি, যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরাম, গাজীপুর। সঞ্চালনায় ছিলেন মো. ওমর ফারুক জিতু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরাম, গাজীপুর। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসএকে রেজাউল করিম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা রেজিস্ট্রার ও উপদেষ্টা, যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরাম, গাজীপুর জেলা কমিটি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো. আখতার হোসেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, গাজীপুর। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী, প্রচার ও জনসংযোগ সম্পাদক মো. জিলস্নুর রহমান, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক মধাব চন্দ্র মন্ডল, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. রাসু, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক দন্ত্যন লিটন, সহক্রীড়া সম্পাদক মো. সেকান্দার হোসেন নাহিদ, সহদপ্তর সম্পাদক আব্দুলস্নাহ আল জুবায়ের তুষার, সদস্য সজিব, রফিকুল ইসলাম আগুন, জীবন চৌধুরী, মোবারক হোসেন দিপু, মহন, মো. মিজানুরসহ অনেকে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সভাপতি সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে অনুষ্ঠানের কাজ শুরু করেন। এরপর পরিচিতিপর্ব অনুষ্ঠানে উপস্থিত সম্মানিত সদস্যরা নিজ নিজ পরিচয় প্রদান করেন। প্রথমেই মাধব চন্দ্র মন্ডল তার স্বাগতিক বক্তব্যে পলস্নীকবি জসীমউদদ্‌ীনের জন্ম, পারিবারিক পরিচিতি ও কর্মজীবনের নানাদিক সম্পর্কে আলোকপাত করেন। এছাড়া তিনি ১ জানুয়ারিতে জন্মগ্রহণকারী আরেক উজ্জ্বল তারকা অদ্বৈত মলস্নবর্মণ (১ জানুয়ারি, ১৯১৪) বাঙালি ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিকের বিষয়ে আলোকপাত করেন। পরবর্তীতে সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক ওমর ফারুক জিতু পলস্নীকবির জীবন থেকে আলোচনা করেন এবং কবির লেখা কবর কবিতা থেকে আবৃত্তি করে শোনান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করে দন্ত্যন লিটন পলস্নীকবির সৃষ্টি ও সাহিত্যধারার ওপর আলোচনা করেন এবং ১২২তম জন্মদিবসে কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। নূরে আলম সিদ্দিকী তার সাবলীল বক্তব্যে কবির কাব্যজগতের নানা দিক তুলে ধরেন এবং গ্রাম্যজীবন ও পরিবেশ প্রকৃতি নিয়ে তার লেখার অনন্য বৈশিষ্ট্যের দিকে সবার মনোযোগ আকৃষ্ট করেন। এছাড়া নুরে আলম সিদ্দিকী জানুয়ারি মাসেই দুঃস্থ ও গরিবদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য প্রস্তাব করে তার বক্তব্য শেষ করেন। অতপর মো. রাসু এ সংগঠনের বিগত দিনের কর্মকান্ডের উলেস্নখযোগ্য দিক তুলে ধরে আরও বেশি বেশি সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো. আখতার হোসেন বাংলা ও বাঙালির কবি জসীমউদদ্‌ীন সম্পর্কে বলেন, তার সব লেখা ছিল ভাবগম্ভীর ও দার্শনিকতাপূর্ণ। তিনি ছিলেন মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগের মধ্যকার বিচ্ছিন্নতার সাঁকো। তিনি বাংলা সাহিত্যকে গণমুখী ধারায় প্রবাহিত করে গণমানুষের চেতনায় অমর হয়ে আছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা আজকের সভাপতির নেতৃত্বে যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরামে যুক্ত হয়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করি। তার সাংগঠনিক ও সামাজিক তৎপরতা সহজেই সবাইকে আকৃষ্ট করে। তিনি অত্যন্ত দায়িত্বশীল এই সংগঠকের দীর্ঘজীবন ও সব কর্মকান্ডের সাফল্য কামনা করে বক্তব্য শেষ করেন।

তারপর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে ইংরেজি নববর্ষে যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরামের আয়োজনে সবাই একত্রিত হতে পারার জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি নববর্ষে দেশের সবার অগ্রযাত্রা ও কল্যাণ কামনা করেন। এছাড়া তিনি তার বক্তব্যে যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরামের সদস্যদের সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। আলোচনাকালে তিনি আরও বলেন, গাঁয়ের লোকের দৃষ্টিতে গ্রাম্যজীবন এবং পরিবেশ ও প্রকৃতি ফুটিয়ে তোলার জন্য কবি জসীমউদদ্‌ীন বিশেষভাবে পরিচিত। তার এই সুখ্যাতি তাকে পলস্নীকবি উপাধি এনে দিয়েছে। তার রচিত নক্‌শীকাঁথার মাঠ কাব্যগ্রন্থকে তার শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং পৃথিবীর অনেক ভাষায় এটি অনূদিত হয়েছে। এছাড়া তিনি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী অনেক গান রচনা করেছেন। পলস্নীকবি ১৯৭৬ সনে ১৪ মার্চ ঢাকায় মৃতু্যবরণ করেন। কবির নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলের নামকরণ করা হয়েছে। তিনি কবির এই ১২২তম শুভ জন্মদিনে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে তার বক্তব্য শেষ করেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি তার সমাপনী বক্তব্যে জানান যে, বাংলার কবি, গণমানুষের কবি, পলস্নীকবি জসীমউদদ্‌ীনের রচনায় চোখ রেখে অনায়াসে বলা যায়, তিনি এক বিস্ময়কর মানবপ্রেমী, বিশেষ করে দরিদ্র কৃষক, দিনমজুর ও রাখালের প্রতি তার অসম্ভব ভালোবাসা লক্ষ্য করার মতো। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তথা বাংলার হিন্দু-মুসলিম উভয় সমাজের মানুষের যাপিত জীবন অসামান্য দরদে তিনি সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে যুক্ত করে সবার হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন। তিনি সমাজের বাস্তবতায় মানুষের জাগতিক দুঃখের সফল রূপায়ণ করেছেন। তিনি সব সময় সহানুভূতিশীল ছিলেন নিপীড়িত ও অবহেলিত মানুষের প্রতি। সুতরাং বলা যায়, তিনি এই বাংলার মা ও মাটির সন্তান ছিলেন। এছাড়া বলা যায়, তিনি সমন্বয়বাদী ও উদারপন্থি সাহিত্যসাধক ছিলেন। তিনি একাধারে কবি, কাব্যে ঔপন্যাসিক, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, ভ্রমণকাহিনীকার, নাট্যকার, স্মৃতিকথক, প্রাবন্ধিক ও শিশুসাহিত্যিক ইত্যাদি বহুবিধ পরিচয়ে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি আজ সেই অমর কবির শুভ জন্মদিবসে তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জ্ঞাপন করেন। এরপর তিনি বলেন, অদ্বৈত মলস্নবর্মণও ১৯১৪ সালের ১ জানুয়ারি তৎকালীন কুমিলস্না জেলার অধীনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাকুমার গোকর্ণ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি চিরকুমার ছিলেন। মাত্র ৩৭ বছর বয়সে যক্ষ্ণারোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতু্যবরণ করেন। তিতাস একটি নদীর নাম শিরোনামের একটিমাত্র উপন্যাস লিখে তিনি বাংলা সাহিত্যে চিরস্মরণীয় ও অমর হয়ে আছেন। এছাড়া তিনি বহু শিশুপাঠ্য কবিতাও রচনা করেছেন। পেশায় তিনি লেখক ও সাংবাদিক ছিলেন। তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে জন্মদিবসে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।

সভার শেষ দিকে তিনি জানান যে, সভায় বক্তাদের বিভিন্ন প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান মাসের ১৮ তারিখ শনিবার বিকাল ৩টায় সমাজের গরিব ও দুঃস্থদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো। পরিশেষে, তিনি আরও জানান যে, যায়যায়দিন ফ্র্রেন্ডস ফোরামের বিভাগীয় সম্পাদক জ্যোতিষ সমাদ্দার বাবু ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সবাইক নববর্ষের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেছেন। তাকেও এই ফোরামের পক্ষ থেকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। সভাপতির প্রাঞ্জল বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আলোচনা সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। অতপর উপস্থিত সদস্যরা চা-চক্রে অংশগ্রহণের পাশাপাশি পলস্নীকবির কবিতা আবৃত্তি ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

সভাপতি

ফ্রেন্ডস ফোরাম,গাজীপুর।