ইট-পাথরের শহরে যান্ত্রিক শব্দ ছাড়িয়ে খানিকটা দূরের দিকে দৃষ্টি দিলে সবুজে চোখ জুড়িয়ে যায়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে যখন কোনো মনোরম পরিবেশের দৃশ্য বা অরণ্যের ছবি দেখা যায়, তখন মনে হয় সবাই মিলে যদি সেখানে ঘুরে আসা যেত, কতই না আনন্দ হতো! ঝর্নার ছবি দেখে চেয়ে থাকা, সাগরের ছবি দেখে বুকের ভেতরটা হাহাকার করে ওঠা। অরণ্যের ছবি দেখে কিছুক্ষণের জন্য হলেও বনের হরিণ হয়ে হারিয়ে যেতে কার না ইচ্ছে করে! বিশেষ করে বিস্তীর্ণ এলাকায়, যেখানে পানিতে বাতাসের ছোট ছোট ঢেউ এবং চারপাশের সবুজ। হাওড় অঞ্চলে এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য বারবার কাছে ডাকে। প্রকৃতির রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে আমরা প্রতিদিন পাঠগ্রহণের পিছনে ছুটে বেড়াই, বিশেষ করে শীত মৌসুমে এই স্বপ্ন আরও গভীর হয়। এতক্ষণ বলছি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার কৌড়াতলা হাওড়ের সৌন্দর্যের কথা।
প্রাকৃতিক দৃশ্যের মনোরম আয়োজনে মোহনগঞ্জ নেত্রকোনা জেলার একটি অন্যতম উপজেলা। এখানে শীতে হাওড়ের পানি নেমে গিয়ে জেগে ওঠে সবুজ ভূমি। বিস্তৃর্ণ সবুজের যেন কোনো সীমা নেই। ওপরে নীল আকাশ, চারদিকে শান্ত জলরাশি। স্বচ্ছ নদীমাতৃক বাংলাদেশের অপরূপ প্রতিচ্ছবি। কৌড়াতলা হাওড়ে নৌকা নিয়ে গোটা বিল চষে বেড়ানো, পাশেই উড়ন্ত সাদা বকের ঝাঁক, চারপাশ জুড়ে চেনা-অচেনা পাখিদের উড়ে বেড়ানো দেখতে কার না ভালো লাগে। সারি সারি বেঁধে রাখা নৌকাগুলো হাওড়ের বুকে আরেকটু সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় হাওড়ের পানিতে সূর্যের প্রতিচ্ছবি এক মনোরম দৃশ্য তৈরি করে। সেই ছবি ক্যামেরা বন্দি না করলে একটু আফসোস থেকেই যায়। হাওড়ের উঁচু জায়গাগুলো তো কেউ বা হাঁসের খামার করেছে। সূর্যাস্তের আগে আগে হাওড় থেকে ওঠে ঘরে ফেরা শত শত হাঁসের সমারোহ সত্যিই মনোমুগ্ধকর। শীত মৌসুমে হাওড়ের দিগন্তজোড়া বিস্তীর্ণ প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই দৃষ্টিনন্দন। এছাড়া অগণিত মানুষের জীবন সংগ্রামের গল্প আছে এই হাওড়ে। প্রতিদিন শত শত মানুষ হাওড়কে ঘিরে নির্বাহ করেন তাদের জীবন-জীবিকা। হাওড়ের সঙ্গে তাদের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা মিশে আছে। বর্ষার সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দশনার্থী, পর্যটকরা ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও স্পিডবোটের মাধ্যমে ঘুরে উপভোগ করেন হাওড়ের অপরূপ সৌন্দর্য।