সম্প্রতি ঘোষিত ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের ২৫ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক অনুমোদিত কমিটিতে সভাপতি করা হয় বিবাহিত এক তরুণকে। এ ছাড়া ওই কমিটিতে দুই সহ-সভাপতিসহ তিনজন জড়িত রয়েছেন ফরিদপুরের বহুল আলোচিত জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির বাড়িতে হামলার ঘটনায়। এ অভিযোগ করেছে জেলা ছাত্রলীগের একাংশ।
তামজিদুল রশিদ চৌধুরী রিয়ানকে সভাপতি ও ফাইম আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৫ সদস্যের আংশিক কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। শনিবার দুপুরে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আসিফ ইমতিয়াজ ও প্রচার সম্পাদক সাজিদুল ইসলামসহ ১০ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী একটি লিখিত অভিযোগে এ দাবি করেছেন।
বিতর্কিত নেতৃত্বের বিষয়ে অনাস্থা জানিয়ে একই অভিযোগ জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, জেলা আওয়ামী লীগ ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে।
স্বাক্ষরিত ওই অভিযোগে বলা হয়, 'গত ১৯ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি প্রকাশিত হয়েছে। ওই কমিটির
সভাপতি পদে মনোনীত তামজিদুল রশিদ চৌধুরী রিয়ান একজন বিবাহিত ব্যক্তি। শুধু তাই নয়, তার আপন ভগ্নিপতি সৈয়দ আদনান হোসেন অনু ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি। তার বাবা ফরিদপুর জেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন।'
বাংলাদেশে ছাত্রলীগের গঠণতন্ত্রে ৫-এর (গ) ধারা উলেস্নখ করে ওই অভিযোগে বলা হয়, গঠনতন্ত্রের ধারা অনুযায়ী বিবাহিত ব্যক্তি ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পাবে না। এ ছাড়া কমিটিতে স্থান পাওয়া দুজন সহ-সভাপতি ও একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদপুরের বহুল আলোচিত ঘটনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলা-মামলার আসামি। এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় ঘোষিত বর্তমান কমিটির ওপর ফরিদপুর ছাত্রলীগ কর্মীরা আস্থা সংকটে ভুগছে।
গত ১৯ জানুয়ারি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত ২৫ সদস্যের ছাত্রলীগের এক বছর মেয়াদি এ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। কমিটিতে তামজিদুল রশিদ চৌধুরীকে সভাপতি এবং মো. ফাহিম আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
এ ছাড়া ওই কমিটিতে আরও নয় সহ-সভাপতি, সাত সহ-সাধারণ সম্পাদক ও সাতজন সাংগঠনিক সম্পাদক রয়েছেন।
ঘোষিত এই আংশিক কমিটি সম্পর্কে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা বলেন, 'ছাত্রলীগসহ সব সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনের প্রচলিত রেওয়াজ অনুযায়ী জেলা আওয়ামী লীগের কাছে প্রস্তাবনা ও মতামত চাওয়া হয়। কিন্তু এই কমিটির ক্ষেত্রে তার ব্যত্যয় ঘটেছে।' কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আমাদের পাশ কাটিয়ে এই কমিটি ঘোষণা করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের মতামত চাওয়াটা তাদের একান্ত উচিত ছিল। ঘোষিত কমিটিতে 'ছাত্রলীগের সভাপতি বিবাহিত' ছাত্রলীগের একাংশের এ অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সুবল চন্দ্র সাহা বলেন, অনুসন্ধানে যদি বিবাহিত প্রমাণ মেলে তাহলে গঠণতন্ত্র মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাই।'
তার বাড়িতে হামলা-মামলার আসামিকে কমিটিতে স্থান দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এ ধরনের অভিযুক্তদের নিয়ে কমিটি করা সমীচীন নয়।'
অভিযোগ সম্পর্কে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য এ প্রতিবেদককে বলেন, 'রিয়ানের বিবাহিত হওয়া সম্পর্কিত অভিযোগটি সত্য নয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতির বাড়িতে হামলা-মামলার তিন অভিযুক্তের নাম কমিটিতে রয়েছে। তাদের নাম বিভিন্ন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও এসেছে, এখনো কোনো অকাট্য প্রমাণ মেলেনি। তারা দোষী প্রমাণিত হলে কমিটি থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া হবে।'
সদ্যঘোষিত জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তামজিদুল রশিদ চৌধুরী বলেন, তাকে বিবাহিত বলে যে অভিযোগ আনা হয়, তা সত্য নয়।
তার বাবা রিয়াদুল রশিদ চৌধুরী কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন'- দাবি করে তিনি বলেন, 'আমার পরিবার আওয়ামী লীগপন্থি। তার ভগ্নিপতি জেলা ছাত্রদল সভাপতি সৈয়দ আদনান এ বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি তামজিদুল রশিদ চৌধুরী বলেন, 'আমার বোনের সঙ্গে যখন তার বিয়ে হয় তখন অনু জেলা ছাত্রদলের নেতৃত্বে ছিল না। '