শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
বার্ষিক প্রতিবেদন পর্ব-২

সান্ধ্যকালীন বাণিজ্যিক কোর্স বন্ধের সুপারিশ ইউজিসির

ম যাযাদি রিপোর্ট
  ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
সান্ধ্যকালীন বাণিজ্যিক কোর্স বন্ধের সুপারিশ ইউজিসির

মূলধারার লেখাপড়া, গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার মান বজায় রাখতে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত সান্ধ্যকালীন, সাপ্তাহিক আর নির্বাহী কোর্স ক্ষুণ্ন বন্ধে পদক্ষেপ চায় ইউজিসি।

ইউজিসি বলছে, ব্যবসায়িক ভিত্তিতে পরিচালিত এসব কোর্স প্রকারান্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। শুধু তাই নয়, এমন কর্ম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে বেমানান হওয়ায় এ ধরনের কোর্স বন্ধ হওয়া জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করেছে সংস্থাটি। আইন অনুযায়ী এটি এখন সংসদ অধিবেশনে উপস্থাপন করা হবে।

বার্ষিক প্রতিবেদনে ইউজিসির পক্ষ থেকে মোট ২০ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সাক্ষাৎকালে ইউজিসি বিগত এক বছরের কার্যক্রম রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করে। ইউজিসি বলছে, সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে দেশে উচ্চশিক্ষার মানবৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। দেশের স্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এটি বড় ভূমিকা পালন করবে।

প্রতিবেদনে উলেস্নখযোগ্য সুপারিশগুলো হচ্ছে- টিউশনসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের শিক্ষার্থী ফি যৌক্তিক পর্যায়ে আনা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক অনিয়ম বন্ধে একটি নীতিমালা প্রণয়ন, প্রয়োজনে আর্থিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন সমুন্নত রেখে একটি 'সমন্বিত আর্থিক নীতিমালা ও ম্যানুয়াল' কার্যকর, বৈশ্বিকর্ যাংকিংয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগ ও কার্যক্রম গ্রহণ, গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি বিষয়টি সংজ্ঞায়িতসহ এ বিষয়ক সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি, গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো, অস্তিত্বহীন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস চিহ্নিত ও সীমিত পরিসরে স্বনামধন্য বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অবকাঠামোগত ও অন্য আনুষঙ্গিক সুবিধাসহ শাখা অফশোর ক্যাম্পাস স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি, সেন্ট্রাল রিসোর্স ল্যাবরেটরি ও ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার সুপারিশও করেছে ইউজিসি।

বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মাস্টার্সে ঢালাওভাবে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগের বদলে শুধু বাছাই করা মেধাবীদের সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে উচ্চশিক্ষা স্তরে চার বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রিকে প্রান্তিক ডিগ্রি হিসেবে গণ্য করা হয়। মাস্টার্স পর্যায়ে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম বাছাই করা মেধাবী স্নাতকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবকাঠোমোগত সুযোগ-সুবিধা এবং যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক না থাকলেও সেখানে মাস্টার্স ডিগ্রি প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে।

ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর সরাসরি মাস্টার্স ডিগ্রিতে ভর্তির সুযোগ না রেখে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করা দরকার। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর স্নাতকোত্তর গবেষণা কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্কলারশিপ/টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ/ফেলোশিপের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়েছে।

সুপারিশে বলা হয়েছে, দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টিগ্রেটেড ইউনিভার্সিটি ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট পস্ন্যাটফর্ম তৈরির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় একটি সফটওয়্যার প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের আর্থিক বিধিবিধান অনুসরণে ইচ্ছেমতো আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান আর্থিক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটছে। ইউজিসিতে এ ধরনের প্রমাণ মিলেছে। একটি সমন্বিত আর্থিক নীতিমালা ও ম্যানুয়েল প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে।

সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, দেশে উচ্চশিক্ষা খাতে সরকারি বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের মাত্র ০ দশমিক ৮৭ শতাংশ, যা যে কোনো বিচারে অপ্রতুল। কাজেই জাতীয় বাজেটে উচ্চশিক্ষায় খাতওয়ারি বরাদ্দ চিহ্নিত করে ইউজিসিকে ২০২২ সালের মধ্যে উচ্চশিক্ষা খাতে জাতীয় কাজের ২ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৬ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব, উচ্চশিক্ষার মানবৃদ্ধিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়নে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন, সুপরিচিত বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাসে সীমিত আকারে ব্যাচেলর, মাস্টার্স, এমফিল-পিএইচডি করার অনুমোদন, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি বন্ধে একটি নীতিমালা প্রণয়ন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি কোর্স বন্ধ করে ডিপেস্নামা, শর্ট কোর্স, ভোকেশনাল ও ট্রেনিং প্রোগ্রাম চালুসহ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মূল ধারায় আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে যেসব বিষয় বাধা হিসেবে কাজ করছে, সেসব সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে