সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২
জনদুর্ভোগ

ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজে দুর্ঘটনার আশঙ্কা

বান্দরবান প্রতিনিধি
  ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজে দুর্ঘটনার আশঙ্কা
বান্দরবানের একটি ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজ -যাযাদি

সংস্কারের অভাবে মৃতু্যফাঁদে পরিণত হয়েছে বান্দরবানের বিভিন্ন সড়কের অধিকাংশ বেইলি ব্রিজ। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ব্রিজের ওপর দিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করছে শত শত যানবাহন। শিগগিরই সংস্কার করা না হলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

জানা যায়, ১৯৭৭-৭৮ সালে তৎকালীন এরশাদ সরকারের আমলে বান্দরবান-রুমা সড়কসহ কয়েকটি সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। উঁচু-নিচু পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে ছোট-বড় ঝিরি ও ছড়ার ওপর তৈরি করা হয়েছিল সেসব লোহার বেইলি ব্রিজ। দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি চলাচলের কারণে ব্রিজে বিছানো পাটাতনগুলো ক্ষয়ে গেছে। এছাড়াও বন্যা, পাহাড় ভাঙন ও ভূমিকম্পনের ফলে ডেবে

গেছে অধিকাংশ ব্রিজ।

বান্দরবান-রুমা ও থানচি সড়কে গিয়ে দেখা যায়, ব্রিজের পাটাতনে গাড়ির দুই চাকা তুলতেই বেজে ওঠে ধুং-ধাং আওয়াজ। জোড়াতালি দিয়ে ঝালাই করা পাটাতনগুলো খুলে গিয়ে অন্যত্র সরে গেছে। ফলে ফাঁকা স্থানে গাড়ির চাকা আটকে গিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ যাত্রীদের।

পর্যটন এলাকা হওয়ায় প্রতিদিন চলাচল করছে শত শত পর্যটকবাহী গাড়ি। বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় ব্রিজে আটকে যাওয়া গাড়ির কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সৃষ্টি হয় যানজট। এতে করে ভোগান্তিতে পড়তে হয় জরুরি সেবাদান কাজে নিয়োজিত অনেক যানবাহনকে।

সড়কের বিভিন্ন স্থানে থাকা বেইলি ব্রিজগুলো কোনোটা ডেবে গেছে, কোনোটা ধসে পড়ছে আবার কোথাও কোথাও বিছানো কাঠগুলো পচে গেছে। এ অবস্থায় ব্রিজগুলো কোনো রকম সচল রাখতে কোনো সেতুর নিচে বালুর বস্তা, কোনোটির ওপর পাটাতন আবার কোনোটির নিচে গাছের কাঠ দিয়ে আটকানো রয়েছে।

বান্দরবান সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের তথ্য মতে, জেলার ৮টি সড়কে ১৩৩ বেইলি ব্রিজ রয়েছে। এর মধ্যে নতুন আরসিসি ব্রিজ তৈরি হয়েছে ৮৭টি, বাকি ব্রিজগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সড়ক ধরে চললে দেখা যাবে ব্রিজে ব্রিজে সতর্কীকরণ নোটিশের সাইনবোর্ড। সেখানে বলা হয়েছে 'সাবধান, ক্ষতিগ্রস্ত/ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, ৫ টনের অধিক যানবাহন চলাচল নিষেধ'। কিন্তু কে মানে কার কথা! সেসব ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের ওপর দিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করছে ইট, বালু, কাঠ ও কাঁচা মালবাহী ভারী ভারী যানবাহন। এতে করে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা, বন্ধ হয়ে যেতে পারে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে এসব ব্রিজ শিগগিরই সংস্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা সোহাগ, মেজবাহ ও আবু সুফিয়ান নামে কয়েকজন পর্যটক জানান, এখানকার প্রতিটি ব্রিজই খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যত দ্রম্নত সম্ভব এগুলো মেরামত করা প্রয়োজন। তা নাহলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

যাত্রীবাহী বাসচালক সাদ্দাম হোসেন জানান, 'ব্রিজগুলো ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও আমরা গাড়ি চালাচ্ছি। যাত্রী নিয়ে ব্রিজ পার হতে খুব ভয় হয় আমাদের। তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি।'

জসিম উদ্দিন, মো. জাফরসহ কয়েকজন ঠিকাদার জানান, ঠিকাদারি কাজের জন্য তারা মালামাল ট্রাকে করে নিয়ে যান। সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়, ঝুঁকিপূর্ণ সেতু পারাপারের সময় কোনো ব্রিজ ভেঙে পড়ে কিনা।

ঝুঁকিপূর্ণ এসব বেইলি ব্রিজ ভেঙে আরসিসি ব্রিজ নির্মাণ করা জরুরি বলে মনে করছেন এসব সড়কে চলাচলকারী যাত্রী, পরিবহন মালিক-চালকরা।

বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ্‌ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, বান্দরবান সড়ক বিভাগের পাকা গার্ডার ব্রিজ করার অপেক্ষায় আরও ৬৪টি বেইলি ব্রিজ। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলো সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের জন্য নকশা পাস করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে