শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ

সম্মেলন স্থগিত করায় হতাশ নেতাকর্মীরা

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চেলে ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহ। ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরা এ জেলায় রাজনৈতিক সহাবস্থানের নজির নেই বললেই চলে। গেল শাসক দল আওয়ামী লীগ আগামী সংসদ নির্বাচন ও দলীয় সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। অন্যদিকে সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘুঁটি সাজাচ্ছে বিএনপি। তবে বড় এ দুই দলের মধ্যেই লবিং-গ্রম্নপিং বিভক্তি রয়েছে প্রকাশ্যে। এ জেলার সর্বশেষ রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন আমাদের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি তারেক মাহমুদ
নতুনধারা
  ১৫ মে ২০২২, ০০:০০

'আওয়ামী লীগ দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন একটি রাজনৈতিক দল। শুরু থেকে দলটি নির্বাচনমুখী। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দলটি যে কোনো আন্দোলনে রাজপথে থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেই আজ এখানে। আওয়ামী লীগ রাজপথে ছিল, অবশ্যই রাজপথে থাকবে। আন্দোলনের নামে কোনো দল যদি জনগণের জানমালের ক্ষতি করে, জ্বালাও-পোড়াও করে, তাহলে নেতাকর্মী অবশ্যই তা প্রতিহত করবে।' এমনটি বলছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।

আগামী ১৭ মে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার দিন ধার্য ছিল। সর্বশেষ ২০১৬ সালে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ছয় বছর পর সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীর মধ্যে উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছিল। সম্প্রতি দলের হাই কমান্ড থেকে সম্মেলন সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। এরপর হাতাশা ছড়িয়ে পড়ে নেতাকর্মীর মধ্যে। এদিকে আগামী ১৫ জুন জেলার সদর পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্বাচন কমিশন থেকে তফশিল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভায় নির্বাচিত হয়ে এক মেয়াদে দীর্ঘ ১১ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। সর্বশেষ ২০১১ সালের ১৩ মার্চ এ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৬ সালের এপ্রিলে মেয়াদ শেষ হলেও মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় নির্বাচন হয়নি। দীর্ঘ ১১ বছর পর স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ২০২১ সালে ২৪ নভেম্বর পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। ফলে একদিকে পৌর নির্বাচন অন্যদিকে কাউন্সিল। নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। এ ছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। স্থানীয় কয়েকটি নির্বাচনে তা প্রকাশ্যে আসে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সরকার গঠনের পর একাধারে তিন মেয়াদের ১৩ বছর ক্ষমতায় দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী

এ দলটি। ক্ষমতাগ্রহণের শুরু থেকে পৌর, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদসহ যে কোনো নির্বাচনে দলের দুটি গ্রম্নপ থেকেই আলাদা আলাদা প্রার্থী অংশ নেওয়ায় লবিং গ্রম্নপিং ও বিভক্তি প্রকাশ্যে আসে। অসন্তোষ তৈরি হয় ত্যাগী নেতাদের মধ্যে। এ সময়ে দলের প্রবীণ ত্যাগী নেতাকর্মীকে মূল্যায়ন না করায় অনেককে দলের কার্যক্রম থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে দেখা গেছে। সম্প্রতি সাবেক এক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে রিকশা চালানোর সংবাদে জেলাসহ দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

দলের বর্তমান হালচাল নিয়ে কথা হয় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান (বর্তমানে প্রশাসক) কনক কান্তি দাসের সাথে। তিনি জানান, আওয়ামী লীগ দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন একটি রাজনৈতিক দল। শুরু থেকে দলটি নির্বাচনমুখী। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দল নির্বাচনে থাকবে। আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে দেশের স্বার্থে যে কোনো আন্দোলনে রাজপথে থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেই আজ এখানে। আওয়ামী লীগ রাজপথে ছিল, অবশ্যই রাজপথে থাকবে। দেশবিরোধী সব আন্দোলন প্রতিহত করা হবে। বিএনপি যদি আন্দোলনের নামে জনগণের জানমালের ক্ষতি করে, জ্বালাও-পোড়াও করে, তাহলে নেতাকর্মী অবশ্যই প্রতিহত করবে।

সম্মেলন স্থগিত হওয়ায় নেতাকর্মীর মধ্যে কোনো হতাশা আছে কি না- জানতে চাইলে কনক কান্তি দাস বলেন, এখানে হতাশার কিছু নেই। ১৭ মে দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়া ঝিনাইদহ পৌরসভাসহ জেলার দুই ইউনিয়নে ভোটের নির্বাচনী তফশিল ঘোষণার ফলে সম্মেলন স্থগিত করেছে দল। যথাসময় দল আবার সম্মেলনের দিন তারিখ ঘোষণা করবে।

সম্মেলন নিয়ে দলের মধ্যে কোনো বিভক্তি আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভক্তির কথা বলা যাবে না। আওয়ামী লীগ বড় দল। অনেক দিন পর সম্মেলন হচ্ছে। অনেকে নেতৃত্বে আসতে চায়। চাওয়াটাও স্বাভাবিক। ফলে দলের মধ্যে নেতৃত্বের একটা প্রতিযোগিতা রয়েছে, যেটা আমরা পজেটিভ হিসেবেই দেখি।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু জানান, আমরা সহাবস্থানের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। আওয়ামী লীগের জোটভুক্ত সব দলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। কেন্দ্র ঘোষিত সব কর্মসূচিতে তাদের আমন্ত্রণ করা হয়। দলটির জেলা সভাপতি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য প্রবীণ নেতা আব্দুল হাই।

তিনি আরও বলেন, ঝিনাইদহে বিএনপি একটি অস্তিত্বহীন দল। রাজপথে আন্দোলন করার মতো শক্তি তাদের নেই। যে কারণে তারা রাজপথ থেকে সরে গেছে। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। প্রতিটি নির্বাচনে জেলার চারটি সংসদীয় আসনে বিজয়ী হয় নৌকার প্রার্থীরা। ফলে সরকারের মেয়াদ দীর্ঘ হওয়ায় জেলার উন্নয়ন চলমান রয়েছে।

সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, করোনাকালে মাঠে থেকে নিম্ন আয়ের মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিয়েছি। বিভিন্ন মহলস্নার বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিতে সক্রিয় কাজ করেছি। আওয়মী লীগ সরকারের দীর্ঘ এ সময় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পেয়েছেন। এ জেলার অধিবাসীর জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে