মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

দিনাজপুরের বাজারে রসালো মাদ্রাজি ও বেদানা লিচু

ম দিনাজপুর প্রতিনিধি
  ২৪ মে ২০২২, ০০:০০
দিনাজপুরের বাজারে রসালো মাদ্রাজি ও বেদানা লিচু
দিনাজপুরের বাজারে রসালো মাদ্রাজি ও বেদানা লিচু

লিচু চাষের জন্য প্রসিদ্ধ দিনাজপুর। এ জেলার লিচুর চাহিদা দেশজোড়া। সাধারণত জৈষ্ঠ্য মাসের মাঝামাঝি সময়ে লিচুর দেখা পাওয়া গেলেও এরই মধ্যে এ জেলার বাজারে উঠতে শুরু করেছে মাদ্রাজি ও বেদানা লিচু। স্বাদ-গন্ধ-রসালো এ লিচুর খ্যাতিও রয়েছে বেশ। তবে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, অধিক লাভের আশায় সম্পূর্ণ রঙিন হওয়ার আগেই লিচু পেড়ে বাজারে আনতে শুরু করেছেন চাষিরা।

সপ্তাহখানেক সময় ধরে দিনাজপুরের বাজারে উঠতে শুরু করেছে মাদ্রাজি ও বেদানা জাতের লিচু। শহরের গোর-এ-শহীদ মাঠে লিচুর পাইকারি বাজার ছাড়াও শহরের বাহাদুর বাজার, হাসপাতাল মোড়, থানার মোড়ে খুচরা বাজারে ভিড় করছেন ক্রেতারা। জানা গেছে, জৈষ্ঠ্য মাসের শুরুতে দিনাজপুরের বাজারে প্রথম দেখা মেলে মাদ্রাজি লিচুর। এই লিচু আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট। বিচি বড়, শ্বাসের পরিমাণ কম। টক-মিষ্টি-স্বাদ। বাজারে এখন এই লিচুরই আধিক্য।

1

গোর-এ-শহীদ মাঠে পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে ভ্যানে ও ইজিবাইকে করে আড়তে লিচু নিয়ে আসছেন লিচুচাষিরা। চলছে দর কষাকষি। দামে মিললে আড়তে নামানো হচ্ছে লিচু। ঝুড়িতে সবুজ পাতার বিছানায় মুড়িয়ে চটের ঢাকনা দেওয়া হচ্ছে। ঝুড়ির গায়ে লিখা হচ্ছে ঠিকানা। লিচু উঠছে ট্রাকে। ছুটছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। পাইকারি বাজারে প্রতি একহাজার মাদ্রাজি লিচু বিক্রি হচ্ছে ১১০০-১৬০০ টাকা পর্যন্ত। আর বেদানা লিচু প্রতিহাজার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০-৪০০০ হাজার টাকা দরে। অন্যদিকে খুচরা বাজারে প্রতি ১০০ পিস মাদ্রাজি লিচু ২২০-২৫০ টাকা এবং বেদানা লিচু প্রতি ১০০ পিস বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫৫০ টাকা দরে।

অন্যবার মৌসুমের শুরুতে দিনাজপুরের বাজারে আসেন ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার লিচুর পাইকাররা। এবার এখনো সেভাবে দেখা মেলেনি পাইকারদেরও।

গোর-এ-শহীদ মাঠে কথা হয় ঢাকার কারওয়ান বাজার এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুর বারির সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকায় এখন গাজীপুর, নরসিংদী, পাবনা-ইশ্বরদীর লিচু ঢুকেছে। এজন্য দিনাজপুরের লিচু কিছুটা মাইর খাচ্ছে। এখনো সেভাবে পাইকাররা দিনাজপুরে আসতে শুরু করেনি, তিনি জানালেন গত এক সপ্তাহে ২ গাড়ি লিচু ঢাকা পাঠিয়েছেন।

থানামোড় খুচরা বাজারে লিচু কিনে বাড়ি ফিরছিলেন মো. আব্দুস সবুর। তিনি ১০০ পিস মাদ্রাজি লিচু কিনেছেন ২৩০ টাকা দরে। তিনি বলেন, লিচু খাওয়ার সময় এখনো হয়নি। কিন্তু কি করবেন বাড়িতে ছোট ছেলের বায়না। মো. আব্দুস সবুরের মতো অনেকেই বলছেন বাজারে যে লিচু উঠেছে তা কিছুটা অপরিপক্ব। অন্তত এক সপ্তাহ পরে এই লিচু উঠলে ভালো হতো। প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যেত।

কিন্তু গোর-এ-শহীদ মাঠে লিচু বিক্রি করতে আসা লিচু চাষি মো. আনারুল ইসলাম আনার বলেন, এখন প্রায় সময় বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে লিচুর গোড়ায় পোকা দেখা দেয়। এ ছাড়া লিচু ফাটতে শুরু করেছে। জানালেন, ৯শ' গাছের লিচু বাগান তার। রোদে বেদানা লিচুর মুকুল জ্বলে যাওয়ায় ফলন কম হয়েছে। মাদ্রাজিতে লোকসানের ভয়ে আগাম বিক্রি শুরু করেছেন। বাজারে ৭ হাজার লিচু এনেছেন। বিক্রি করেছেন ১ হাজার ২০০ টাকা দরে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী দিনাজপুর জেলায় পাঁচ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে লিচু বাগান রয়েছে সাড়ে ৫ হাজার ৪১৮টি। এর মধ্যে বোম্বাই লিচু ৩ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে, মাদ্রাজি ১ হাজার ১৬৬ হেক্টর, চায়না থ্রি ৭০২ দশমিক ৫ হেক্টর, বেদানা ২৯৪ দশমিক ৫ হেক্টর, কাঠালি ২১ হেক্টর এবং মোজাফফরপুরি লিচু ১ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। আর বসতবাড়ির উঠানসহ বাগানগুলোয় লিচু গাছ রয়েছে প্রায় সাত লক্ষাধিক।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. খালেদুর রহমান বলেন, সারাদেশে কম-বেশি লিচু উৎপাদন হলেও দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা বেশি। এবারে হেক্টরপ্রতি ৫ দশমিক ৩ মেট্রিক টন লিচুর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, গত বছর দিনাজপুরে ২৮ হাজার মেট্রিক টন লিচু চাষ করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য ছিল ৫৭৫ কোটি টাকা।

বাজারে আগাম লিচু ওঠার বিষয়ে তিনি বলেন, কৃষক অধিক লাভের আশায় আগাম লিচু হারভেস্ট করছেন। অনেকে শেষ সময়ে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। তবে কৃষকদের কীটনাশক প্রয়োগ না করার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এবার বোম্বাই-বেদানা-মাদ্রাজি-চায়না থ্রিসহ সব জাতের লিচু গাছে ছিল মুকুলের সমারোহ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মুকুলের এমন আধিক্যে লাভের আশাও দেখেছিলেন লিচু চাষিরা। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে রাতে কুয়াশা এবং দিনে অধিক তাপমাত্রা থাকার কারণে পুড়ে যায় মুকুল। ফলে বেদানা-বোম্বাই-চায়না থ্রির ফলন কমার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

চাষি এবং ব্যবসায়ী উভয়েই জানান, ফলন কম তাই এসব জাতের লিচু বেশি দামে কিনতে হবে ক্রেতাদের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে