বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও যৌন নিগ্রহ

মূল পরিকল্পনাকারী ৯ মাসে ১০টি ডাকাতিতে অংশ নেন

জোবায়েদ মলিস্নক বুলবুল, টাঙ্গাইল
  ১৫ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহণে ডাকাতি ও যৌন নিগ্রহের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী মাহমুদুল হাসান ওরফে মুন্না ওরফে রতন হোসেন একজন পেশাদার সড়ক ডাকাত। পরিবহণ শ্রমিকের ছদ্মবেশে বিভিন্ন গাড়িতে ডাকাতি করাই তার পেশা। পেশার প্রয়োজনেই কারো কারো নাম পরিবর্তন করেন- এ জন্য জেলহাজতও খেটেছেন। ৯ মাস আগে জামিনে এসে অন্তত ১০টি ডাকাতিতে অংশ নেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার আদালতে দন্ডবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও পুলিশের দেওয়া তথ্যে এসব কথা বেরিয়ে এসেছে। এ পর্যন্ত ওই ঘটনায় মোট ১০ আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ধলপুর গ্রামে মাহমুদুলদের বাড়ি। বেশ কয়েক বছর ধরে জীবিকার প্রয়োজনে গাজীপুরের চন্দ্রা, কোনাবাড়ী এলাকায় অবস্থান করতেন। সেখানে পরিবহণ শ্রমিক হিসেবে ভাড়া বাসায় থাকতেন। ওই এলাকায় বসবাসরত পোশাক কারখানার শ্রমিক ও পরিবহণ শ্রমিকদের নিয়ে ডাকাত দল গড়ে তুলেছিলেন। তারা বিভিন্ন সময় সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতি করতেন। সবশেষ ২ আগস্ট কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহণের একটি বাসে ডাকাতিকালে মাহমুদুল নেতৃত্ব দেন। এ সময় ওই বাসে এক নারী যাত্রী পালাক্রমে যৌন নিগ্রহের শিকার হন।

গত ৭ আগস্ট মাহমুদুলসহ ১০ জনকে র?্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র?্যাব) গ্রেপ্তার করে। পরদিন তাদের টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ৯ আগস্ট আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয় গোয়েন্দা পুলিশ।

মূল পরিকল্পনাকারী মাহমুদুল হাসান ওরফে মুন্না ওরফে রতন হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, মাহমুদুল কিশোর বয়সেই পরিবহণের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। সে সময়ই নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পরে পরিবহণ থেকে চাকরিচু্যত হন। ৫-৬ বছর আগে মাহমুদুল গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকায় চলে যান। সেখানে পরিবহণ শ্রমিক হিসেবে আবার কাজ শুরু করেন। সেখানে কাজ করতে গিয়েই ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত হন। ২০১৮ সালে ডাকাতিতে মাহমুদুলের হাতেখড়ি। পরে হয়ে ওঠেন ডাকাত দলের নেতা। ওই সময় একটি ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। জামিনে বের হওয়ার পর ২০২০ সালে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছিনতাই করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়েন। সে ঘটনায় আবারও কারাগারে যেতে হয়। দুই দফায় তিনি আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। ৯ মাস আগে মাহমুদুল জামিনে বের হয়ে আসেন। এই নয় মাসে তিনি অন্তত ১০টি ডাকাতিতে অংশ নেন।

টাঙ্গাইলে ঈগল পরিবহণের বাসে ডাকাতি ও যৌন নিগ্রহের কয়েক দিন আগে মাহমুদুল আরও দুটি বাস ডাকাতিতে অংশ নেন। তিনি ওই ডাকাতিগুলোর নেতৃত্বে এবং মূল পরিকল্পনাকারীও ছিলেন। ঈগল পরিবহণের বাসে ডাকাতির ঘটনার সময় তাদের দলে যোগ দেন টাঙ্গাইলের ঝটিকা পরিবহণের বাসচালক রাজা মিয়া। মাহমুদুল বেশ কয়েক বছর আগে রাজা মিয়ার গাড়িতে সহকারীর কাজ করতেন। ওই ঘটনার পর পুলিশ প্রথমে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বাসচালক রাজা মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার স্বীকারোক্তিতে মাহমুদুলের নাম বের হয়ে আসে।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-উত্তর) অফিসার ইনচার্জ এবং ঈগল পরিবহণের বাসে ডাকাতি ও যৌন নিগ্রহের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন জানান, বাসে ডাকাতি ও যৌন নিগ্রহের ঘটনাসহ বিভিন্ন ডাকাতি কার্যক্রমে অংশগ্রহণের কথা মাহমুদুল স্বীকার করেছেন। এ মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। স্বীকারোক্তিতে মাহমুদুল ঈগল পরিবহণের বাসে ডাকাতির সময় এক নারী যাত্রীকে দুই দফা যৌন নিগ্রহে অংশ নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী মাহমুদুল হাসান ওরফে মুন্না ওরফে রতন হোসেনসহ এ পর্যন্ত ১০ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এর আগে বুধবার ১০ আগস্ট বিকালে টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাবু হোসেন ওরফে জুলহাস এবং মো. সোহাগ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নওরিন করিম তাদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন।

মঙ্গলবার ৯ আগস্ট রাতে আসলাম তালুকদার ওরফে রায়হান, রাসেল তালুকদার, নাইম সরকার ও মো. আলাউদ্দিন টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা হাসানাত আসামি আসলাম তালুকদারের, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাদল কুমার চন্দ আসামি রাসেল তালুকদারের, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আকরামুল ইসলাম আসামি নাইম সরকারের এবং সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবর রহমান আসামি মো. আলাউদ্দিনের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন।

৬ আগস্ট গ্রেপ্তার রাজা মিয়া, নুরুন্নবী ও মো. আওয়াল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাদের মধ্যে রাজা মিয়া ও নুরুন্নবীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শামসুল আলম এবং মো. আওয়ালের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুমি খাতুন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে