শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিম্নচাপে উত্তাল সাগর, উপকূলে আতঙ্ক

ম ট্রলারডুবিতে নিহত ৩, নিখোঁজ ১ ম উদ্ধার হয়েছেন ৩৫ জেলে ম তিন নম্বর সতর্ক সংকেত জারি
ম যাযাদি ডেস্ক
  ২০ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি শুক্রবার নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এতে উত্তাল হয়ে উঠেছে সাগর। উপকূলজুড়ে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতার ঢেউ আছড়ে পড়ছে। এ অবস্থায় দেশের সব সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরা ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। এই অবস্থা আগামী তিন দিন পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে দেশব্যাপী অসহনীয় গরম অনুভূত হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলের কোথাও গুঁড়ি গুঁড়ি আবার কোথাও ভারী বৃষ্টির পাশাপাশি বাতাসের তীব্রতা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে উপকূলীয় নদ-নদীর পানি। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বাসিন্দারা। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নোয়াখালীর হাতিয়া, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, বরগুনার তালতলীতে পৃথক তিনটি ট্রলারডুবিতে ৩ জন নিহত হয়েছেন। ট্রলারডুবির পর ৩৫ জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন একজন। হাতিয়ার সব রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, উত্তাল কক্সবাজারের সমুদ্রতীরে বাতাসের তীব্র চাপ। কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, আবার কখনো মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় উপকূলে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সত্ত্বেও সাগরতীরে ভিড় করছেন লক্ষাধিক পর্যটক। বৈরী আবহাওয়ায় তাদের আনন্দের মাত্রা যেন বেড়ে গেছে।

শুক্রবার সকালে সুগন্ধা বিচ পয়েন্টে প্রচুর পর্যটক দেখা গেছে। উত্তাল সাগরে নামতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সৈকতে একাধিক লাল পতাকা ওড়ানো হলেও সেদিকে কারও নজর নেই। বৈরী পরিবেশেও সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে আসা অর্ধেকের বেশি মানুষ উত্তাল সমুদ্রে নেমে ঝুঁকি নিয়ে গোসল করছেন। পর্যটকদের সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিচ কর্মী ও টু্যরিস্ট পুলিশকে।

এদিকে বৈরী আবহাওয়া ও সাগর উত্তাল থাকায় টেকনাফের সাথে সেন্টমার্টিন দ্বীপের নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান

জানিয়েছেন, এতে সেন্টমার্টিন দ্বীপে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যসামগ্রীর সংকট দেখা দিয়েছে। ঝড়োহাওয়ার কবলে পড়ে শুক্রবার সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেটির অদূরে একটি ফিশিং ট্রলার ডুবে যায়।

পর্যটক মাসুমা শাহানাজ দম্পতি জানান, তিন দিন বন্ধ থাকায় তিনি ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। হঠাৎ সংকেত পড়ায় সমুদ্র উত্তাল হওয়ায় নামতে ভয় পাচ্ছেন। তাই তীরে চেয়ারে বসে সমুদ্রের ঢেউগুলো উপভোগ করছেন।

সিলেট থেকে আসা আসগর, সবুজ, ইশতিয়াক, জোসেফ জানান, বৃহস্পতিবারে আমরা বন্ধুরা মিলে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছি। মেঘলা পরিবেশে হালকা বৃষ্টি হওয়ায় ভালো লাগছে। এর মধ্যে সমুদ্রে নেমে কয়েকবার গোসল করেছি। ঢেউগুলো বুকে জড়িয়ে নিয়েছি। সমুদ্রের ঢেউয়ের অনুভূতি অন্য রকমের।

কক্সবাজার টু্যরিস্ট পুলিশ রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম জানিয়েছেন, দুর্ঘটনা এড়াতে পর্যটকদের পানিতে নামার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। সৈকতে নিরাপত্তা টিম টহল দিচ্ছে।

স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী জানান, সাগরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে হাতিয়ায় ট্রলার ডুবিতে দুই জেলের মৃতু্য হয়েছে। এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন ১ জেলে। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ১৩ জেলেকে।

হাতিয়া থানার ওসি আমিরুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার নিঝুম দ্বীপের দমার চরের দক্ষিণে মেঘনা ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- আমতলি গ্রামের মাইন উদ্দিন (৪৫) ও নতুন সুখচর গ্রামের মো. রাফুল (২৫)। নিখোঁজ বেলাল উদ্দিনের (৩৫) বাড়ি ভোলা জেলায়।

আমিরুল ইসলাম জানান, বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে এফবি হাজী সিরাজ নামের মাছ ধরা ট্রলারটি সাগর ফেরার সময় শুক্রবার সকালে নিঝুম দ্বীপের দমার চরের দক্ষিণে ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। ট্রলারের ১৬ জেলের মধ্যে অন্য ট্রলারের জেলেরা ১৩ জনকে উদ্ধার করেন।

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, লঘুচাপের প্রভাবে ঝড়োবাতাসে উপজেলার রাবনাবাদ নদীতে মাছ ধরা অবস্থায় মৌডুবির নিজকাটা এলাকার সোহেল হাওলাদার এবং তার ভাই সুজন হাওলাদারের মালিকানাধীন দুটি ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। ট্রলার দুটিতে ১০ জন মাঝিমালস্না ছিল।

রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম মজুমদার জানান, ডুবে যাওয়া দুটি ট্রলার এবং মাঝিমালস্নাদের উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও গত ৯ আগস্ট সাগরে ট্রলার ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ দুই জেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, উত্তাল বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে ১৯ জেলেসহ এফবি মায়ের দোয়া ও এফবি আলস্নাহ্‌ দান নামের দুটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে গেছে। দুই ট্রলারে থাকা ১৯ জেলেকে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় জেলেরা। তবে সব জেলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধ জানান, নিম্নচাপের কারণে সাতক্ষীরা উপকূলের সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও গতকাল দুপুর থেকে ভারী বর্ষণ ও দমকা হাওয়া শুরু হয়েছে। সুন্দরবন সংলগ্ন কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া, চুনা, রায়মঙ্গলসহ সব নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে এলাকার ভেড়িবাঁধগুলো। ইতোমধ্যে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদের কুড়িকাওনিয়া ও হরিষখালী ভেড়িবাঁধে পানি অভার ফ্লো হচ্ছে। তাৎক্ষণিক বাঁধ সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের জানান, নিম্নচাপের কারণে উপকূলের সব নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে দুঃচিন্তার কোনো কারণ নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে