শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেয়ার কারসাজির দায়ে টিটু গংকে জরিমানা

এম সাইফুল
  ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

গেস্নাবাল ইন্সু্যরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির (গ্যাম্বলিং) দায়ে আলোচিত বিনিয়োগকারী লুৎফুল গনি টিটুকে জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ১৪ ডিসেম্বর থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হবে তাকে। এছাড়াও টিটুর মালিকানাধীন সাতরং এগ্রো ফিশারিজকেও গুনতে হবে ১০ লাখ টাকা জরিমানা। একই ঘটনায় জড়িত রয়েছেন টিটুর স্ত্রী শাম্মী নেওয়াজ ও ইবিএল সিকিউরিটিজ।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১ আগস্ট থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত গেস্নাবাল ইন্সু্যরেন্সের শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে দর বাড়ানো হয়েছে। মাত্র ২০ দিনে প্রায় ২০ শতাংশ মুনাফা (আরোপিত/অনারোপিত) করে নেয়, যা ক্যাসিনোকেও হার মানিয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, লুৎফুল গনি টিটু নিজের নামে একটি বিও অ্যাকাউন্ট, যার নম্বর হলো- ১২০৫৬৭০০৬৭৭৩৯৭০০, সাতরং এগ্রো ফিশারিজ নাম দিয়ে নিজের নামে একটি অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, যার নম্বর ১২০১৯৫০০৬৪৮৪৫৫৫০। এছাড়াও স্ত্রী শাম্মী নেওয়াজের নামে একটি অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করছেন; যার নম্বর ১২০৬০৮০০৬৮৮৩৫৪৫১ এবং ১৬০৫১২০০৬৭৭৩৯৮০১।

অ্যাকাউন্টগুলো থেকে গেস্নাবাল ইন্সু্যরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। শেয়ারের দর বাড়ানোর জন্য এসব অ্যাকাউন্ট থেকে কৃত্রিম লেনদেন হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে।

২০১৯ সালের আগস্টের আলোচিত সময়ে গেস্নাবাল ইন্সু্যরেন্সের শেয়ার লেনদেনের ৫৪.৩৯ শতাংশই ছিল টিটু গংয়ের হাতে। তার স্ত্রী ও সাতরংয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে। সবগুলো অ্যাকাউন্টই টিটু পরিচালনা করেন।

লুৎফুল গনি টিটু ও তার স্ত্রীর বিও অ্যাকাউন্ট মাল্টি সিকিউরিটিজ লিমিটেডে। আর সাতরং এগ্রো ফিশারিজের অ্যাকাউন্ট ইবিএল সিকিউরিটিজে রয়েছে। তবে ইবিএল সিকিউরিটিজকে কোনো জরিমানা করা হয়নি।

আলোচিত বিনিয়োগকারী টিটু এরপরও একাধিক শেয়ার নিয়ে কারসাজির সঙ্গে জড়িত বলে কমিশনের কাছে অভিযোগ রয়েছে। সি পার্লের শেয়ার নিয়ে এখনো কারসাজি চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিএসইসির কাছে তথ্য থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। একদফা শেয়ারের দর বাড়ানোর পর দ্বিতীয় দফায় আবারও সি পার্লের দর বাড়াচ্ছে চক্রটি।

বিএসইসি কারসাজি চলার সময় নীরব থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তারা কারসাজির পর দুই-আড়াই বছর পর্যন্ত তদন্ত ও সিদ্ধান্ত নিতে সময় নেয়। আর যে পরিমাণ অর্থ কারসাজির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় তার সামান্যতম টাকা জরিমানা করে। এমনকি সে জরিমানার টাকাও সঠিকভাবে আদায় হয় না।

এ বিষয়ে লৎফুল গনি টিটুকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তবে তিনি বিএসইসির কাছে লিখিত বক্তব্য দিয়ে জানিয়েছেন অসাবধানতাবশত এ ধরনের লেনদেন হয়েছে। কিন্তু কমিশন তা আমলে নেয়নি। ফলে টিটু গংকে জরিমানা গুনতে হবে।

এ বিষয়ে ইবিএল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান যায়যায়দিনকে জানান, সাতরং এগ্রো ফিশারিজ টিটুর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ইবিএল সিকিউরিটিজে লেনদেন করছে।

২০১৯ ও ২০ সালে শেয়ারবাজারে বীমা খাতের শেয়ার নিয়ে অস্বাভাবিক কারসাজি শুরু করে কয়েকটি চক্র। এর মধ্যে প্রভাতী ইন্সু্যরেন্স, গ্রিন ডেল্টা ইন্সু্যরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্সু্যরেন্সসহ অনেকগুলোর কারসাজির তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আলোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরু, জসিম উদ্দিন, সাইফ উলস্নাহ এবং এজি মাহমুদসহ একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে