বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টায় জঙ্গিরা!

গাফফার খান চৌধুরী
  ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

অস্ত্র গোলাবারুদ সংগ্রহের চেষ্টা করছে জঙ্গিরা। দেশি-বিদেশি অর্থায়নে অস্ত্র ভান্ডার গড়ে তোলার চেষ্টা করছে তারা। অস্ত্র দিয়ে তাদের সশস্ত্র জিহাদের পরিকল্পনা রয়েছে। এখাতে স্বাধীনতাবিরোধীরা অর্থায়ন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, চোরাগুপ্তা হামলা চালাতে জঙ্গিদের পছন্দ অত্যাধুনিক পিস্তল। সীমান্ত পথে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছে জঙ্গিরা। অস্ত্র গোলাবারুদ সংগ্রহ করতে বিভিন্ন দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে তারা। জঙ্গিবাদ প্রচারে ব্যবহৃত সাইডগুলোর অধিকাংশই বিদেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে। এজন্য বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) এসব সাইট চেষ্টা করেও বন্ধ করতে পারছে না।

জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গিরা পুরোদমে শক্তিশালী হতে অস্ত্র গোলাবারুদের মজুত গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এজন্য তারা গহীন জঙ্গলে থাকা বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। একই সঙ্গে তারা পার্শ্ববর্তী একাধিক দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়েছে। তাদের মাধ্যমে মারাত্মক সব অত্যাধুনিক ক্ষুদ্রাস্ত্র আনার চেষ্টা করছে।

সূত্রটি বলছে, একই সঙ্গে জঙ্গিরা আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপেস্নাসিভ ডিভাইস) আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আইইডি বিভিন্ন ফর্মেটে আনা হয়। যা বাহ্যিকভাবে দেখে বুঝার উপায় থাকে না। এসব আইইডি মারাত্মক সব বিস্ফোরক, বিশেষ করে গ্রেনেড তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। গ্রেনেড মারাত্মক ধ্বংসষজ্ঞ চালাতে সক্ষম। জঙ্গিরা সশস্ত্র জিহাদের জন্য গ্রেনেড ও আগ্নেয়াস্ত্র এবং চোরাগুপ্তা হামলা চালাতে তারা অত্যাধুনিক অটোমেটিক পিস্তল সংগ্রহের চেষ্টা করে যাচ্ছে। যেসব পিস্তলে সাইলেন্সার লাগানোর ব্যবস্থা আছে, সেগুলো আমদানিতে প্রাধান্য দিচ্ছে জঙ্গিরা। যাতে শব্দহীন ও নিশ্চিতভাবে কাউকে হত্যা করা সম্ভব হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের প্রধান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, গত বছরের শেষ দিকে 'জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া' নামে একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতার তথ্য মিলে। কুমিলস্না থেকে একযোগে ৮ তরুণ নিখোঁজের পর সম্মিলিত অভিযানে নতুন জঙ্গি সংগঠনটি সম্পর্কে নানা তথ্য সামনে আসে।

সিটিটিসি ওর্ যাব সূত্রে জানা গেছে, নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর সংখ্যা শতাধিক। যাদের মধ্যে ৫৫ জন সম্পর্কে তথ্য মিলেছে। গ্রেপ্তার হয়েছে ৪৬ জন। সবশেষ গ্রেপ্তার হয় জঙ্গি সংগঠনটির অর্থ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা সাইফুল ইসলাম তুহিন (৪৬) ও মো. নাঈম হোসেন (২৬)। আর অস্ত্র গোলাবারুদ সরবরাহকারী কবীর আহাম্মদ (৪৭)। এ তিন জনকে পরিচালনা করতেন পলাতক শামীন মাহফুজ।

সবশেষ গ্রেপ্তার তিনজনের কাছে ৩টি পিস্তল, ৬টি একনলা বন্দুক, ১১ রাউন্ড সেভেন পয়েন্ট ৬২ মিলিমিটার বোরের তাজা বুলেট, ১৪০ রাউন্ড সীসার তৈরি বুলেট, ৪ লিটার এসিড, ২৫০ গ্রাম গান পাউডার, ৩ লিটার অকটেন, ২ কার্টুন ম্যাচ বক্স, ২ কয়েল বৈদু্যতিক তার, রাসায়নিক পদার্থসহ নানা ধরনের বিস্ফোরক পাওয়া গেছে।

গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা সূত্রটি আরও জানিয়েছে, নতুন জঙ্গি সংগঠনটির মূল মাস্টার মাইন্ড পলাতক শামীন মাহফুজ। তিনি দুর্গম পার্বত্য এলাকায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প খুলে জঙ্গিদের হাতে কলমে অস্ত্র ও বোমা ছুঁড়ার প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। বড় অস্ত্রগুলো কমান্ডো জঙ্গি প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত হত। আর রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে জঙ্গি সংগঠনটির সামরিক শাখার সদস্যদের মাধ্যমো মারাত্মক বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছিল।

অস্ত্র গোলাবারুদের টাকা ইয়াসিন ও ইমরানের মাধ্যমে দিয়ে আসছে স্বাধীনতাবিরোধীরা বিভিন্ন সংগঠন। অর্থের একটি বড় অংশ বিদেশে থাকা স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর কাছ থেকে এসেছে। বাকি টাকার যোগান দেওয়া হচ্ছিল দেশে থাকা স্বাধীনতাবিরোধী একটি ইসলামী দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে।

অর্থায়নের বিষয়ে সিটিটিসি প্রধান ডিআইজি আসাদুজ্জামান জানান, পলাতক শামীন মাহফুজ অর্থ লেনদেন করতেন ইমরানের মাধ্যমে। ইয়াসিনের দায়িত্ব ছিল জঙ্গিদের নিরাপদ আস্তানায় বা শেল্টার হাউজে থাকার ব্যবস্থা করা। কবীরের কাছ ছিল অস্ত্র গোলাবারুদ সংগ্রহ করে দেওয়া। তারা বিশাল অস্ত্রের মজুত গড়ার চেষ্টা করছিল।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত জঙ্গিরা একাধারে লেখক, প্রকাশক, বস্নগারসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষদের হত্যা করে। এরপর সাঁড়াশি অভিযানের মুখে জঙ্গিরা গ্রেপ্তার হচ্ছিল। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে করোনার সময় জঙ্গিরা আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। ওই সময় অধিকাংশ মানুষ ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করতেন। সেই সুযোগটিতেই জঙ্গি সংগঠনগুলো কাজে লাগিয়েছে। ২০২০ থেকে হালনাগাদ জঙ্গি সংগঠনগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেই সবচেয়ে বেশি তরুণ-তরুণীকে জঙ্গিবাদের দিকে আকৃষ্ট করতে পেরেছে। বিটিআরসিকে বিভিন্ন সাইটের উপর মনিটরিং করতে বলা হয়েছে। তবে অধিকাংশ সাইট পরিচালিত হচ্ছে বিদেশ থেকে। এজন্য বিটিআরটি চেষ্টা করেও এসব সাইট বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে