শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী

ঝিনাইদহ-৩
তারেক মাহমুদ, বাবর আলী ও আলমগীর খান
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

এগিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রচারণা শুরু করেছে। ফলে মাঠে নেমে পড়েছেন ঝিনাইদহ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। আসনটি মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এখানে বর্তমান সরকারের এমপি শফিকুল আজম খাঁন চঞ্চল এবং সাবেক এমপি ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নবী নেওয়াজের পৃথক দুটি অনুসারি রয়েছে। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে এই নির্বাচনী এলাকার কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর আওয়ামী লীগ যুবলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা কর্মসূচি পালন করে থাকেন। তবে বিরোধী দল বিএনপিসহ ছোট ছোট দলের আন্দোলন এবং নির্বাচন নিয়ে এই আসনের ভোটারদের মধ্যে আলোচনাও কম নয়।

ঝিনাইদহ-৩ আসনটি মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর দুই উপজেলার দুটি পৌরসভা এবং ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে কোটচাঁদপুরে এক পৌরসভা ও পাঁচ ইউনিয়ন এবং মহেশপুরের একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে।

আসনটিতে দুটি উপজেলা হলেও স্বাধীনতার পর থেকে ১১টি নির্বাচনে প্রতিবারই মহেশপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কোটচাঁদপুর থেকে এখনো কোনো প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেননি। ফলে বরাবরই উন্নয়নে পিছিয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খাঁন চঞ্চল, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি নবী নেওয়াজ, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাজ্জাতুজ জুম্মা, সাবেক এমপি মইনুদ্দিন মিয়াজির ছেলে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক সচিব সালাউদ্দীন মিয়াজি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ। অন্যদিকে হ পৃষ্ঠা ১৫ কলাম ৬

বিএনপি থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান রনি এবং মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোমিনুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মসলিশে শুরা সদস্য অধ্যাপক মতিয়ার রহমান এবং জাতীয় পার্টি থেকে আব্দুর রহমানের নামও আলোচনায় রয়েছে।

দেশের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠিত পৌরসভার এই আসনটিতে পরপর চার বার বিএনপির প্রার্থী শহিদুল ইসলাম মাস্টার নির্বাচিত হলেও গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুল আজম খান চঞ্চল নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। মোট ভোট ২,৭৩,১০৮-এর মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় এই সংসদ সদস্য পেয়েছিলেন ১,১৮,৩৭৫। বিএনপি থেকে বারবার নির্বাচিত প্রয়াত শহিদুল ইসলাম মাস্টার পেয়েছিলেন ৫৯,০১৪ ভোট। জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক মতিয়র রহমান পেয়েছিলেন ৮১৭৩৯ ভোট। মূলত এই আসন থেকে জামায়াত ও বিএনপি জোটগতভাবে নির্বাচন করত। ২০০৮ সালের স্থানীয় জোটের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে জামায়াত-বিএনপি আলাদা আলাদা নির্বাচন করায় তাদের ভরাডুবি হয়। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এই আসনের সাবেক এমপি শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ত্রাণের টিন, চাল আত্মসাৎ, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। বেশ কয়েকটি স্থান থেকে মাটি খুঁড়ে ত্রাণের টিন উদ্ধার করে যৌথবাহিনী। ২০০৭ সালের ২২ ফেব্রম্নয়ারি যৌথবাহিনীর সদস্যরা শহিদুল ইসলামের মহেশপুর উপজেলার ভালাইপুর গ্রাম থেকে ত্রাণের টিন, শাড়ি, লুঙ্গি, কম্বলসহ বিপুল পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী উদ্ধার করে। তবে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম মাস্টারের সময় মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলায় রাস্তাঘাট, বিদু্যৎ, স্কুল-কলেজ নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়ন করে আলোচনায় আসেন। বর্তমান সরকারের একটানা তিন মেয়াদের দুইবার বর্তমান এমপি শফিকুল আজম খাঁন চঞ্চল এবং একবার নবী নেওয়াজ নির্বাচিত হন।

ঝিনাইদহ-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খাঁন চঞ্চল এই প্রতিবেদকের সঙ্গে পরে কথা বলার আশ্বাস দিলেও আর ফোন রিসিভ করেননি।

যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঝিনাইদহ-৩ আসনের সাবেক এমপি নবী নেওয়াজ বলেন, 'দশম সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে জনগণের পাশে থেকে তাদের উন্নয়নের চেষ্টা করেছিলাম। আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণ সেটা জানেন, ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা হিসেবে কোটচাঁদপুর এবং মহেশপুরে আমার সময় সব থেকে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। দল আমাকে আবার মনোনয়ন দিলে স্থানীয় ভোটাররা আবারও আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে বিশ্বাস করি।'

কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান (শিমুল) বলেন, 'দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে আন্দোলন করছি। আমার নির্বাচনী এলাকার দুটি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়নের প্রায় সবগুলোতে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে যে কোনো ধরনের আন্দোলন করতে দলের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন। দল নির্বাচনে গেলে আমি দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইব। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে জয়ী হব ইনাশালস্নাহ।'

উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান রনি বলেন, 'আমরা এখনই নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। এখন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে আন্দোলন করছি। তবে দল যদি নির্বাচন করে আমি প্রার্থী হব। যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে অনেক বেশি ব্যবধানে নির্বাচিত হব বলে আশা রাখি।

মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোমিনুর রহমান বলেন, 'আমি দীর্ঘদিন দলের তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন করেছি। বর্তমানে কেন্দ্রীয় কৃষক দলের দায়িত্বে আছি। দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। মনোনয়ন দিলে নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা আমাকে নির্বাচিত করবেন।'

তবে মহেশপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা ফারুক হোসেনের কাছে তাদের দলীয় প্রার্থী সম্পর্কে জানতে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।

হ আগামীকাল :ঝিনাইদহ-৪ আসনের বিস্তারিত

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে