শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
অবস্থান কর্মসূচিতে মির্জা ফখরুল

ক্ষমতায় টিকে থাকা সরকারকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে

যাযাদি রিপোর্ট
  ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
১০ দফা দাবিতে শনিবার রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -যাযাদি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে, প্রতারণা করে ক্ষমতায় টিকে থাকা সরকারকে এবার অবশ্যই বিদায় নিতে হবে। জনগণের অভু্যত্থানের মধ্য দিয়ে তারা পরাজিত হবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।'

শনিবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। সারাদেশের জেলা ও মহানগর পর্যায়ে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ কর্মসূচি পালন করে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। বিদু্যৎ, গ্যাসসহ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আওয়ামী সরকারের 'সর্বগ্রাসী দুর্নীতির' প্রতিবাদ এবং ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এ অবস্থান কর্মসূচি দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টায় শেষ হয়। এদিকে রমজান মাসে হলেও মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ সময়ে তারা দ্রব্যমূল্যের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে সরকারবিরোধী নানা সেস্নাগান দিতে থাকেন।

মির্জা ফখরুল জার্মান বিখ্যাত কবি মার্টিন নিম্যোলারের লেখা কবিতা 'ফাস্ট দে কেইম' (ওরা প্রথমত:এসেছিল) আবৃতি করে বলেন, কবিতাটি খুবই প্রাসঙ্গিক। কবিতাটি হচ্ছে, 'ওরা প্রথমে কমিউনিস্টদের জন্য এসেছিল, আমি কোনো কথা বলিনি। কারণ আমি কমিউনিস্ট নই। তারপর যখন ওরা ট্রেড ইউনিয়নের লোকগুলোকে ধরে নিয়ে গেল, আমি নীরব ছিলাম, কারণ আমি শ্রমিক নই, শেষবার ওরা ফিরে এলো আমাকে ধরে নিয়ে যেতে। আমার পক্ষে কেউ কোনো কথা বলল না। কারণ কথা বলার মতো আর কেউ ছিল না।' তাই আজকে সবার দায়িত্ব হচ্ছে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।

মির্জা ফখরুল বলেন, এরা সহজে যাবে না। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে এক বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন, প্রয়োজনে আগাম

নির্বাচনের জন্যও প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। অর্থাৎ, তারা এখন ভিন্ন কৌশল নিতে চায়। যে আগাম নির্বাচন করে জাতিকে বোকা বানিয়ে তারা আগের মতো নিজেদের নির্বাচিত ঘোষণা করবে। কিন্তু এবার জনগণ আপনাদের আর কোনো কৌশলকেই সফল হতে দেবে না, আপনাদের কোনো ফাঁদে পা দেবে না। এবার জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, আপনাদের সব চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দেবে।

তিনি আরও বলেন, এ সরকার গণতন্ত্র মানে না। এ সরকার মানুষের মতামতকে কোনো গুরুত্ব দেয় না; তাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতায় টিকে থাকা। তাদের অধীনে দু'টি নির্বাচন করে বন্দুকের নলের মুখে জোর করে ক্ষমতায় টিকে রয়েছে। এ দেশের মানুষ কখনোই অন্যায়কে মেনে নেয়নি। সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, স্বাধীনতার পরে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল তখনো গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছিল। রক্ষীবাহিনী দিয়ে এ দেশের বিরোধী মত দমন করেছে। চারটি সংবাদপত্র রেখে বাকি সব বন্ধ করেছে। এই আওয়ামী লীগের চরিত্র দেশের মানুষ এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উলস্নাহ আমান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম প্রমুখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।

অন্যান্য জোট ও দলের কর্মসূচি

এদিকে নিত্যপণ্যের মূল্য ক্রয়সীমার ঊর্ধ্বে হওয়ায় জনগণের জীবন নরকে পরিণত হয়েছে দাবি করে যুগপৎ অবস্থান কর্মসূচিতে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ডক্টর কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, 'ঘরে-বাইরে কোনো জায়গায় শান্তি নেই, এ অবস্থা আর কতদিন চলবে? জনগণের আর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সবাই রাস্তায় নেমে আসতে শুরু করেছে। তাই বেশি সময়ক্ষেপণ না করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন।'

শনিবার রাজধানীর পূর্ব পান্থপথে এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এলডিপি আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি আরও বলেন, 'দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা ও উপজেলায় ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের অস্ত্রের মহড়া দৃশ্যমান। প্রতিনিয়ত ব্যাংকের টাকা পাচার ও আত্মসাৎ হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। অন্যদিকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হামলা, হয়রানি ও নির্যাতন অব্যাহতভাবে আছে। পরিণতি ভয়াবহতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। যা কখনও কারো কাম্য হতে পারে না। সংবিধান সংশোধন করুন এবং দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন।'

এলডিপির প্রধান বলেন, 'অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, বর্তমান অবৈধ সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন পদ্ধতি দলীয়করণ করার পাকাপোক্ত ব্যবস্থা অব্যাহত রেখেছে। সভা সমাবেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বললেও বাস্তবতার সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। অতি সম্প্রতি হাইকোর্টে ঘটে যাওয়া ন্যক্কারজনক ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি। এ ছাড়াও সরকারের অবৈধ কর্মকান্ড ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সংবাদপত্রের কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে। অনেক সম্পাদক ও সাংবাদিকের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। সর্বশেষ সাংবাদিক সামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার তারই দৃষ্টান্ত। তাই বলছি, শক্তিশালী বিরোধী দল ও সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য।

এলডিপি মহাসচিব ডক্টর রেদোয়ান আহমদের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ডক্টর নেয়ামূল বশির, ডক্টর আওরঙ্গজেব বেলাল, অ্যাডভোকেট এসএম মোরশেদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহে আলম চৌধুরী, উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপিকা মোছা. কারিমা খাতুন, যুগ্ম মহাসচিব বিলস্নাল হোসেন মিয়াজি, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম, প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিলু, ঢাকা মহানগর পশ্চিম এলডিপির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা সাহাদাত হোসেন মানিক, উত্তর এলডিপির সাধারণ সম্পাদক অবাক হোসেন রনি, ঢাকা মহানগর পূর্বের সাধারণ সম্পাদক অসীম ঘোষ, গণতান্ত্রিক যুবদলের সভাপতি আমান সোবহান, গণতান্ত্রিক শ্রমিক দলের সভাপতি মামুন, গণতান্ত্রিক স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি খালিদ বিন জসিম, গণতান্ত্রিক আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট নূরে আলম, গণতান্ত্রিক ছাত্রদলের সভাপতি মেহেদী হাসান মাহবুব, গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক দলের সভাপতি খোকন, এলডিপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আজগর বাবুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

রাজধানীর বিজয় নগর পানির ট্যাংকের পাশে অনুষ্ঠিত অবস্থান কর্মসূচিতে ১২ দলীয় জোটের নেতারা বলেছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি না মানলে ও সব রাজবন্দিদের মুক্তি না দিলে এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটানো হবে।

নেতারা বলেন, 'আজকে সরকারের কবল থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করতে রোজার মাসেও রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছি। কারণ এই সরকারের আমলে সাধারণ মানুষ ঠিকমতো রোজা রাখতে পারছে না। প্রত্যেকটি জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। মানুষ ভালোমন্দ খেতে পারছে না, পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই এদের পতন ঘটানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।'

আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে উলেস্নখ করে বক্তারা বলেন, 'কিন্তু সেই সুযোগ দেশের মানুষ আর দেবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।'

জোটের সমন্বয়ক জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, 'এই সরকার মানুষের বাক স্বাধীনতা ও বেঁচে থাকার অধিকার ও ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারা ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ শাসন করছে। আমরা জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যেই রাজপথে নেমেছি। জনগণের গণঅভু্যত্থানে সরকার পদত্যাগ করতে ও নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য হবে।'

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বলেন, 'এই সরকারের অনিয়ম দুর্নীতি প্রকাশ করা যায় না। কিছু লিখলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিচ্ছে। প্রথম আলোর সাংবাদিককে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার আজও হয়নি। আসুন এই লুটেরা ও নিপীড়ক সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলি। যাতে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।'

অবস্থান কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান বাংলাদেশ কারি আবু তাহের, বাংলাদেশ এলডিপির সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল গণি, মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নেতা মাওলানা মহিউদ্দীন ইকরাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) নেতা জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ ভাসানী) নেতা আজহারুল ইসলাম প্রমুখ।

অন্যদিকে, শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর পল্টন মোড়ে যুগপৎ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পাটি (এসডিপি)।

সংগঠনের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, গুম-খুন, লুটপাট ও দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। তাই সবার আগে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।'

তিনি বিদু্যৎ, গ্যাস, চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বন্ধ, 'গুম-খুন, লুটপাট ও দুর্নীতি' বন্ধ এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।

সংগঠনটির অবস্থান কর্মসূচিতে সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে