অবৈধ উপায়ে সাগরপথে ইউরোপ যেতে প্রায় প্রতিনিয়তই নৌকা ডুবিতে হতাহতের ঘটনা ঘটছে ভূমধ্যসাগরে। তবে এ বছর রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টায় মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন এক হাজার ৮৭৪ জন। সম্প্রতি জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম-এর মিসিং মাইগ্রেন্টস প্রজেক্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর ডয়চে ভেলে।
এদিকে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে অবৈধভাবে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে স্পেনে যাওয়ার পথে নৌকাডুবির ঘটনায় ৯৫১ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃতু্য হয়েছে বলে জানিয়েছে অভিবাসনপ্রত্যাশী একটি মনিটরিং গ্রম্নপ। গ্রম্নপটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাগরে মৃতু্য হওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীরা আফ্রিকার ১৩টি ও এশিয়ার ১টি দেশের নাগরিক।
ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনের তথ্য
অনুযায়ী, এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত এক হাজার ৮৭৪ জন অভিবাসন প্রত্যাশী মারা গেছেন। গত বছর একই সময়ে এই সংখ্যাটি ছিল এক হাজার ১০৮। আইওএম আরও জানিয়েছে, ২০১৭ সালে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছেন দুই হাজার ২৭৮ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী, আর তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে মারা যান দুই হাজার ৯৪৬ জন।
সংস্থাটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরীয় রুটে মোট ২৭ হাজার ৬৩৩ জন মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যাটি এর চেয়েও বেশি হতে পারে বলে শঙ্কা করছে আইওএম কারণ, ভূমধ্যসাগরে অনেক নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে, যেগুলোর কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় না ফলে, ওইসব নৌকায় থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীরা গণনার বাইরে থেকে যান।
এ বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্র্যাজেডি ছিল গ্রিস উপকূলে ভূমধ্যসাগরের গভীরতম অঞ্চলে অভিবাসীবোঝাই নৌকাডুবির ঘটনাটি, এতে ১০৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে- মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ৮২টি কিন্তু শত শত মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন তবে, প্রকৃত সংখ্যাটি এখনো জানা যায়নি।?
৫ জুলাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশ্রয় বিষয়ক সংস্থা (ইইউএএ) জানিয়েছে, সংঘাত, সংঘর্ষ, জলবায়ু বিপর্যয়, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের কারণে উন্নত জীবনের আশায় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ অনিয়মিত অভিবাসনের পথ বেছে নিচ্ছেন। আর গ্রীষ্মকালে এই সুযোগটি লুফে নেয় মানবপাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।? অভিবাসন প্রত্যাশীদের ইউরোপ পৌঁছে দেয়ার মিথ্যে প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে সমুদ্র অনুপযোগী নৌকায় তাদের তুলে দেওয়া হয়, কিন্তু ভূমধ্যসাগরে বেশিরভাগ সময় দুর্দশার মুখে পড়ে অভিবাসীবাহী নৌকাগুলোর অসংখ্য মানুষ সমুদ্রে ডুবে মারা যায় অথবা নিখোঁজ হয়।?
অন্যদিকে অভিবাসনপ্রত্যাশী মনিটরিং গ্রম্নপের তথ্যে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে ক্যামিনান্দো ফ্রন্টেরাস বলেছেন, ২০২৩ সালের প্রথম ৬ মাসে ১৪টি দেশের নাগরিকরা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে স্পেনে যাওয়ার চেষ্টা করেন। দেশগুলো হলো- আলজেরিয়া, ক্যামেরুন, কমোরোস, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, ইথিওপিয়া, গিনি, আইভরি কোস্ট, মালি, মরক্কো, গাম্বিয়া, সেনেগাল, সুদান, সিরিয়া, গাম্বিয়া ও এশিয়ার একমাত্র দেশ শ্রীলংকা।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে প্রতিদিন গড়ে পাঁচজন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃতু্য হয়েছে। তারা মূলত চারটি পথে স্পেনে প্রবেশের চেষ্টা করেন। ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ, আলবোরান সাগর, আলজেরিয়ান এবং জিব্রাল্টা প্রণালি পাড়ি দেওয়ার সময় নৌকা ডুবির ঘটনায় তাদের মৃতু্য হয়। জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ৯টি নৌকা এ পথে নিখোঁজ হয়েছে।
ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মৃতু্য হয়েছে। ৭৭৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন এই রুটে। এদিকে, আলবোরান রুটে ২১, আলজেরিয়ান রুটে ১০২ ও জিব্রাল্টা প্রণালিতে ৫০ জনের মৃতু্য হয়েছে বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।