রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

নগরে কাশফুলের মুগ্ধতা

বীরেন মুখার্জী
  ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
রেশমি সাদা কাশফুল আর নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘের ভেলা শরতের অন্যতম অনুষঙ্গ। ইট-সুরকির এই যান্ত্রিক নগরীতে প্রকৃতির এই রূপ-লাবণ্যের দেখা মেলা ভার। তবুও নগরীর খোলা প্রান্তরে উঁকি দিচ্ছে শরতের মনোলোভা কাশফুল। ছবিটি রাজধানীর রামপুরার আফতাবনগর থেকে তুলেছেন আমাদের আলোকচিত্রী নাজমুল ইসলাম

প্রকৃতিতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কাশফুল। যান্ত্রিকনগরী রাজধানী ঢাকার ইট-কংক্রিটের মাঝে যেটুকু সবুজ বনানী, তার মাঝেও উঁকি দিতে শুরু করেছে শরতের ঊর্ধ্বমুখী ও গন্ধহীন এই ফুল। বাংলা পঞ্জিকা মতে এখন চলছে শরত ঋতু। ভাদ্র ও আশ্বিন মাস নিয়ে এই শরতকে 'ঋতুর রানী'ও বলা হয়। এই ঋতুতে কাশফুল, মেঘমুক্ত নীল আকাশ আর ফসলের মাঠ সবুজে ভরে যায়। ইতোমধ্যে ভাদ্র মাসের ২৫ দিন পেরিয়ে গেছে। এরই মাঝে দেশের খাল, বিল, নদীর তীর এবং চরাঞ্চলের অবারিত মাঠ জুড়েও ফুটতে শুরু করেছে রেশমি সাদা কাশফুল। এই ফুলের মঞ্জরি বেশ লম্বা। ফুটন্ত ফুল দীর্ঘদিন ধরে সৌন্দর্য বিলায়।

শরতের রূপ-লাবণ্যে যে কোনো মানুষ মোহিত হবেন সন্দেহ নেই। এই ঋতু কবির হৃদয়ানুভূতিকেও প্রচন্ডভাবে নাড়া দেয়। সৃষ্টিশীল কবির হাত ধরে শরৎ উঠে আসে কবিতায়, কবির পঙ্‌ক্তিমালা হয়ে যায় শরৎসমৃদ্ধ। এজন্য বাংলা সাহিত্যে শরতের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। মহাকবি কালিদাস থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ের কবি-সাহিত্যিকরাও শরতকে উপজীব্য করে তাদের সাহিত্য রচনা করে চলেছেন। 'মেঘদূত' কাব্যে শরৎ বন্দনায় মহাকবি কালিদাস বলেছেন-'প্রিয়তম আমার, ঐ চেয়ে দেখ, নববধূর ন্যায় সুসজ্জিত শরৎকাল সমাগত।' 'ঋতুসংহার' কাব্যে লিখেছেন-'আকাশ ফুলের মতো যার পরিধান, প্রফুলস্ন পদ্মের মতো

যার মুখ, উন্মত্ত হাঁসের ডাকের মতো রমণীয় যার নূপুরের শব্দ, পাকা শালি ধানের মতো সুন্দর যার ক্ষীণ দেহলতা, অপরূপ যার আকৃতি সেই নববধূরাতো শরৎকালে আসে।' কবির কল্পনায় শরৎ ঋতুর সঙ্গে প্রকৃতি ও নারীর উপমা দেখে বিস্ময়াভিভূত না হয়ে উপায় নেই। শরতে প্রকৃতি যেন সত্যিই নববধূর সাজে সজ্জিত হয়ে ওঠে।

বৈষ্ণব সাহিত্যে শরতের সৌন্দর্য, বিরহের রূপ প্রতিটি মানুষের মনকে উদ্বেল করে তোলে। বৈষ্ণব পদাবলির অন্যতম কবি বিদ্যাপতি রাধা বিরহের যে চিত্র এঁকেছেন তা শুনে প্রতিটি বিরহ কাতর হৃদয়েই হাহাকার ওঠে-'এ সখী হামারি দুখের নাহি ওর।/ এ ভরা বাদর মাহ ভাদর/ শূন্য মন্দির মোর।'

বিদায়ী শ্রাবণধারা পত্রপলস্নবের গায়ে যে উজ্জ্বলতার রং এঁকে দেয়, শরতে তা আরও নিখাদ হয়ে ওঠে। শরতের এই রং রূপ গন্ধ শোভা ঐশ্বর্য- সবই যেন অলৌকিক সৌন্দর্যের আধার। শান্ত-স্নিগ্ধ প্রকৃতি, স্বচ্ছ নীলাকাশ দুপুরের আলোমাখা সোনা রং, সন্ধ্যার হাত ধরে কুয়াশার বিস্তৃতি মনে করিয়ে দেয় শরতের চিরন্তন ও শাশ্বত রূপ।

কাশ হচ্ছে তৃণ জাতীয় উদ্ভিদ, এর উচ্চতা গড়ে ৫ থেকে ১০ ফুট হয়ে থাকে। কান্ড ফাঁপা ও কান্ডে গিঁট থাকে। এর পরিবার এৎধসরহবধব, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম ঝধপপযধৎঁস ংঢ়ড়হঃধহবঁস। গাছ বেশ কষ্ট সহিষ্ণু, খরা ও জলাবদ্ধতা সহ্য করেও নিজেদের বংশ বছরের পর বছর টিকিয়ে রাখতে সক্ষম। গাছ একত্রে ঝোপালোভাবে জন্মে। এর চিকন পাতা বেশ লম্বা, বর্ধনশীল গাছের পাতার রং গাঢ় সবুজ হয়, যা খসখসে প্রকৃতির। গাছ বর্ধনশীল পর্যায়ে ফুল ফোটার পূর্ব পর্যন্ত গ্রামাঞ্চলে গো-খাদ্য হিসেবে বিশেষ সমাদৃত এবং পরবর্তী সময়ে রান্নার কাজে, ঘরের চালে ও বেড়ায় ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া চাহিদা থাকাতে এর বাজার মূল্যও রয়েছে। কাশের ঝোপ খাল-বিল ও নদী পাড়ের ভাঙন ও মাটির ক্ষয়রোধে ভূমিকা রাখে। সাধারণত শিকড় কাটিং পদ্ধতির মাধ্যমে এর বংশ বিস্তার ঘটে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে