মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত দিয়েই দ্বিপাক্ষিক সফর শুরু করতে চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ভারত দিয়েই দ্বিপাক্ষিক সফর শুরু করতে চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রতিবেশী ভারত দিয়েই নিজের দ্বিপাক্ষিক সফর শুরু করতে চান নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সোমবার দুপুরে ঢাকায় ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মার সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি নিজেই এ কথা জানান। মন্ত্রী বলেন, 'স্পষ্টত আমরা চাইছি, আমার দ্বিপক্ষীয় সফর ভারত দিয়েই শুরু হবে। কিন্তু আমি বহুপাক্ষিক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য উগান্ডায় যাচ্ছি ১৭ জানুয়ারি।'

তিনি বলেন, 'আমাকে দিলিস্ন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমরা সময়টি দেখছি- কখন আমার জন্য এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকরের জন্য ফিজিবল হয়।'

নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, 'ভারত আমাদের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য সবসময় আমাদের পাশে ছিল। ২০১৪ সালে নির্বাচন নিয়েও অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল, ভারতবর্ষ আমাদের পাশে ছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনকেও বিতর্কিত করার এবং অনেক প্রশ্নের উত্থাপন করা হয়েছিল, ভারতবর্ষ আমাদের পাশে ছিল। এবারেও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থানটা কী ছিল বা কী আছে।'

ভারতের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা যেটা নিয়ে আলোচনা করেছি, সেটি হচ্ছে সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশ একটি নির্বাচন হয়েছে। এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছিল। যেমন- দেশের মধ্যে অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য চালানো হয়েছে। ৫ জানুয়ারি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে একটি ট্রেনে পুরো পরিবারকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং অন্যান্য মানুষ হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। স্পষ্টতই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য এবং মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য এগুলো করা হয়েছে।'

নতুন সরকার গঠনের পর ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে প্রথমে ভারতের রাষ্ট্রদূতই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'এটি সৌজন্য সাক্ষাৎ হলেও আমরা নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। বিশেষত, আমরা গুরুত্বের সঙ্গে কানেক্টিভিটি নিয়ে আলোচনা করেছি, বর্ডার হাটগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।'

বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'বিশেষ করে ভারতীয় রুপি ও বাংলাদেশি টাকায় বিনিময়ের মাধ্যমে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করা। এটি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং অল্প কিছু বাণিজ্য হয়েছে। কীভাবে আরও সম্প্রসারণ করা যায় এবং কীভাবে জনপ্রিয় করা যায় এবং সবার কাছে কীভাবে পরিচিত করা যায়, এটি নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এটি হলে পরে ডলারের ওপরে নির্ভরশীলতা আমাদেরও কমবে ভারতেরও কমবে এবং তোমাদের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে সেটি সহায়ক হবে।

এছাড়াও বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করে ভারতের পণ্য পরিবহণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, 'চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের পণ্য ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের রাজ্যগুলোতে নিয়ে যাওয়া- এটি অনেক পুরনো দিনের ইসু্য এবং আমরা এটি নিয়ে অনেক দিন ধরে কাজ করছি। ইতোমধ্যে কিছু কাজ হয়েছে, কিন্তু সেটিকে যাতে আমরা আরও সম্প্রসারিত করতে পারি। সেগুলোর জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।'

যেকোনো সহযোগিতা করতে ভারত প্রস্তুত- প্রণয় ভার্মা :

সাক্ষাৎ শেষে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের জনগণকে যেকোনো সহযোগিতা করতে প্রস্তুত ভারত। বাংলাদেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে আমরা পাশে থাকব।

ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, 'নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আমি এখানে এসেছি। এটি আমার প্রথম বৈঠক। আমি তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও অভিনন্দন জানিয়েছি। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করব।'

প্রণয় ভার্মা বলেন, 'গত এক দশকে আমাদের সম্পর্কের যে উন্নতি হয়েছে, যেসব ইসু্যতে সাফল্য এসেছে, সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। গত এক দশকে আমাদের দুই পক্ষের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ অবস্থানে গেছে। আগামীদিনে আমাদের সম্পর্ক কীভাবে জনগণকেন্দ্রিক হবে তা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের দুই দেশের সহযোগিতার অবস্থান থেকে দুই দেশের জনগণ কীভাবে উপকৃত হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করেছি।'

ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, 'আমাদের সহযোগিতার কারণে দুই পক্ষের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটেছে। ২০২৩ সালে আমরা অনেক ইতিবাচক কাজ করেছি। এ সময়ে আমরা অনেক বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। যেগুলোর মধ্যে-জ্বালানি পাইপ লাইন, বিদু্যৎ প্রকল্প, ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম, এসব বিষয় নিয়ে আমরা গত বছর কাজ করেছি।'

প্রণয় ভার্মা বলেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা নতুন একটি যাত্রা শুরু করেছি, যেটি ছিল ভারত-বাংলাদেশ স্টার্টআপ। ভবিষ্যতে আমরা কী কী করতে পারি, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। যেমন- জলবায়ু ইসু্য। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী '৪১ সালের মধ্যে যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চান, সেখানে আমরা সহযোগিতা করতে পারি।'

নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে ভারতীয় দূত বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি, নতুন সরকারের সময়ে আমাদের সম্পর্কের আরও উন্নতি ঘটাব। বাংলাদেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে আমরা পাশে থাকব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে