বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, বিগত ১৫ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার ভিত্তি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সব ক্ষেত্রেই সেটা করা হয়েছে। স্থায়ীয় শিল্পের উন্নয়ন দারুণভাবে বাধাগ্রস্থ করা হয়েছে। বাজারের স্বাভাবিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা নষ্ট করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে 'বাংলাদেশে প্রতিযোগিতা নীতিঃ সম্ভাবনা, প্রতিবন্ধকতা এবং এগিয়ে যাওয়ার পথ' শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ঐ পরিস্থির পরে আমরা ক্ষমতা নিয়ে প্রচুর চ্যালেঞ্জের মূখে পড়েছিলাম। কিন্তু বেশ কিছু ভালো পদক্ষেপে এখন দেশের রেমিটেন্স ও রপ্তানিতে সুদিন এসেছে। ধীরে ধীরে অন্যান্য ক্ষেত্রেও সফলতা আসছে।
তিনি বলেন, আমরা যেটা দেখেছি পনেরো বছরে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ফলে আমাদের অর্থনীতিতে বেশ কিছু ক্রনিজ (ঘনিষ্ট বন্ধু দল) তৈরি হয়েছে। সম্পদের অসম্ভব রকম অসম বন্টন তৈরি হয়েছে এবং এ অসম বন্টন এমন কিছু ক্রনিজ তৈরি করেছে যারা মার্কেটে নতুন প্রতিযোগিকে প্রবেশে বাধাগ্রস্ত করছে।
এ সময় তিনি প্রতিযোগিতা কমিশনের প্রসঙ্গে বলেন, অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো প্রতিযোগিতা কমিশনের সক্ষমতাও ধ্বংস করা হয়েছিল। যে কারণে সাধারণ মানুষ এর খুববেশি সুফল পায়নি। দেশের মানুষ তাদের প্রত্যহিক জীবনে প্রতিযোগিতার সুফল দেখতে চায়। এ কমিশনকে সে জায়গায় নিয়ে যেতে হবে।
বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, অনেক অসাধু প্রতিষ্ঠান বাজারে যোগসূত্র তৈরী করে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। প্রতিযোগিদের দমিয়ে রাখতে প্রয়োজনে কম দামে পণ্য বিক্রি করে তাদের ধ্বংস করছে। প্রতিযোগিতা কমিশনকে দোষীদের শাস্তি দিতে হবে।
আবার যারা ভোক্তাদের জিম্মি করে, সরকারকে ভ্যাট-টাক্স ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে উপার্জন করছে তাদের বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ দরকার। ব্যবসায়ীদেরও দেশের প্রতি দায়িত্ববান হতে হবে। বাজারে সুষ্ঠ প্রতিযোগিতার চর্চা ও দেশের সম্পদের সুষ্ঠ বন্টন করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) যৌথভাবে এ সেমিনার আয়োজন করে।সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিচার্স এন্ড পলিসি ইন্টিগ্রেসন কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) এর চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) পরিচালক ড. এ কে এনামুল হক, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য (আইন) ড. আফরোজা বিলকিস, ফরেন কমনওয়েলথ এন্ড ডেভলপমেন্ট অফিসের ইকনোমিক অ্যাডভাইজর ইসাম মোসাদ্দেক এবং
প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান ও ইউএনডিপি বাংলাদেশ এর উপ আবাসিক প্রতিনিধি মিজ সোনালী দয়ারাত্নে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ৫ /৬টি প্রতিষ্ঠান একই উৎস থেকে পন্য ক্রয় করে এবং বাজারজাত করে। তাদের খরচ ও মোটামুটি একই রকম হওয়ায় বাজারে খুব বেশি প্রতিযোগিতা দেখা যায় না। বর্তমান সরকার বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিযোগিতা কমিশন শুধু কোম্পানিগুলোকে জরিমানা করে না, সুরক্ষাও দেয়। ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান যারা বাজারে অসম প্রতিযোগিতায় পড়ছে, তাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। গুটিকয়েক কোম্পানি সিন্ডিকেট ভেঙে সব কোম্পানিকে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।