শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আশা জাগাচ্ছে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান

২০১২ সালে ভারতের সঙ্গে ও ২০১৪ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। এতে চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সমুদ্রের তলদেশের সব প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়
ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম
  ১২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তীব্র গ্যাস সংকট মোকাবিলা করছে দেশ। এর মধ্যেও জ্বালানি সংকট নিরসনে নিদারুণ আশা জাগাচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি পেট্রোবাংলা। ইতোমধ্যে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে অবস্থিত শাহাজাদপুর-সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্র আশার আলো আরও উজ্জ্বল করেছে।

এই গ্যাস ক্ষেত্রের খননকাজ শেষ হয়ে এখন চলছে ডিএসটি টেস্টের কাজ। প্রাথমিকভাবে কূপটির তিনটি জোনে গ্যাসের অস্তিত্ব মিলেছে। শুধু তাই নয়, পেট্রোবাংলা ইতোমধ্যে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে। যা জ্বালানি খাতকে সম্ভাবনার আলো দেখাচ্ছে।

পেট্রোবাংলার সূত্র মতে, বঙ্গোপসাগরের ২৪টি বস্নকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ৫৫টি আন্তর্জাতিক কোম্পানিকে আহ্বান জানানো হয়েছে। দরপত্র জমা দেওয়ার জন্য ছয় মাস সময় পাবে দরদাতারা। একই দিনেই দূতাবাসগুলোতে চিঠি দিয়ে দরপত্রের বিষয়ে জানানোর কথা রয়েছে পেট্রোবাংলার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, কপ-২৬-এ ধীরে ধীরে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে সবুজ জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে বাংলাদেশ। সেই রূপান্তরকে মসৃণ করার জন্য আরও দুই দশক প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির প্রয়োজন দেশের। এ পরিস্থিতিতে গ্যাস হাইড্রেট আবিষ্কার বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।

আবার গ্যাস সরবরাহের ঘাটতি পূরণে শিল্প ও বিদু্যৎ উৎপাদন চলমান রাখতে বাংলাদেশ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করছে। এ কারণে গভীর সমুদ্রে তেল ও গ্যাস খোঁজা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে পেট্রোবাংলা আলাদা আটটি ডাটা প্যাকেজ তৈরি করেছে। যেগুলো কিনে আমাদের বস্নকগুলো সম্পর্কে তথ্য পাবে আগ্রহী কোম্পানিগুলো।

পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, ২০১২ সালে ভারতের সঙ্গে ও ২০১৪ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হয় বাংলাদেশের। এতে চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সমুদ্রের তলদেশের সব প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের পর বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

যেখানে গভীর সমুদ্রে ১৫টি ও অগভীর সমুদ্রে ১১টি বস্নক আছে। এসব বস্নকে দেশের প্রায় ১০০ বছরের গ্যাস মজুত রয়েছে ধারণা করা হচ্ছে। অথচ সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ।

তবে ২০১০ সালে গভীর সাগরে ডিএস-১০ ও ডিএস-১১ বস্নকে কাজ করতে আগ্রহ দেখায় কনোকো ফিলিপস। তারা দু'টি জরিপ শেষে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি করে। সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় কাজ ছেড়ে চলে যায়। এ ছাড়া চুক্তির পর কাজ ছেড়ে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ার স্যান্তোস ও দক্ষিণ কোরিয়ার পস্কো দাইয়ু।

এরপর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সর্বশেষ দরপত্র ডাকা হয়েছিল ২০১৬ সালে। ২০১৯ সালে নতুন উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) করা হলেও দরপত্র ডাকা হয়নি। প্রায় চার বছর পর গত বছরের জুলাইয়ে নতুন পিএসসি চূড়ান্ত অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। এখন একমাত্র কোম্পানি হিসেবে অগভীর সমুদ্রের দু'টি বস্নকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে ভারতের কোম্পানি ওএনজিসি। এ দু'টি বাদ দিয়ে বাকি ২৪টি বস্নকে দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে।

এর আগে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে বঙ্গোপসাগরে অনুসন্ধান চালানোর জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। সেই দরপত্রে নয়টি বস্নকের জন্য বিদেশি কোম্পানিগুলো কাজ করার আগ্রহ দেখালেও শেষ পর্যন্ত তিনটি বস্নক ইজারা নিয়েছিল আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেল কোম্পানিগুলো। এর মধ্যে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী কোম্পানি ওএনজিসি এসএস ৪ ও ৯ নম্বর বস্নক ইজারা নিয়েছিল। আর অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান সান্তোস ইজারা নিয়েছিল ১১ নম্বর বস্নক। তবে সে প্রক্রিয়া থেকে ইতিবাচক কোনো ফল পাওয়া যায়নি।

এছাড়া গত বছর দরপত্র ছাড়া সাগরের তলদেশে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য পেট্রোবাংলাকে চিঠি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এক্সন মবিল। এ নিয়ে কয়েক দফা আলোচনাও হয়। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আলোচনা আর এগোয়নি। এখন নতুন সরকার গঠনের পর আবার আলোচনা করতে সম্প্রতি ঢাকায় আসে এক্সন মবিলের একটি প্রতিনিধি দল। কিন্তু এবার তাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে না দিয়ে তাদের দরপত্রে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

এদিকে সীমানা নিষ্পত্তির পর গভীর সমুদ্রে জ্বালানি অনুসন্ধানের চেয়েও আমদানিনির্ভর জ্বালানি নীতি বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে গভীর বঙ্গোপসাগরে নিজ সীমানায় অনুসন্ধান চালিয়ে এরই মধ্যে বড় সাফল্য পেয়েছে ভারত ও মিয়ানমার। চলতি বছরের শুরুতে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে গভীর সাগরে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের বড় মজুত আবিষ্কার করেছে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস করপোরেশন লিমিটেড (ওএনজিসি)। খনিটি থেকে দৈনিক ৪৫ হাজার ব্যারেল জ্বালানি তেল এবং ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। খনিটি থেকে উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হলে দেশটির শুধু জ্বালানি তেল আমদানি বাবদ অর্থ সাশ্রয় হবে ১০ হাজার কোটি রুপির মতো।

আরেক প্রতিবেশী মিয়ানমারও এরই মধ্যে গভীর সাগরে অনুসন্ধান চালিয়ে বড় সাফল্যের দেখা পেয়েছে। বাংলাদেশের সীমানার নিকটবর্তী এলাকার মিয়া ও শোয়ে নামে দু'টি গ্যাসকূপ থেকে এরই মধ্যে কয়েক ট্রিলিয়ন গ্যাস উত্তোলন করে ফেলেছে দেশটি। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে এ গ্যাস তারা এখন চীনেও রপ্তানি করছে।

২০১২ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হয় মিয়ানমারের। এরপর ২০১৩ সালে এখান থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে দেশটি। এরপর ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তি হয় ২০১৪ সালে। এরই মধ্যে এ নিষ্পত্তিরও ১০ বছর পেরিয়েছে। দীর্ঘ এ সময়ের মধ্যে গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধানে কোনো সাফল্যেরই দেখা পায়নি বাংলাদেশ।

এদিকে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ২০২৩ সালে মডেল পিএসসির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় সরকার। সংশোধিত এ মডেল চুক্তি অনুযায়ী, সাগরে গ্যাস পাওয়া গেলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের ১০ শতাংশ ধরে সরকার প্রতি ইউনিট গ্যাস কিনবে।

সংশোধিত মডেল পিএসসিতে দামের পাশাপাশি সরকারের শেয়ারের অনুপাতও নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এর আগে মডেল পিএসসি-২০১৯-এ বলা হয়েছিল, গ্যাসের উত্তোলন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এতে বাংলাদেশের শেয়ার অনুপাতও বাড়তে থাকবে। আর কমতে থাকবে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার।

এবারের সংশোধীত মডেল পিএসসি চুক্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের হিস্যা গভীর সমুদ্রে ৩৫ থেকে ৬০ শতাংশ এবং অগভীর সমুদ্রে ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামা করবে। তবে ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ের দুই বছরের মধ্যে কূপ খনন করে গ্যাস না পেলে বা বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য না হলে শর্তসাপেক্ষে যথাক্রমে ১ ও ২ শতাংশ হিস্যা বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে।

এবার পিএসসিতে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করতে নীতিমালায় বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগের গ্যাসের দাম নির্দিষ্ট রাখা হলেও আবার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিলিয়ে দাম ঠিক করা হবে। এদিকে পিএসসি-২০১৯ অনুযায়ী গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশের শেয়ারের অনুপাত বাড়তে থাকবে। আর কমতে থাকবে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার। গভীর সমুদ্রে ৩৫ থেকে ৬০ শতাংশ এবং অগভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের শেয়ার ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামা করবে। তবে আগের মতো কোম্পানি যদি গ্যাস বিক্রি করতে চায়, তাহলে প্রথমে পেট্রোবাংলাকে প্রস্তাব দিতে হবে, পেট্রোবাংলা নিতে না চাইলে তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির সুযোগ পাবে বিদেশি কোম্পানি।

ফুরিয়ে আসছে গ্যাস

দেশের গ্যাস মজুত ফুরিয়ে আসছে, যা নিয়ে কয়েক বছর ধরেই আলোচনা হচ্ছে। তবে মজুত কতটা আছে, কতদিন চলবে, মজুত ফুরিয়ে গেলে বিকল্প কী হবে এসব বিষয় নিয়ে তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই বললেই চলে।

জ্বালানি বিভাগের অধীন হাইড্রো কার্বন ইউনিটের তথ্যমতে, দেশে উত্তোলনযোগ্য গ্যাস মজুতের পরিমাণ ২৯ দশমিক ৯২৬৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। এর মধ্যে গত বছর জুন পর্যন্ত উত্তোলন করা হয়েছে ২০ দশমিক ৩৫৩৪ টিসিএফ, যা মজুতের ৬৮ শতাংশ। ওই সময় দেশে অবশিষ্ট গ্যাস মজুত ছিল ৯ দশমিক ৫৭৩১ টিসিএফ বা ৩২ শতাংশ। যদিও অবশিষ্ট মজুত থেকে কিছু গ্যাস উত্তোলন করা যাবে না। কারণ চাপ কমে এলে প্রতি ফিল্ডেই কিছু গ্যাস উত্তোলন করা যায় না।

তথ্যমতে, কয়েক বছর ধরে দেশে সবচেয়ে বেশি গ্যাস সরবরাহ করছে মার্কিন কোম্পানি শেভরন। কোম্পানিটির অধীন তিনটি ক্ষেত্রে গ্যাস মজুত ছিল ৭ দশমিক ৬১২৭ টিসিএফ। এর মধ্যে ৭ দশমিক ৫৪২৩ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়ে গেছে। অর্থাৎ শেভরনের অধীন ক্ষেত্রগুলো থেকে ৯৯ শতাংশের বেশি গ্যাস মজুত শেষ। বর্তমানে কোম্পানিটির অধীন জালালাবাদ ক্ষেত্রে কোনো গ্যাস মজুত নেই। আর মৌলভীবাজার ও বিবিয়ানায় সামান্য গ্যাস মজুত রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় গ্রিডে স্থানীয় গ্যাস সরবরাহের অর্ধেকেরও বেশি আসছে শেভরনের ক্ষেত্রগুলো থেকে। তবে কয়েক বছর ধরে এগুলো থেকে বাড়তি গ্যাস সরবরাহের কারণে তাদের মজুত ফুরিয়ে এসেছে। যদিও দেশে গ্যাস মজুতের অর্ধেকেরও বেশি আছে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর পরিচালনাধীন গ্যাসক্ষেত্রে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোম্পানিগুলো সরবরাহ সেভাবে বাড়াতে পারেনি। দেশে গ্যাসের চাহিদা যেভাবে বাড়ছে, তাতে এখনই স্থানীয় সরবরাহের বিকল্প চ্যানেল বা সরবরাহ লাইন তৈরি করা না গেলে অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে গ্যাস খাত।

এদিকে পরিমাণের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের ক্ষেত্রগুলো থেকে। এ কোম্পানির অধীনে ছয়টি ক্ষেত্রে মজুত ছিল ১২ দশমিক ২৫২০ টিসিএফ গ্যাস। এর মধ্যে উত্তোলন করা হয়েছে ৯ দশমিক ২৫০২ টিসিএফ বা ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর অবশিষ্ট রয়েছে তিন টিসিএফের কিছুটা বেশি গ্যাস।

উত্তোলনের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি। এ কোম্পানির অধীনে পাঁচটি ক্ষেত্রে গ্যাস মজুত ছিল সাত দশমিক ০৩৩ টিসিএফ। এর মধ্যে উত্তোলন করা হয়েছে মাত্র এক দশমিক ৮৫৫৯ টিসিএফ বা ২৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর অবশিষ্ট রয়েছে ৫ দশমিক ১৭৭১ টিসিএফ গ্যাস।

হাইড্রো কার্বন ইউনিটের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে সর্বোচ্চ গ্যাস মজুত রয়েছে রশিদপুর, তিতাস ও কৈলাসটিলায়। এ তিন ক্ষেত্রে গ্যাস মজুতের পরিমাণ যথাক্রমে ২ দশমিক ৪৩১৫ টিসিএফ, ২ দশমিক ২৫৬৭ টিসিএফ ও ২ দশমিক ০৮৩৯ টিসিএফ। এর মধ্যে তিতাস বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডসের অধীনে এবং রশিদপুর ও কৈলাসটিলা সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের অধীনে রয়েছে।

এ তিনটি ক্ষেত্রের বাইরে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডসের অধীন বাখরাবাদে শূন্য দশমিক ৫১৫১ টিসিএফ, সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের অধীনে ছাতক গ্যাস ক্ষেত্রে শূন্য দশমিক ৪৪৮২ টিসিএফ গ্যাস রয়েছে এবং বাপেক্সের অধীন সেমুতাং গ্যাস ক্ষেত্রে শূন্য দশমিক ৩০৩৭ টিসিএফ গ্যাস মজুত রয়েছে। তবে অন্যান্য গ্যাস ক্ষেত্রে মজুতের পরিমাণ শূন্য দশমিক দুই টিসিএফেরও কম।

তথ্যমতে, বর্তমানে বাপেক্সের অধীনে গ্যাস ক্ষেত্র রয়েছে আটটি। এগুলোয় গ্যাস মজুত ছিল ১ দশমিক ৪৬০৮ টিসিএফ, যার মধ্যে শূন্য দশমিক ৬০৬৬ টিসিএফ উত্তোলন করা হয়েছে। আর অবশিষ্ট রয়েছে শূন্য দশমিক ৯০০২ টিসিএফ। বহুজাতিক তালেস্নার অধীন রয়েছে একটি গ্যাস ক্ষেত্র। এতে মজুত ছিল শূন্য দশমিক ৬২১ টিসিএফ। এর মধ্যে উত্তোলন করা হয়েছে শূন্য দশমিক ৫৪৬০ টিসিএফ এবং মজুত রয়েছে শূন্য দশমিক ০৭৫ টিসিএফ।

অন্যদিকে বহুজাতিক কোম্পানি সান্তোস ও নাইকো বর্তমানে কোনো গ্যাস সরবরাহ করছে না। এ দুই কোম্পানির অধীনে দু'টি গ্যাস ক্ষেত্র ছিল। ওই দুই ক্ষেত্র থেকে যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৪৮৯৫ টিসিএফ ও শূন্য দশমিক ০৬৩ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছিল। বর্তমানে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক গড়ে প্রায় ২ হাজার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। এ বিবেচনায় অবশিষ্ট মজুত গ্যাস দিয়ে প্রায় ১১ বছর চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। এছাড়া নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের বিভিন্ন কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) থেকে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে সদ্য বদলি হওয়া জিএম (মার্কেটিং) গৌতম কুন্ড বলেন, দেশে এখন গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। এর মধ্যে বঙ্গোসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বাংলাদেশ উদ্যোগ নিতে পেরেছে, সেটা অবশ্যই ইতিবাচক। যদিও আরও আগেই দরপত্র আহ্বানের কাজটি করা জরুরি ছিল।

দরপত্রে বিদেশি কোম্পানিকে আকৃষ্ট করা গেলে দেশের জ্বালানি খাতের জন্য ভালো কিছু হবে। কারণ মিয়ানমার ও ভারত আমাদের সমুদ্রসীমার কাছে গ্যাস পেয়েছে। আমাদের সীমানায়ও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অথচ বঙ্গোপসাগরের সম্পদ আহরণ ও ব্যবহার এখনো আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছি। তবে আশার কথা বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণা চলমান থাকায় সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আব্দুল মান্নান পাটওয়ারী বলেন, শুধু তেল-গ্যাস নয়, শিল্পক্ষেত্রে বাংলাদেশে পাওয়া নির্দিষ্ট প্রজাতির কিছু সি-উইডের পাঁচটি প্রয়োগও চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো মাছের খাদ্য, পশুখাদ্য, ফুড অ্যাডিটিভ, প্রসাধনী উপাদান এবং হাই ভ্যালু প্রসাধনী উপাদান। অর্থাৎ আগামীতে টিকে থাকার জন্য সামুদ্রিক অর্থনীতিই হবে মূল কেন্দ্র। সঙ্গত কারণেই বিনিয়োগ ও উন্নত প্রযুক্তির ওপর জোর দিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে