রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
ইডিএফ বিজ্ঞানীদের গবেষণা

জীবাশ্ম জ্বালানির চেয়ে ক্ষতি বেশি বস্নু হাইড্রোজেনে!

যাযাদি ডেস্ক
  ১৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

বিজ্ঞানীদের গবেষণা বলছে, যে বস্নু হাইড্রোজেনকে অনেকে কার্বনমুক্ত কিংবা কম কার্বনযুক্ত 'পরিচ্ছন্ন' জ্বালানির তালিকায় ফেলতে চেষ্টা করছেন, সেই বস্নু হাইড্রোজেনে পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি এখনকার প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানির চেয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশও বেশি হতে পারে। আর বিজ্ঞানীদের এই ভাষ্য কার্বন নিঃসরণকারী জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে বস্নু হাইড্রোজেনকে ঘিরে প্রচলিত ধারণাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্স ফান্ড (ইডিএফ) বিজ্ঞানীদের এক গবেষণায় এমনটাই উঠে এসেছে।

গবেষকরা জানাচ্ছেন, বস্নু হাইড্রোজেন হচ্ছে সেই হাইড্রোজেন, জীবাশ্ম জ্বালানিতে উৎপাদিত বিদু্যতের সাহায্যে কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে যেই হাইড্রোজেনকে আলাদা করা হয়। পরে বিদু্যৎ উৎপাদনে এই হাইড্রোজেনকেই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এতে কার্বনের পরমাণু না থাকায় এই বস্নু হাইড্রোজেনের ধারণা অনেকের কাছেই পরিবেশবান্ধব হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

ইডিএফ প্রথমবারের মতো হাইড্রোজেনের উৎপাদন থেকে শুরু করে এর সর্বশেষ ব্যবহার পর্যন্ত পুরো জীবনচক্র নিয়ে বিস্তৃত

গবেষণা করেছে। সেখানে তারা হাইড্রোজেনকেন্দ্রিক পুরো সরবরাহ প্রক্রিয়ায় হাইড্রোজেন ও মিথেনের নিঃসরণ নিকট ভবিষ্যতে বৈশ্বিক উষ্ণতার ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে তার ওপর আলোকপাত করেছে। এখন যে প্রক্রিয়ায় দূষণ হিসেব করা হয় তাতে যে বড় ধরনের ফাঁকি থেকে যাচ্ছে, তাদের গবেষণাতে সেটাই উঠে এসেছে।

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের সরকার এখন কোনোটা দূষণমুক্ত 'পরিচ্ছন্ন' হাইড্রোজেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্তের দোলাচলে আছে। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এ বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন। তাদের ভাষ্য হচ্ছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি দিয়ে বানানো গ্রিন হাইড্রোজেনকেই কেবল 'পরিচ্ছন্ন' বলা যেতে পারে, বস্নু হাইড্রোজেনকে নয়। গত বছরের ডিসেম্বরেও বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন কপের ২৮তম আসরে জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহারের প্রসঙ্গ উঠেছিল। সেখানে হাইড্রোজেনের দূষণ বের করতে আইএসও প্রক্রিয়া অনুরসরণের যে ঘোষণা এসেছে, তাতেও বস্নু হাইড্রোজেন ব্যবহারে দূষণের পুরো চিত্র হাজির করা না হলে তাতে যে সমূহ বিপদ হতে পারে সে ব্যাপারে দুশ্চিন্তার কথা প্রকাশ পেয়েছিল।

দেশি-বিদেশি অনেক গবেষকের যুক্তি, বস্নু হাইড্রোজেন হচ্ছে 'ফলস সলু্যশন', যা কোনোভাবেই পরিবেশের জন্য উপকারী হতে পারে না। এই বস্নু হাইড্রোজেন উৎপাদন, সরবরাহ ও ব্যবহার প্রক্রিয়া যে এখনো অপরীক্ষিত, মোটেও দূষণ কমায় না এবং খুবই খরুচে।

ইডিএফের গবেষণাও বলছে, কথিত 'জলবায়ু বান্ধব' বিকল্প বস্নু হাইড্রোজেন, যেটি উৎপাদনে আংশিক কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ প্রযুক্তি (এই প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ুমন্ডলে প্রবেশের আগেই তাকে আটকানো যাবে বলে দাবি করা হচ্ছে) ব্যবহৃত হয়, সেই বস্নু হাইড্রোজেনের উৎপাদন থেকে শুরু করে ব্যবহার পর্যন্ত যে পরিমাণ হাইড্রোজেন ও মিথেন বায়ুমন্ডলে যাবে, তা নিকট ভবিষ্যতে জীবাশ্ব জ্বালানির কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা যতটা হবে, তার তুলনায় বিশ্বকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি উষ্ণ করতে পারে।

ফেব্রম্নয়ারিতে প্রকাশিত ইডিএফের গবেষণা প্রতিবেদনের মূল লেখক তিয়ানি সানও জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহারে জলবায়ুর যে অভাবনীয় প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে তা নিরসনে বায়ুমন্ডলে ক্ষতিকর গ্যাসের নিঃসরণের হিসাব ঠিকঠাক করার ওপর জোর দিয়েছেন। তাদের গবেষণায় জলবায়ু পরিস্থিতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি লাভ নিতে গ্রিন হাউড্রোজেন উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির শক্তিশালী অবকাঠামো নির্মাণে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে