সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জানুয়ারিতে চালু হতে পারে যমুনার ওপর রেলসেতু

সিবিআইএস সংকেত যুক্ত না হওয়ায় শুরুতে পূর্ণ গতি পাচ্ছে না ট্রেন
জোবায়েদ মলিস্নক বুলবুল, টাঙ্গাইল
  ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
জানুয়ারিতে চালু হতে পারে যমুনার ওপর রেলসেতু
জানুয়ারিতে চালু হতে পারে যমুনার ওপর রেলসেতু

চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষভাগে অথবা আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যমুনা নদীর ওপর নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। তবে আধুনিক কম্পিউটার ভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা বা কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম (সিবিআইএস) চালু হচ্ছে না শুরুর দিকে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে প্রথমদিকে সেতুতে পূর্ণ গতি (১২০ কিমি) পাচ্ছে না ট্রেন। তবে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে এই সিস্টেম চালু সম্ভব হবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ডবিস্নউডি-১ ও ডবিস্নউডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে পাঁচটি জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সেতুর উভয় প্রান্তের দুই স্টেশনে ডবিস্নউডি-৩ নামে অপর একটি প্যাকেজের আওতায় সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনের কাজ করা হচ্ছে। সিবিআইএস চালু করার কাজে জাপানি বহুজাতিক শিল্প প্রতিষ্ঠান হিটাচির সহায়তা নিচ্ছে রেলওয়ে। ভারতে হিটাচির পণ্য উৎপাদন কারখানা থাকায় জাপানি ঠিকাদাররা সেখান থেকেই পণ্য আমদানি করছিলেন। ঠিকাদাররা সম্প্রতি সেখান থেকে পণ্য আমদানি করতে কিছু জটিলতায় পড়েছেন। প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর ওই জটিলতা নিরসনে রেলওয়ে ঠিকাদারদের তাগিদ দেওয়া অব্যাহত রেখেছে।

1

রেল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর ৩০০ মিটার উত্তরে সমান্তরালভাবে নিমাণাধীন প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতুর জন্য সাড়ে ৭ কিলোমিটারের বেশি রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ, সাইডিংসহ ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের আগস্টের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পের সময়সীমা সংশোধন করে তা ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহেই সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে।

রেলওয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে যমুনার ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুতে যে মিটারগেজ রেললাইন রয়েছে- তাতে সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ৭০ কিলো-নিউটন/মিটার ওজন বহন করা সম্ভব। তাই ট্রেনে বেশি বগি যুক্ত করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এক লাইনের সীমাবদ্ধতা থাকায় বেশি ট্রেন চালানোও সম্ভব নয়। মাত্র ২০ কিলোমিটার গতিতে প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু পার হতে ২৫ মিনিট লেগে যায়। দুই পাশের স্টেশনে সিগন্যালের জন্য ট্রেনগুলোকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। সব মিলিয়ে মাত্র ৫ কিলোমিটার পাড়ি দিতে লাগে এক ঘণ্টার বেশি সময়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু উদ্বোধন হলে এ রুটে গড়ে সময় বাঁচবে এক ঘণ্টা। ক্রসিংয়েও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর এই রেল সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বলেন, 'নতুন এই রেলসেতু দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও সিবিআইএসের কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৪০-৪২ শতাংশ। এ পদ্ধতি চালু করতে আগামী ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তায় সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর আরও দু-তিন মাস লাগতে পারে।'

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা চালু না হলে ট্রেনের গতি কমে সময়ের অপচয় হওয়া ছাড়াও নিরাপত্তায় ঘাটতি থাকবে। এ থেকে জটের আশঙ্কাও রয়েছে। পুরনো নন-ইন্টারলিঙ্ক ব্যবস্থা যতদিন চালু থাকবে- ততদিন নতুন সেতুতে ট্রেনের গড় গতিসীমা অনেক কম থাকবে। এ ব্যবস্থায় ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে গেলে সূচি বিপর্যয় ঘটবে।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান জানান, কম্পিউটারভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা বা কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম (সিবিআইএস) চালু না হলে পশ্চিমাঞ্চলের রেলপথে নিরাপত্তাগত শঙ্কা থেকে যাবে।

প্রকল্প সূত্রমতে, নকশা অনুযায়ী সেতু নির্মাণের জন্য ৫০টি পিয়ার ও ৪৯টি স্প্যানের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেতুর দুই দিকে বাঁধ নির্মাণের কাজও শেষ। সেতুর ওপর রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এখন ১ থেকে ২৩ নম্বর পিয়ারের মাঝের অংশে লাইনের খুঁটিনাটি কিছু কারিগরি কাজ চলছে। সেতুর পূর্ব স্টেশন ভবন, পস্ন্যাটফর্ম, পস্ন্যাটফর্ম শেড, পার্কিং এরিয়া, অন্য পূর্তসংক্রান্ত নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। পশ্চিম প্রান্তে এসব কাজের ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। উভয় প্রান্তে সিগন্যালিং ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার কাজের অগ্রগতি ৪৫-৪৭ শতাংশ। যমুনা বহুমুখী সেতু দিয়ে বর্তমানে দিনে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে। নতুন রেলসেতু চালুর পর আন্তঃনগর, লোকাল, কমিউটার, মালবাহী ট্রেনসহ ৮৮টি রেল চালানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে।

এ সেতুর বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী জানান, সিবিআইএস চালুর বিষয়টি প্রকল্প পরিচালক ভালো বলতে পারবেন। তবে এটা প্রকল্পের সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। দেরি হলেও ১৫ দিন থেকে ১ মাসের বেশি সময় লাগবে না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুর উদ্বোধন হলে নতুন ট্রেন এ রুটে যুক্ত করা হবে কি না জানতে চাইলে মহাপরিচালক জানান, ঢাকার সঙ্গে ওই অঞ্চলে নতুন ট্রেন যুক্ত করা কঠিন হয়ে যাবে। থার্ড বা ফোর্থ লাইন চালু না হলে নতুন ট্রেনের ক্যাপাসিটি তৈরি হবে না। নতুন ট্রেন এলেও জয়দেবপুর বা টঙ্গী পর্যন্ত চালানো যেতে পারে। এতে পুরোপুরি সুফল আসবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে