শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২
অবসর ও কল্যাণ সুবিধা

আর কত অপেক্ষা অবসরে যাওয়া ৩৮ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর?

আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজন প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা
মন্তোষ চক্রবর্তী
  ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আর কত অপেক্ষা অবসরে যাওয়া ৩৮ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর?

রাজধানীর পলাশী-নীলক্ষেত এলাকায় বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান বু্যরো (ব্যানবেইস) ভবনে বৃহস্পতিবার সানজানা রহমান নামে এক নারীর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার নোয়ানগর ডিগ্রি কলেজের আবুল কামালের নাতনি। সানজানা এসেছেন ওই ভবনে অবস্থিত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট এবং অবসর সুবিধা বোর্ডে। তিনি জানান, তার নানা অবসরের সুবিধার জন্য আবেদন করেছেন ২০২৩ সালের ৫ মার্চ। কিন্তু এতদিনেও অবসর সুবিধার টাকা তারা পাননি।

ব্যানবেইস ভবনের নিচতলায় কথা হয় ফয়জুনেছার সঙ্গে। তিনি জানান, তার স্বামী ঢাকা মোহাম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসা সহকারী সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত বছর হঠাৎ স্ট্রোক করে মারা যান। অবসর সুবিধা নিতে আবেদন করা হয়েছে। কাজ সফল হচ্ছে, কিন্তু তিনি ঘুরছেন। তিনি বলেন, স্বামী থাকা অবস্থায় সংসারের চিন্তা করতে হতো না। আগে জুরাইনে বাসা নিয়ে থাকতেন তারা। স্বামী মারা যাওয়ার পর ছোট একটি মেয়ে নিয়ে সংসার চালানো কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। তাই ঢাকা ছেড়ে চাঁদপুরে বাবার বাসায় থাকতে হচ্ছে। কিন্তু এখনো নিজের পাওনা টাকা পাচ্ছেন না বলে অনেক কষ্ট করে চলতে হচ্ছে তাদের।

কেবল সানজানা অথবা ফয়জুনেছা নয়, আবেদন করে বেসরকারি বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার প্রায় ৩৮ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা পাচ্ছেন না। কর্মজীবনের শেষে নিজের প্রাপ্য টাকা না পাওয়ায় নিদারুণ কষ্টে ভুগছেন মানুষ গড়ার এসব কারিগর। তাদের এখন একটাই প্রশ্ন- এই সুবিধা কবে পাবেন?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আর্থিক সংকটে ভুগছেন বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। এর মধ্যে অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে, কষ্ট ও ভোগান্তি বাড়ছে তাদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সারাদেশে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী আছেন পাঁচ লাখের বেশি। এসব শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর ও কল্যাণ সুবিধা দেওয়া হয় দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এর মধ্যে কল্যাণ সুবিধার টাকা দেওয়া হয় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে। আর অবসর সুবিধার টাকা দেওয়া হয় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের মাধ্যমে।

নিয়মানুযায়ী, অবসরের পরপরই অবসর ও কল্যাণ সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষক-কর্মচারীদের বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। এতে করে অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।

অবসর সুবিধা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ৩৮ হাজার বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী আবেদন করে অবসর ভাতা ও কল্যাণ ট্রাস্ট পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। এর মধ্যে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জমা দেওয়া আবেদনগুলোর নিরীক্ষা (অডিট) নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বর্তমানে ২০২২ সালের তালিকা চলমান কিন্তু বরাদ্দের অভাবে টাকা দেওয়া যাচ্ছে না।

অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকার বড় একটি অংশ নেওয়া হয় শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকেই। এ জন্য চাকরিকালীন তাদের মূল বেতনের ৬ শতাংশ টাকা মাসে কেটে রাখা হয়। কল্যাণ সুবিধার জন্য কাটা হয় মূল বেতনের ৪ শতাংশ। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে ১০০ টাকা (৭০ টাকা অবসরের জন্য ও ৩০ টাকা কল্যাণের জন্য) নেওয়া হচ্ছে। বাকি টাকা সরকার ও চাঁদা জমার সুদ থেকে সমন্বয় করে দেওয়া হয়।

এদিকে নিয়মিতভাবে এই তহবিলে সরকারিভাবে কোনো বাজেট না দেওয়ার কারণে সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে একাধিক ভুক্তভোগী জানান।

অবসর সুবিধা বোর্ড (ঢাকা) পরিচালক অধ্যাপক মো. জাফর আহম্মদ যায়যায়দিনকে বলেন, 'প্রতি মাসে গড়ে অবসর সুবিধার জন্য আবেদন জমা পড়ে এক হাজার। বর্তমানে জমা হওয়া ৩৮ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজন প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।'

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) নুজহাত ইয়াসমিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, 'উনারা তো বেসরকারি। এটি একটি আলাদা বিষয়, উনাদের বেতন থেকে ৬ শতাংশ আর বাকিটা সরকার থেকে সিরিয়াল ধরে দেওয়া হয়। সরকার প্রতি বছরই বিভিন্ন (থোক) বরাদ্দ থেকে দিচ্ছে। সবাইকে এক সঙ্গে দিতে গেলে চার হাজার কোটি টাকার মতো লাগে। এত টাকা একসঙ্গে না পাওয়ায় দেরি হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে