শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু

ভেঙে দেওয়া হয়েছে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি, মূল্যায়ন করা হবে যোগ্য ও ত্যাগীদের, তৃণমূল শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করার উদ্যোগ
সন্‌জীব নাথ, চট্টগ্রাম
  ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তৃণমূলে দলকে শক্তিশালী ও নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করে সংগঠনকে আরও গতিশীল করতে শুরু হয়েছে সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। এর অংশ হিসেবে বিলুপ্ত করা হয়েছে নগর বিএনপির আওতাধীন ১৫ থানা ও ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ড কমিটি।

কাউন্সিলের মাধ্যমে সকল থানা ও ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কার্যক্রম চলছে। এরপর অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রাম মহানগরের সম্মেলন। আগামী ৯০ দিনের মধ্যে কাউন্সিল ও সম্মেলনের মাধ্যে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য কেন্দ্র থেকে বিএনপি'র ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

নগর বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ জুলাই এরশাদ উলস্নাহকে আহ্বায়ক ও নাজিমুর রহমানকে সদস্য সচিব করে মাত্র দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এর প্রায় চার মাসের মাথায় গত ৩ নভেম্বর ৫৩ সদস্যে উন্নীত করা হয় এ আহ্বায়ক কমিটি। গত ১৫ নভেম্বর আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভা হয়। এতে নগর বিএনপির আওতাধীন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এর অংশ হিসেবে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্তিরও সিদ্ধান্ত হয়। এরি মধ্যে ২৫ নভেম্বর কেন্দ্র থেকে আহমেদ আযম খানকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি'র পুনর্গঠন প্রক্রিয়া তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ৩ ডিসেম্বর নগরের একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে চট্টগ্রাম নগর বিএনপি। সেখানেই চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি'র আহ্বায়ক এরশাদ উলস্নাহ কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন।

এরশাদ উলস্নাহ জানান, তৃণমূলে দলকে শক্তিশালী ও নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করে সংগঠনকে আরও গতিশীল করতে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে গত ৭ জুলাই দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি এবং পরবর্তীতে ৪ নভেম্বর ৫৩ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের আরও সুসংগঠিত করার জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ ১৫ থানা ও ৪৩ ওয়ার্ডের বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। বিলুপ্ত ঘোষিত থানা ও ওয়ার্ড কমিটির কাজ অতি দ্রম্নত সম্পন্ন করা হবে। বিগত সময়ে রাজপথে অবস্থান নিয়ে দলের আন্দোলন-সংগ্রামে যারা সক্রিয় ছিলেন, যারা যোগ্য, পরীক্ষিত এবং দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন তারাই পরবর্তী থানা ও ওয়ার্ড কমিটির নেতৃত্বে আসবেন। কীভাবে দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া যথাযথভাবে পরিচালনা করা যায় সে ব্যাপারে চট্টগ্রামের সিনিয়র নেতাদেরও মতামত নেয়া হবে।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি'র আহ্বায়ক এরশাদ উলস্নাহ আরও বলেন, গঠনতন্ত্রে ইউনিট কমিটির কথা উলেস্নখ না থাকলেও দলের যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য তৃণমূল থেকে সদস্য সংগ্রহ করা হবে। তাদের মধ্য থেকে কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠন করা হবে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি। এরপর অনুষ্ঠিত হবে নগর কমিটির সম্মেলন। দলকে পরিপূর্ণভাবে সাজানোর জন্য যেসব পদক্ষেপ দরকার সবই নেয়া হবে। দেশের সব এলাকার দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম নগর বিএনপি'র বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে মাত্র কয়েক মাস আগে। তাই চট্টগ্রাম নগরের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ৯০ দিনের আরও কিছু সময় বৃদ্ধির ব্যাপারে চট্টগ্রাম নগর কমিটি পুনর্গঠনের তদারকির দায়িত্বে থাকা দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খানের সাথে আমাদের আলাপ হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগর বিএনপি'র সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান বলেন, সংগঠনকে পুনর্গঠনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কীভাবে দলে আরো যোগ্য নেতৃত্ব আনা যায় সে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এছাড়া দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া আমাদের কিছু আভ্যন্তরীণ পরিকল্পনাও রয়েছে।

উলেস্নখ্য, ২০১৭ সালের ১০ জুলাই ২৭৫ সদস্যের মহানগর বিএনপি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর তৎকালীন সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর নগর বিএনপির ১৪টি থানা ও ৩৮টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটি শুধুমাত্র খুলশী থানা ও ৫টি ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি। সেই ওয়ার্ডগুলো হলো ২১ নম্বর জামাল খান, ২৩ নম্বর উত্তর পাঠানটুলী, ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ, ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ী ও ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডগুলোতে আগের আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছিল।

২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ডা. শাহাদত হোসেনকে আহ্বায়ক ও আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করে ৩৯ সদস্যের নগর কমিটি করা হয়। তাদের তিন মাসের মধ্যে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করার নির্দেশনা ছিল। তারা থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পুর্নগঠনের নির্দেশনা দেয় কেন্দ্র। কিন্তু কয়েক দফা উদ্যোগ নিলেও নানা পরিস্থিতির কারণে পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে