কর্ণফুলী গ্রম্নপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হেদায়েত হোসেন চৌধুরীর দশম মৃতু্যবার্ষিকী আজ। ২০১৪ সালের এইদিনে অনন্য কীর্তিমান এ শিল্পপতি আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীসহ দেশ-বিদেশে অবস্থানরত লাখো অনুরাগী ও শুভানুধ্যায়ীদের কাঁদিয়ে পরপারে পাড়ি জমান। এ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার কর্ণফুলী গ্রম্নপের প্রধান কার্যালয় ঢাকার কাকরাইলস্থ এইচআর ভবনে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
প্রখ্যাত শিক্ষানুরাগী, ভাষাসৈনিক ও সমাজসেবক হেদায়েত হোসেন চৌধুরী ১৯৩১ সালের পহেলা জানুয়ারি ফেনী জেলার দাগনভূইয়া উপজেলার রামনগরের ঐতিহ্যবাহী চৌধুরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শাদাত হোসেন চৌধুরী ব্রিটিশ সরকারের জেলা প্রশাসক ছিলেন। মাতা নূরজাহান চৌধুরানী ছিলেন গৃহিণী। ৭ ভাইবোনের মধ্যে হেদায়েত হোসেন চৌধুরী চতুর্থ। বড় ভাই প্রবাদ প্রতীম সাংবাদিক, সম্পাদক ও কলামিস্ট জহুর হোসেন চৌধুরী। তার দরবার-ই-জহুর কলাম সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক অনন্য দলিল। বড় বোন ইয়াকুত ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ মোজাফফর আহমেদের স্ত্রী। দ্বিতীয় বোন চেমন আরা ইদ্রিস সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম বীরবিক্রমের মা। আরেক ভাই কন্টিনেন্টাল গ্রম্নপের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরী এবং সর্বকনিষ্ঠ ভাই মাহমুদ হোসেন চৌধুরী টিএন্ডটি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান।
হেদায়েত হোসেন চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি এসএম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রম্নয়ারির মিছিলে অংশ নিয়ে তিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
কর্মনিষ্ঠ হেদায়েত হোসেন চৌধুরী কর্মজীবনেও অত্যন্ত সফল ছিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত কর্ণফুলী গ্রম্নপে কর্ণফুলী ইন্ডাস্ট্রিজ ও কর্ণফুলী লিমিটেড ছাড়াও দেশের খ্যাতনামা শিপিং লাইনস হানজিন ও পিআইএলসহ প্রায় দেড় ডজন শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিশিষ্ট এ শিল্পোদ্যোক্তা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান চেম্বারের প্রতিষ্ঠাতা এবং চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
হেদায়েত হোসেন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠপুত্র সাঈদ হোসেন চৌধুরী এইচআরসি শিল্পপরিবারের চেয়ারম্যান এবং দৈনিক যায়যায়দিনের সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি। দ্বিতীয় পুত্র সাদেক হোসেন চৌধুরী মাল্টিড্রাইভ গ্রম্নপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কনিষ্ঠপুত্র সাবের হোসেন চৌধুরী ঢাকা-৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং দেশ টিভির চেয়ারম্যান ও কর্ণফুলী গ্রম্নপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
প্রসঙ্গত, শিল্পোদ্যোক্তা ও সমাজসেবক হেদায়েত হোসেন চৌধুরী ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। সেসময় তার মৃতু্যতে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।
হেদায়েত হোসেন চৌধুরীকে রাজধানীর পরীবাগের 'সাদাত নূর' বাসভবনের বৃক্ষরাজির শীতল ছায়ায় সহধর্মিণীর কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।