বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

বিসিএস :ফি কমলেও আবেদনে ভাটা, বড় বাধা সেশনজট

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বিসিএস :ফি কমলেও আবেদনে ভাটা, বড় বাধা সেশনজট
বিসিএস :ফি কমলেও আবেদনে ভাটা, বড় বাধা সেশনজট

৪৭তম বিসিএসের অনলাইন আবেদনের ক্ষেত্রে ফি কমানো হয়েছে। এরপরও আশানুরূপ বাড়েনি আবেদনকারীর সংখ্যা। অনেকে আবেদন করলেও জমা দেননি ফি। কর্ম কমিশন (পিএসসি) সূত্র জানিয়েছে এই বিসিএসের অনলাইন আবেদন শুরু হয়েছে ২৯ ডিসেম্বর। তিন সপ্তাহের বেশি সময়ে মাত্র ৮০ হাজার চাকরিপ্রার্থী বিসিএসে অংশ নিতে আবেদন করেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিসিএসে অংশ নেওয়াদের অনেকে শিক্ষার্থী। অনেকে আবার স্নাতকোত্তর শেষ করা বেকার। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে স্নাতক পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। সেশনজটে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। এমন পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামতেও দেখা গেছে। ফলে বিসিএসে আবেদন কম পড়ার অন্যতম কারণ সেশনজট বলে মনে করেন তারা।

পিএসসির পরীক্ষা শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৭৭ হাজারের কিছু বেশি আবেদন ফি পরিশোধসহ জমা পড়েছে। অনেকে আবেদন ফরম পূরণ করলেও ফি জমা দেননি। সব মিলিয়ে ৮০ হাজারের মতো প্রার্থী আবেদন ফরম পূরণ করেছেন।

বিগত বিসিএসগুলোতে সাধারণত ২০ থেকে ২৫ দিন আবেদনের সুযোগ দেওয়া হতো। এবার সময় বাড়িয়ে একমাস করা হয়েছিল। আবেদনে 'ধীরগতি' ও শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি সময় আরও প্রায় একমাস বাড়ানো হয়েছে। ফলে এবার প্রার্থীরা আবেদনের সময় পাচ্ছেন প্রায় দুই মাস।

জানা যায়, ৪৬তম বিসিএসে প্রথম ১৭ দিনে আবেদন পড়েছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার। যদিও শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৪৬তম বিসিএসে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০৮টি আবেদন জমা পড়ে। তার আগের বিসিএস অর্থাৎ, ৪৫তম বিসিএসে আবেদন জমা পড়েছিল ৩ লাখ ১৮ হাজারের কিছু বেশি।

সেই হিসাবে এবার আবেদন জমা পড়ার হার কম কি না, এমন প্রশ্নে পিএসসির পরীক্ষা শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'এখনই এটা (আবেদন কম) বলা যাবে না। কারণ আগে আবেদন করলে যে লাভ, পরে করলে ক্ষতি; তা তো বিসিএসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এজন্য অনেকে দেরিতে বা শেষদিকে আবেদন করেন। দেখা যাক, কী হয়।'

৩৮ থেকে ৪৬তম বিসিএসের মধ্যে দু'টি ছিল 'বিশেষ'। বাকি ৭টি সাধারণ বিসিএস। সাধারণ ৭ বিসিএসের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক আবেদন জমা পড়েছিল ৪১তম বিসিএসে। সে বিসিএসে ৪ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি প্রার্থী আবেদন করেন। তাছাড়া ৪৩তম বিসিএসেও ৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৯০টি আবেদন জমা পড়ে।

বাকি পাঁচটি বিসিএসের মধ্যে ৩৮তম বিসিএসে আবেদন করেছিলেন ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৮ জন প্রার্থী, ৪০তম বিসিএসে ৪ লাখ ১২ হাজার, ৪৪তম বিসিএসে ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭১৬টি, ৪৬তম বিসিএসে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০৮টি, ৪৫তম বিসিএসে আবেদন জমা পড়েছিল ৩ লাখ ১৮ হাজারের কিছু বেশি আবেদন জমা পড়েছিল।

বিসিএসে অংশ নেওয়াদের অনেকে শিক্ষার্থী। অনেকে আবার স্নাতকোত্তর শেষ করা বেকার। আগে বিসিএসে আবেদন করতে ৭০০ টাকা ফি লাগত। বাইরে থেকে আবেদন ফরম পূরণসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে খরচ পড়ত এক হাজার টাকার মতো। সদ্য স্নাতক শেষ করা বেকারদের জন্য এ টাকা জোগাড়ও ছিল কষ্টসাধ্য।

সে সংকট এবার নেই। সরকার বিসিএসে আবেদন ফি এক ধাপে কমিয়ে মাত্র ২০০ টাকা করেছে। ফলে প্রার্থীদের জন্য আবেদনের পথ ৪

সহজ হয়েছে।

তারপরও অপেক্ষা কেন, এমন প্রশ্নে পিএসসির ওই কর্মকর্তা বলেন, 'প্রার্থীরা কে, কখন আবেদন করবেন, সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। তাছাড়া এবার সময় অনেক বেশি। এখনো একমাসের বেশি সময় আবেদন করা যাবে।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০২৩ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন রুবিনা ইয়াসমিন। তিনি এরই মধ্যে ৪৭তম বিসিএসে আবেদন করেছেন। রুবিনা বলেন, '৪৬তম বিসিএসে আমি প্রিলিমিনারিতে টিকেছি। ৪৭তম বিসিএসেও আবেদন করেছি। আমার অনেক বন্ধু-বান্ধবী ও পরিচিতজনরা আবেদন করবেন। সময় যেহেতু আছে, এটা ভেবে অনেকের মধ্যে তাড়া নেই। ফি কম, সেজন্য আমি আর দেরি করিনি। প্রথম দিকে আবেদন করে রেখেছি।'

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এবার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে স্নাতক পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। সেশনজটে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। দেরিতে পরীক্ষা শুরু হওয়ায় ৪৭তম বিসিএসে আবেদন করা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামতেও দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের অনেকে আবার অল্প সময়ের জন্য আবেদন করতে পারছেন না। ৪৭তম বিসিএসে আবেদন কম পড়ার অন্যতম কারণ সেশনজট বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষে চূড়ান্ত পরীক্ষা মাত্র শেষ করেছেন ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, 'আমরা দাবি জানিয়েছিলাম। পরে কর্তৃপক্ষ পরীক্ষাটা এগিয়ে এনেছিল। সেজন্য যে পরীক্ষা ১০ জানুয়ারি হওয়ার কথা ছিল। তা ২৯ ডিসেম্বর হয়ে গেছে। ফলে আমরা এখন আবেদন করতে পারছি। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা আমাদের সেশনের শিক্ষার্থীরা এখনো পরীক্ষা দিতে পারেনি। ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও এমন অনেকে পরিচিত রয়েছেন। পরীক্ষা দ্রম্নত নেওয়ার জন্য তারা আন্দোলনেও নেমেছেন।'

বিসিএসে অংশ নিতে দ্রম্নত স্নাতকের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে গত ১৯ জানুয়ারি বিভাগের সভাপতির কক্ষে তালা দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। নিয়ম অনুযায়ী তাদের স্নাতক পরীক্ষাসহ আনুষঙ্গিক সব কার্যক্রম শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেশনজটে পড়েছেন তারা।

বিভাগের শিক্ষার্থী জাকির হোসেন বলেন, 'বারবার বিভাগে আবেদন দিয়েও আমরা সাড়া পাইনি। অথচ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। বাধ্য হয়ে আমরা বিভাগে তালা দিয়েছিলাম। তবুও সমাধান মেলেনি।'

সেশনজটে স্নাতক পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়াটাকে এখন পর্যন্ত আবেদন কম পড়ার বড় কারণ বলে মনে করেন পিএসসির পরীক্ষা শাখার (ক্যাডার) কর্মকর্তারা। তাদের মধ্যে একজন বলেন, 'এটা সত্য যে এবার ছাত্র আন্দোলন, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে সেশনজট বেড়েছে। অনেকের স্নাতক পরীক্ষা চলমান। অনেকের আবার পরীক্ষা হতে দেরি। ছাত্র আন্দোলনের কারণে বড় একটি অংশের সেশনজটে স্নাতক পরীক্ষায় পিছিয়ে গেছেন। অনেকে বিষয়টি নিয়ে পিএসসিতে আসছেন, আবেদন করছেন।'

জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম বলেন, 'সেশনজটসহ কিছু সংকট আছে। সেগুলো বিবেচনা করে আমরা একের পর এক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছি। প্রায় একমাস সময় বাড়ানো হয়েছে। অবতীর্ণ প্রার্থীর বিসিএসে আবেদন নিয়ে যে নিয়ম ছিল, তাতেও সংশোধনী দিয়েছি। আশা করি, উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী আবেদনের সুযোগ পাবেন।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে