জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ খুনি হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ খুনি নয়, দেশপ্রেমিক। আওয়ামী লীগ ১৮ কোটি মানুষের ওপর জুলুম করেছে। মানুষ খুন করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিল। ফ্যাসিস্টরা যেন পুনরায় ফিরে না আসে এবং আমরা যেন তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় না দিই। বাংলাদেশে অন্যায়ভাবে যত মানুষকে খুন করা হয়েছে তার প্রত্যেকটির বিচার চাই আমরা।
শুক্রবার কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
জামায়াত আমির বলেন, 'এমন কোনো কর্মকান্ড করবেন না যাতে আমাদের জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয়। চাঁদাবাজি ও দখল বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হলে পুনরায় স্বৈরাচার ফিরে আসার সুযোগ পাবে। অটুট থেকে মানবিক বাংলাদেশ গড়তে হবে। আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের নামে ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। সেই ফ্যাসিস্টদের আশ্রয় আর বাংলার মাটিতে হবে না। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সংঘটিত সব হত্যার বিচার চাই। মানবিক বাংলাদেশ ৬
প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই যুদ্ধ চলবে।'
প্রায় ২১ বছর পরে কুড়িগ্রাম জেলায় প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে বিশাল জনসমাগম নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জামায়াতে ইসলামী কুড়িগ্রাম জেলা শাখার আয়োজনে এই কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
জামায়াত আমির বলেন, 'এটা সীমান্তবর্তী জেলা। এখানে একজন মানুষ অসুস্থ হলে ভালো চিকিৎসা পাবে তার কোনো ব্যবস্থা নাই। বহু জেলার মধ্যে একটি জেলায় কৃষি ইউনিভার্সিটি, একটি জেলায় মেডিকেল কলেজ, একটি জেলায় ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি, একটি জেলায় সবকিছু আছে আরেক জেলায় কিছুই নাই। এটা কোন ধরনের ইনসাফ!'
তিনি বলেন, '২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর তান্ডব চালিয়ে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় স্পষ্ট দিবালোকে পল্টন ক্রসিং-এ আলস্নাহতালার বান্দা ৬ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। নিথর দেহের উপর দাঁড়িয়ে তারা পৈশাচিক নৃত্য করেছিল। ২০১০ সালের ২৯ জুন আমাদের প্রাণপ্রিয় তিন নেতা তৎকালিন আমীরে জামায়াত সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমীর যিনি সারা বিশ্বের মানুষকে কোরআনের মানবিক দাওয়াত দিয়ে বেড়াতেন যাকে কোরআনের পাখি বলা হতো আলস্নামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, তৎকালিন সেক্রেটারী জেনারেল সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এই তিনজনকে খোঁড়া অজুহাতে, মিথ্যা অভিযোগে নির্লজ্জ্বভাবে গ্রেপ্তার করে। তার পরের মাসে আরো দু'জন সহকারি সেক্রেটারী জেনারেল কামরুজ্জামান এবং আব্দুল কাদের মোলস্নাকে গ্রেপ্তার করে। তাদের সাজা দেওয়ার জন্য শাহবাগে আন্দোলন ঘোষণা করে।'
তিনি আরো বলেন, 'বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে কারা জুলুম অত্যাচার করেছে, কারা তাদের জমিগুলো দখল করেছে, ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করেছে, সম্পদ লুণ্ঠন করেছে, তাদের ইজ্জতে হাত দিয়েছে, এই দুষ্কৃতিকারীদের তালিকা তৈরি করে জনগণের সামনে প্রকাশ করে দেওয়া হোক। তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তরা এসব অপকর্মে জড়িত ছিল।'
দলের নেতাকর্মীদের সম্পর্কে তিনি বলেন, 'সাড়ে ১৫ বছরের দুঃখ-ব্যথা-বেদনা-কষ্ট আমরা বুকে বহন করে বেড়াচ্ছি। কিন্তু ৫ আগস্ট জাতি যখন মুক্তি পেল। তখন বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে আমাদের সহকর্মীদের আমরা বললাম, শান্ত থাকুন ধৈর্য ধরুন, শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে নিজ নিজ জায়গা থেকে সর্ব্বোচ্চ অবদান রাখুন।'
নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, '১৫ বছর যারা যাদের কর্মীরা জীবন দিয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, ঘরছাড়া বাড়িছাড়া হয়েছেন বিভিন্নভাবে কষ্টভোগ করেছেন অসংখ্য মামলায় দফায় দফায় জেলে গিয়েছেন রিমান্ডে নির্যাতিত হয়েছেন, তাদের কাছে হাত জোড় করে বিনয়ের সাথে অনুরোধ করবো এমন কোনো হঠকারী কাজ যেন আমরা না করি যার কারণে আমাদের জাতীয় কোনো সমস্যা হয়। আমরা যেন কেউ চুরি চামারি না করি। চাঁদাবাজি না করি, দখল বাণিজ্য না করি, ঘুষের ভাগ না বসাই, মামলা বাণিজ্য না করি। এবং ফেসিজম ফিরে আসে এবং ফেসিস্টকে আমরা যেন কোন ধরনের আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেই।'
পিলখানায় বিডিআর হত্যাকান্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, 'চর বড়াইবাড়িতে যে যুদ্ধটা আপনারা রাতের অন্ধকারে করে যে শিক্ষাটা দিয়েছিলেন, সেই শিক্ষার প্রতিশোধ নেয়া হয়েছিল বিডিআরের পিলখানায়। সেতো আপনাদের গর্বিত ইতিহাস। এখনো চকচক করছে।'
কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যায় ও জেলার পিছিয়ে পড়া মানুষের দুর্দশা নিয়ে তিনি বলেন, 'এখানে একটা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। ঘোষণা হয়েছে। তার কংকাল আছে গোস্তও নাই চামড়াও নাই। হাড্ডিসার। নিজস্ব কোনো ক্যাম্পাস নাই। ধুঁকে ধুঁকে আস্তে আস্তে চলছে। অথচ এগ্রোবেজড এই প্রতিষ্ঠানটি এই অঞ্চলের চেহারা বদলায়া দিতে পারে। এটা শিক্ষা গবেষণা কেন্দ্রে পরিগণিত হতে পারে।'
জামায়াতের জেলা শাখার আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিশে সুরা সদস্য মাওলানা আব্দুল মতিন ফারুকীর সভাপতিত্বে কর্মী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় কার্য পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ব্যারিস্টার সালেহীন, অধ্যাপক আজিজুর রহমান স্বপন প্রমুখ।