বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপ এখন শুধু প্রযুক্তির ব্যবহারকারী নয়—নিজস্ব সফটওয়্যার, ক্লাউড সেবা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অবকাঠামো তৈরির পথে এগিয়ে যাচ্ছে, যেন আর আমেরিকান কর্পোরেটদের উপর নির্ভর করতে না হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী রাজনীতিক জেডি ভ্যান্স এবং সিনেটর মার্কো রুবিও সম্প্রতি প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য করেছেন যা ইউরোপের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র অজুহাতে বিদেশি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
এরই মধ্যে ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিকল্প সেবার দিকে ঝুঁক দেখা যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, পরিবেশবান্ধব ইউরোপীয় সার্চ ইঞ্জিন Ecosia-র ব্যবহার ইউরোপে বেড়েছে ২৭ শতাংশ এবং সুইস-ভিত্তিক নিরাপদ ইমেইল পরিষেবা ProtonMail-এর ব্যবহার বেড়েছে ১১.৭ শতাংশ।
‘ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব’ অর্জনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠনমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে চালু হয়েছে EuroStack নামের একটি বৃহৎ পরিকল্পনা, যার লক্ষ্য একটি স্বাধীন ইউরোপীয় প্রযুক্তি অবকাঠামো গড়ে তোলা। এতে অন্তর্ভুক্ত: নিজস্ব ক্লাউড সেবা, এআই এবং চিপ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ, কনেকটিভিটি ও সফটওয়্যার তৈরিতে উৎসাহ ও ডিজিটাল পণ্য কিনতে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর অগ্রাধিকার নিশ্চিতকরণ
নেদারল্যান্ডসের সংসদ ইতোমধ্যেই একটি প্রস্তাব পাশ করেছে যেখানে বলা হয়েছে, তারা কি “ট্রাম্প, জাকারবার্গ ও মাস্কের হাতে তাদের নাগরিকদের তথ্য তুলে দিতে প্রস্তুত?” — এমন প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে।
তবে এই পথে ইউরোপের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বর্তমানে ইউরোপের ক্লাউড পরিষেবার বাজারের ৬৬ শতাংশ দখলে রেখেছে Amazon, Microsoft ও Google-এর মতো মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর অংশ মাত্র ২ থেকে ১৩ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তিতে সার্বভৌমতা অর্জনে শুধু নীতিমালাই নয়, প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ও রাজনৈতিক ঐকমত্য।
আমাদের তথ্য, আমাদের নিয়ন্ত্রণে—এই আদর্শেই এগোতে চায় ইউরোপ," বলছেন জার্মানির এক ডিজিটাল নীতিনির্ধারক।