শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জায়ান্টদের ট্রাম্প ঘেঁষা অবস্থান

আমেরিকান করপোরেটদের উপর নির্ভরতা কমাচ্ছে ইউরোপ

বিশেষ প্রতিনিধি
  ২১ জুন ২০২৫, ১৬:২৬
আমেরিকান করপোরেটদের উপর নির্ভরতা কমাচ্ছে ইউরোপ
সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য দ্বিতীয় শাসনামলে ঘনিষ্ঠতা ও রাজনীতি-ঘেঁষা অবস্থানের কারণে ইউরোপজুড়ে ‘ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব’-এর দাবির নতুন জোয়ার উঠেছে। ব্যক্তিগত তথ্য, ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক প্রভাবের ঝুঁকি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো।

বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপ এখন শুধু প্রযুক্তির ব্যবহারকারী নয়—নিজস্ব সফটওয়্যার, ক্লাউড সেবা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অবকাঠামো তৈরির পথে এগিয়ে যাচ্ছে, যেন আর আমেরিকান কর্পোরেটদের উপর নির্ভর করতে না হয়।

মার্কিন প্রভাব নিয়ে শঙ্কা:

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী রাজনীতিক জেডি ভ্যান্স এবং সিনেটর মার্কো রুবিও সম্প্রতি প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য করেছেন যা ইউরোপের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র অজুহাতে বিদেশি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

এরই মধ্যে ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিকল্প সেবার দিকে ঝুঁক দেখা যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, পরিবেশবান্ধব ইউরোপীয় সার্চ ইঞ্জিন Ecosia-র ব্যবহার ইউরোপে বেড়েছে ২৭ শতাংশ এবং সুইস-ভিত্তিক নিরাপদ ইমেইল পরিষেবা ProtonMail-এর ব্যবহার বেড়েছে ১১.৭ শতাংশ।

ইউরোপের নিজস্ব প্রযুক্তি নির্মাণের উদ্যোগ

‘ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব’ অর্জনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠনমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে চালু হয়েছে EuroStack নামের একটি বৃহৎ পরিকল্পনা, যার লক্ষ্য একটি স্বাধীন ইউরোপীয় প্রযুক্তি অবকাঠামো গড়ে তোলা। এতে অন্তর্ভুক্ত: নিজস্ব ক্লাউড সেবা, এআই এবং চিপ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ, কনেকটিভিটি ও সফটওয়্যার তৈরিতে উৎসাহ ও ডিজিটাল পণ্য কিনতে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর অগ্রাধিকার নিশ্চিতকরণ

নেদারল্যান্ডসের সংসদ ইতোমধ্যেই একটি প্রস্তাব পাশ করেছে যেখানে বলা হয়েছে, তারা কি “ট্রাম্প, জাকারবার্গ ও মাস্কের হাতে তাদের নাগরিকদের তথ্য তুলে দিতে প্রস্তুত?” — এমন প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে।

বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ইউরোপ

তবে এই পথে ইউরোপের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বর্তমানে ইউরোপের ক্লাউড পরিষেবার বাজারের ৬৬ শতাংশ দখলে রেখেছে Amazon, Microsoft ও Google-এর মতো মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর অংশ মাত্র ২ থেকে ১৩ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তিতে সার্বভৌমতা অর্জনে শুধু নীতিমালাই নয়, প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ও রাজনৈতিক ঐকমত্য।

বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তির স্বাধীনতা বা ‘ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব’ ইউরোপের কাছে কেবল অর্থনৈতিক নয়, বরং কৌশলগত নিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাগরিকদের তথ্য, স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ—সব কিছু রক্ষার তাগিদেই ইউরোপ আজ নিজস্ব প্রযুক্তি পথ বেছে নিতে চাচ্ছে।

আমাদের তথ্য, আমাদের নিয়ন্ত্রণে—এই আদর্শেই এগোতে চায় ইউরোপ," বলছেন জার্মানির এক ডিজিটাল নীতিনির্ধারক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে