বাংলা একাডেমির আমূল সংস্কার, 'ফ্যাসিবাদী'দের অপসারণ এবং পুরস্কার 'কেলেঙ্কারি'তে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে একাডেমির সামনে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে ্তুবিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজ ও জাতীয় সাংস্কৃতিক বিপস্নব নামের দুটি পস্নাটফর্ম।
রোববার দুপুরে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার পর তাদের একটি প্রতিনিধি দল বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা পুরস্কারের তালিকায় থাকা কারও কারও সম্পর্কে 'কিছু অভিযোগ' আসায় শনিবার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার স্থগিত করা হয়।
আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে পুনর্বিবেচনার পর তালিকাটি পুনঃপ্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলা একাডেমি।
শনিবার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ।
সেখানে বলা হয়, 'উদ্ভূত সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং পুরস্কার-তালিকাভুক্ত কারও কারও সম্পর্কে কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় পূর্বঘোষিত ্তুবাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪্থ-এর পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন সম্পর্কে আলোচনা হয়।'
সেসব অভিযোগ সম্পর্কে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা তালিকা স্থগিত করা হয় বলে জানায় বাংলা একাডেমি।
ঘেরাও কর্মসূচিতে দেওয়া বক্তব্যে কথাসাহিত্যিক এহসান মাহমুদ বলেন, 'বাংলা একাডেমি নির্বাহী পরিষদ পুনর্গঠন না করলে এই সমস্যার সমাধান হবে না।'
একাডেমির মূল কাজ গবেষণা হলেও সেই জায়গা থেকে একাডেমি সরে গেছে অভিযোগ করে তরুণ এই সাহিত্যিক বলেন, 'তারা এখন বইমেলার আয়োজন আর পুরস্কার দেওয়ার কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে। মূল কাজ যে গবেষণা, তা নিয়ে তাদের কোনো কাজ নেই। বাংলা একাডেমির পুরস্কার যাদের দেওয়া হয়েছে, তাদের অনেকে যোগ্য। তবে দুয়েকজন ফ্যাসিবাদের দোসর রয়ে গেছেন। এখন পুরস্কার স্থগিত করার কারণে যোগ্যদেরও তো অপমান করা হল। এই দায় পুরস্কারের জুরি বোর্ডকে নিতে হবে। জুরি বোর্ডে যারা আছেন, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।'
লেখক আবিদ আজম বলেন, 'স্বৈরাচারের দোসরদের পুরস্কার স্থগিত নয়, বাতিল করতে হবে। স্বৈরাচারী সরকারের সময় বাংলা একাডেমিতে অনেক অযোগ্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে বাদ দিতে হবে। পুরস্কারের জুরি বোর্ডে যারা ছিলেন, তাদের নাম প্রকাশ করতে হবে।'
মামুন সারওয়ার বলেন, 'বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ড. শহীদুলস্নাহকে নিয়েও তারা কোনো কাজ করেনি। এই বাংলা একাডেমি একটা পরিবার নিয়েই ব্যস্ত ছিল, তা হল শেখ হাসিনার পরিবার। বাংলা একাডেমিতে আমূল সংস্কার করতে হবে।'
এবিএম সোহেল রশিদ বলেন, 'আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বাংলা একাডেমি থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিতাড়িত করতে হবে।'
অন্যদের মধ্যে কবি মঈন মুনতাসীর, কবি সাম্য শাহ, মাহবুব হাসান, শাকিল মাহমুদ, পলিয়ার ওয়াহিদসহ অনেকে সেখানে বক্তব্য দেন।
এবার নাট্য গবেষক সৈয়দ জামিল আহমেদ, প্রাবন্ধিক সলিমুলস্নাহ খানসহ দশজনকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
এরপর সাহিত্য পুরস্কারে লেখকদের তালিকায় কোনো নারী লেখক না থাকার বিষয়টি তুলে ধরে এটিকে 'বিস্ময়কর' বলে মন্তব্য করে শুক্রবার ফেইসবুকে পোস্ট দেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
এ পুরস্কারের জন্য 'মনোনয়ন প্রক্রিয়া সংস্কারের সময় এসেছে' বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর পরদিন তা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলা একাডেমি। সংস্কৃতি উপদেষ্টা পুরস্কার স্থগিতের খবর ফেইসবুক পোস্টে জানান। পুরস্কার স্থগিতে উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ রয়েছে বলেও ফেইসবুকে লেখেন কেউ কেউ।
পুরস্কারের তালিকায় কোনো নারীর নাম না থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেকে পোস্ট করে সমালোচনা করেন।
এবার পুরস্কারের ঘোষিত তালিকায় ছিলেন- কবিতায় মাসুদ খান, কথাসাহিত্যে সেলিম মোরশেদ, নাটক ও নাট্যসাহিত্যে শুভাশিস সিনহা, প্রবন্ধ/গদ্যে সলিমুলস্নাহ খান, শিশুসাহিত্যে ফারুক নওয়াজ, অনুবাদে জি এইচ হাবীব, গবেষণায় মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া, বিজ্ঞানে রেজাউর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে মোহাম্মদ হাননান।
আগামী ১ ফেব্রম্নয়ারি অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার দেওয়ার কথা রয়েছে।
এ পুরস্কারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বাংলা একাডেমির ওয়েবসাইটে বলা আছে, "বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সমসাময়িক জীবিত লেখকদের সামগ্রিক মৌলিক অবদান চিহ্নিত করে তাদের সৃজনী প্রতিভাকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করাই বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার প্রদানের উদ্দেশ্য।