রোববার, ০৪ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২

ক্রেতা-দর্শনার্থীর সমাগম বেড়েছে তৃতীয় দিনে

নতুন বই এসেছে ৩২টি
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ক্রেতা-দর্শনার্থীর সমাগম বেড়েছে তৃতীয় দিনে
বইমেলার তৃতীয় দিন সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের মিলনমেলা -ফোকাস বাংলা

গণ-অভু্যত্থান পরবর্তী ভিন্ন আবহে শুরু হওয়া অমর একুশে বইমেলার তৃতীয় দিনে ক্রেতা-দর্শনার্থীর সমাগম ছিল আগের দুই দিনের তুলনায় বেশি। তবে বইমেলার সব মতাদর্শের মানুষের সম্মিলন প্রত্যাশা করছেন বইপ্রেমীরা। তৃতীয় দিন সরস্বতী পূজা থাকায় মেলা শুরুর সময় থেকেই মিলনমেলায় পরিণত হয় বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চত্বর। এদিনও কয়েকটি স্টলে দেখা গেছে নির্মাণ কাজ চলছে। আর অব্যবস্থাপনার অল্প-বিস্তর অভিযোগ সমাধানের চেষ্টার কথা বলেছে মেলা কমিটি।

সোমবার ছিল অমর একুশে বইমেলার তৃতীয় দিন। মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। বইমেলা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৯৮% প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান তাদের স্টলের নির্মাণ সম্পন্ন করে পুরোদমে বই সাজিয়ে বসেছেন।

মেলা পরিচালনা কমিটির ভাষ্য, স্টলের নির্মাণ শেষ পর্যায়ে। তবে আজ চতুর্থ দিন থেকে মেলার মাঠে আর কোনো নির্মাণ কাজ থাকবে না বলে আশা কমিটির। বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব সরকার আমিন বলেন, 'বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকসহ আমরা একটি দল মেলার মাঠ ঘুরে দেখেছি। কিছু ত্রম্নটি চোখে পড়েছে। তা সমাধান করা হবে।'

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের প্রবল আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। দেশের রাজনৈতিক এই পটপরিবর্তনের ছয় মাসের মাথায় শুরু হওয়া বইমেলায় এবার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে শতাধিক, বেড়েছে আয়তনও। সেইসঙ্গে মেলার রঙ, প্রতিপাদ্য আর দৃশ্যপটেও এসেছে পরিবর্তন। আর গণ-আন্দোলনের স্মৃতি স্মরণে রয়েছে 'জুলাই চত্বর'।

'জুলাই গণ-অভু্যত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ'- এই প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এবারের মেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি স্টল রাখা হয়েছে। এই স্টলের পাশেই বানানো হয়েছে একটি ডাস্টবিন। সেই ডাস্টবিনে লাগানো হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন মেট্রোরেলের পিলারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার 'ঘৃণা স্তম্ভে'র ছবি।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ফেসবুক পেজে এই ডাস্টবিনের ছবি পোস্ট করার পর, তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনা তৈরি হয়। সোমবারও এই ডাস্টবিনে এসে ময়লা ফেলে কাউকে কাউকে ছবি তুলতে দেখা যায়। আবার মেলা প্রাঙ্গণে এ ধরণের ডাস্টবিন দিয়ে ঘৃণার চর্চা করা হচ্ছে বলেও অভিমত জানান দর্শনার্থীদের কেউ কেউ।

মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার স্টলে থাকা বিক্রয়কর্মীরাও বলছেন, মেলার আজ মাত্র তৃতীয় দিন। তাও আবার সোমবার, কর্মদিবসের বিকাল। এই সময়ে মেলায় এমন জনসমাগম সাধারণত দেখা মেলে না। আমরা অভিভুত। মানে এবারের মেলা জমে উঠবে।

কর্মদিবসের দিনগুলোতে বইমেলার নিয়ম অনুসারে বিকাল তিনটায় মেলার প্রবেশ পথগুলো খুলে দেওয়া হয়। সোমবারও তাই হয়েছে। এই সময়ে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের প্রবেশপথ গুলোতে তেমন ভিড় লক্ষ্য করা না গেলেও সময় যতই গড়িয়েছে ততই প্রাণের বইমেলায় প্রাণের উচ্ছ্বাস নিয়ে প্রবেশ করেছে বইপ্রেমী-পাঠক এবং দর্শনার্থীরা।

২০২৪ সালের ধারাবাহিকতায় বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান- দুই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত মেলায় এবারও সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থার স্টলগুলো পড়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। আর এখানেই ভিড় করছেন বইপ্রেমী আর পাঠকরা। এ অংশেই ঘুরে ফিরে বই দেখে বই কিনছেন তারা। কেউ কেউ বাংলা

একাডেমি প্রাঙ্গণে দেশের বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আর সংস্থার স্টলগুলোতেও ঢু মারছেন, কিনছেন বই বা প্রয়োজনীয় জিনিস। মেলার মাত্র তৃতীয় দিনেই মেলার দুই প্রাঙ্গণে লোকসমাগম এবং বিক্রি দেখে মেলায় অংশ নেওয়া প্রকাশনার সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের আশা- অন্য যে কোনোবারের চেয়ে এবারের মেলা আরও জমজমাট হবে, বাড়বে বিক্রি। লেখক-পাঠকরাও প্রত্যাশা করছেন, বই প্রকাশের এবং বই বিক্রির একটি বড় উদাহরণ হবে এবারের মেলা।

এদিকে, মেলার ৯৯ ভাগেরও বেশি স্টল গুছিয়ে উঠেছে; বই সাজিয়ে বসেছে। পাঠকরাও ঘুরে-ফিরে পছন্দমতো বই কিনছেন।

অমর একুশে বইমেলায় সোমবার নতুন ৩২টি বই এসেছে। বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে 'হায়দার আকবর খান রনো : আজীবন বিপস্নব-প্রয়াসী' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সোহরাব হাসান। আলোচনায় অংশ নেন আবদুলস্নাহ আল ক্বাফী রতন, জলি তালুকদার এবং অনন্যা লাবণী পুতুল। সভাপতিত্ব করেন দীপা দত্ত।

প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের বাম রাজনীতির অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন হায়দার আকবর খান রনো। তিনি ছিলেন এ দেশের বাম রাজনীতির একই সঙ্গে ছাত্র ও শিক্ষক। অগ্রজদের কাছ থেকে যে শিক্ষা নিয়েছেন সেটাই তিনি পৌঁছে দিয়েছেন অনুজ কমরেডদের কাছে। হায়দার আকবর খান রনো কখনো কট্টরপন্থার অনুসারী ছিলেন না। তিনি ভিন্ন মেরুর বামপন্থি নেতাদের একসঙ্গে বসিয়ে আলোচনার পথ খুলে দিতে সচেষ্ট ছিলেন। বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভু্যত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং তৎপরবর্তী স্বৈরাচারবিরোধী প্রতিটি আন্দোলনে রনোর ভূমিকা ছিল প্রত্যক্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতির বাইরেও বিচিত্র বিষয়ে তার আগ্রহ ছিল। তিনি মার্ক্সবাদী দর্শন ও বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো অত্যন্ত সহজ ভাষায় পাঠকদের কাছে তুলে ধরেছেন।

অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, ছোটোবেলা থেকেই হায়দার আকবর খান রনো প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার মধ্য দিয়ে বড় হয়ে উঠেছেন। মার্ক্সীয় তত্ত্ব অধ্যয়ন ও অনুশীলনের সমন্বয় ঘটেছিল তার জীবনে। শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল গভীর। মানুষ হিসেবে অত্যন্ত বিনয়ী হায়দার আকবর খান রনো বামপন্থিদের অনেক বিভেদের মধ্যেও নিজের নীতিতে ছিলেন অটল। সমাজতন্ত্রের যে স্বপ্ন তিনি নিজের ভেতর লালন করেছেন, তা নিয়েই আজীবন লড়াই সংগ্রাম করে গেছেন।

সভাপতির বক্তব্যে দীপা দত্ত বলেন, হায়দার আকবর খান রনো ছিলেন আজীবন বিপস্নবী। তিনি কেবল কমিউনিস্ট নেতাই নন, একজন তাত্ত্বিকও। তার লেখনী, রাজনৈতিক আদর্শ, সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা আমাদের জন্য আগামীর প্রেরণা হয়ে থাকবে।

এদিন লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- কবি চঞ্চল আশরাফ এবং শিশুসাহিত্যিক আতিক হেলাল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন- কবি মোহন রায়হান ও রেজাউদ্দিন স্টালিন। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাহমুদা সিদ্দিকা সুমি এবং হ্যাপি হাবিবা। ড. ইঞ্জিনিয়ার খালেকুজ্জামানের পরিচালনায় ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন 'বাঁশরী'-র পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী এ কে এম শহীদ কবির, রেজাউল করিম, মিরাজুল জান্নাত সোনিয়া, রত্না দাস, দেবাশীষ শর্মা ও মাহমুদুল হাসান।

আজ মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'কুমুদিনী হাজং' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন পাভেল পার্থ। আলোচনায় অংশ নেবেন মতিলাল হাজং এবং পরাগ রিছিল। সভাপতিত্ব করবেন আবু সাঈদ খান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে