অমর একুশে বইমেলার সময় বাড়ছে না। ফলে আজ শুক্রবারই পর্দা নামছে বাঙালির প্রাণের এ উৎসবের। তবে এদিন ছুটির দিন হওয়ায় মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায় এবং শেষ হবে রাত ৯টায়। বৃহস্পতিবার বিকালে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব ড. সরকার আমিন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেছেন, রোজাসহ পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এবার বইমেলার সময় বাড়ানোর কোনো চিন্তা-ভাবনা তারা করছেন না। নির্ধারিত সময়েই সব কার্যক্রম শেষ হচ্ছে। ফেব্রম্নয়ারি মাসের শেষ দিনই এবারের বইমেলার শেষ দিন।
শেষদিকে এসে সত্যিকার অর্থেই বইমেলা মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'বইমেলা কিন্তু শুধু বই বিক্রির হাট নয়। এটি মানুষের সঙ্গে মানুষের পারস্পরিক মেলবন্ধনের জায়গা। লেখক-পাঠকের সম্পর্ক তৈরি হওয়ার জায়গা। সবকিছু মিলিয়ে বইমেলা হচ্ছে একটি সাংস্কৃতিক ইভেন্ট। সেজন্য, বইমেলাকে শুধু বইমেলা নামেই আমরা ডাকি না। আমরা বলি মিলনমেলা। সে বিবেচনায় বলতে পারি বইমেলা সফল হয়েছে।'
বইমেলার এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে মেলা কমিটির সদস্যসচিব কবি সরকার আমিন বলেন, 'পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবারের বইমেলার আয়োজনসহ সব ব্যবস্থাপনাতেই ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে আমরা বইমেলা করতে সক্ষম হয়েছি। এটাই হচ্ছে বড় সাফল্য।'
বৃহস্পতিবার প্রকাশনা সংস্থা 'ঐতিহ্য' থেকে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কয়েকটি বই। এর মধ্যে রয়েছে 'মুখোমুখি সব্যসাচী', এটি সৈয়দ শামসুল হকের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার। গ্রন্থটি সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন লেখকের সহধর্মিণী কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রম্নব এষ, মূল্য ১০৫০ টাকা। সৈয়দ শামসুল হক অবিরাম লিখেছেন এবং বলেছেনও। তার লেখা জীবদ্দশায় ও মৃতু্যপরবর্তী প্রায় তিনশ বইয়ে ধরা আছে, ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার পঁয়ত্রিশ খন্ড রচনাসমগ্রও। কিন্তু অদ্যাবধি তার সাক্ষাৎকারের কোনো পূর্ণাঙ্গ বা নির্বাচিত সংকলন প্রকাশিত হয়নি। এই সংকলনে বিভিন্ন সময়ে নানা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকার একত্রিত হয়েছে। এছাড়া প্রকাশিত হয়েছে কমরেড মুজফফর আহমদ সম্পাদিত 'কাজী নজরুল ইসলাম : স্মৃতিকথা' শীর্ষক গ্রন্থটি। এটিও মূলক স্মৃতিকথা। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জানতে গ্রন্থটি আকর গ্রন্থ হিসেব পাঠক-গবেষক মহলে সমাদৃত হবে।
এদিকে, সপ্তাহের শেষ দিন বিকাল থেকেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় বইমেলা। বেচাকেনাও ভালো হয়েছে। মেলা ঘুরে ঘুরে প্রায় প্রত্যেকেই হাতেই বই দেখা গেছে। তবে প্রকাশকরা বলছেন, এদিন বিক্রি ভালো হলেও নানা কারণে এ বছর প্রত্যাশা অনুযায়ী তাদের বিক্রি হয়নি। অনেক নিয়মিত ক্রেতা-পাঠক এবার মেলায় আসেননি। তাছাড়া নানা বিতর্ক মেলার সৌন্দর্য নষ্ট করেছে। কোনো কোনো প্রকাশক বলেছেন, তাদের বিনিয়োগ উঠে আসা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। মেলার শেষ সপ্তাহে বিক্রি বাড়ায় কিছুটা হলেও তারা পোষাতে পেরেছেন। আজ শেষ দিন আরও বিক্রি হবে বলে তারা আশাবাদী।
বৃহস্পতিবার ক্রেতা-পাঠকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা নানা ব্যস্ততার কারণে মেলায় আসতে পারেননি, তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে হাজির হয়েছেন। এদিনও নানা সাজে তরুণ-তরুণীর ব্যাপক উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে ভিড় বাড়লেও সে তুলনায় লাফিয়ে বাড়েনি বইয়ের বিক্রি।
এদিন বিকালে মেলার বিভিন্ন প্রবেশপথে দেখা যায়, সেজেগুজে আগ্রহ নিয়ে মেলায় প্রবেশ করছেন দর্শনার্থীরা। অনেকে ছবি তোলায় ব্যস্ত হলেও শেষ মুহূর্তে কেউ কেউ
বই কিনছেন। কলেজ শিক্ষার্থী শাকিলকে দেখা যায় মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বই খুঁজতে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি অডিও বুক শুনে অভ্যস্ত। তবে পাতা উল্টে বই পড়তেও পছন্দ করি।'
তবে আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় প্রকাশকদের মধ্যে উলস্নাস নেই। মেলা ঘুরে কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী চৌধুরী ফাহাদ বলেন, 'এখন পর্যন্ত পাঠক, লেখক, বিক্রয়ের দিক থেকে সবচেয়ে কম রেসপন্স পাওয়া বইমেলা এটি। এবার মেলায় পাঠক ছিল না; দর্শনার্থী ছিল বেশি। তবুও শেষে কিছুটা বিক্রি হচ্ছে।'
কথাপ্রকাশের জসিমউদ্দীন বলেন, 'আমাদের দেশে একটা সংস্কৃতিু বইমেলা একটা উৎসবস্থল। চার-পাঁচ বছর আগে যারা আসতেন, তারা বই কিনতে আসতেন। বিগত দিনগুলোর চেয়ে এবার বইমেলা অব্দি সবাই এসেছেন উৎসব করতে। যে যার মতো তা-ই করে চলে যাচ্ছেন। যারা মূল পাঠক, তারা অনলাইন থেকে বই কিনছেন; মেলায় আসছেন না।'
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে মেলার ২৭তম দিনে নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ১৭৬টি। এদিন বইমেলার মূলমঞ্চে 'একটি অভু্যত্থানের জন্ম ও আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথ' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রেজাউল করিম রনি। আলোচনায় অংশ নেন সৈয়দ নিজার। সভাপতিত্ব করেন কাজী মারুফ।
আজ বিকাল ৫টায় বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন 'অমর একুশে বইমেলা ২০২৫'-এর সদস্য-সচিব ড. সরকার আমিন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সচিবের রুটিন দায়িত্ব) মো. মফিদুর রহমান। অনুষ্ঠানে কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫, সৈয়দ ওয়ালীউলস্নাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪, চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হবে। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।