মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

প্রতিষ্ঠার ১৯ বছরেও হয়নি জকসু আইন

রায়হান উদ্দীন বাপ্পি, জবি প্রতিনিধি
  ০১ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
প্রতিষ্ঠার ১৯ বছরেও হয়নি জকসু আইন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পার হলেও বিশ্ববিদ্যালয় আইনে নেই কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের বিধি। বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদের ধারা প্রণয়ন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা চললেও হয়নি বাস্তবায়ন। শিক্ষক সমিতি, কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচন হলেও সবসময় বাধা পেয়েছে জকসু নির্বাচন। এর মধ্যে বেশিরভাগ সময় আইনে বিধি না থাকায় নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯তম সিন্ডিকেট সভায় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের (জকসু) খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এর আগে ১৯৫৪ সালে জগন্নাথ কলেজ থাকাকালীন প্রথম ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়। সেসময় জগন্নাথ কলেজ ছাত্র সংসদ (জকসু) বলা হতো। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত জগন্নাথ কলেজ ছাত্রসংসদের ১০টি

কমিটি হয়। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২, ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৮৭ সালে আরও চারটি ছাত্রসংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

২০০৫ সালে জগন্নাথ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ১৮ বছর ধরে কোনো ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়নি। এরপর জগন্নাথ কলেজ থেকে ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়ার সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ এ ছাত্রসংসদের অধ্যাদেশযুক্ত হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ১৯বছরে প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্রসংসদ অধ্যাদেশ যুক্ত ও নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেও সফল হতে পারেনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে জকসুর দাবি জানিয়েছেন ক্রীয়াশীল ছাত্র সংগঠন গুলোও। এবিষয়ে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, যদি প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকে এবং শক্তহাতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয় তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এই অন্তবর্তীকালীন সরকার থাকাকালীন দ্রম্নতই জকসু নির্বাচন চান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ইভান তাহসীভ বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে বিধি নেই। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের যে আকাঙ্ক্ষা সেই আকাঙ্ক্ষার জায়গা থেকে নীতিমালাগুলো সংযুক্ত করে নেওয়া যায়।'

এবিষয়ে শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের কী চাহিদা, তাদের কী প্রয়োজন এগুলো ছাত্র সংসদের নেতারাই তুলে ধরতে পারবেন। শিক্ষকরা সেটা বুঝবেন না এবং তুলেও ধরতে পারবেন না। সেই জায়গা থেকে যতদ্রম্নত সম্ভব ছাত্র সংসদ নির্বাচন (জকসু) নির্বাচন হওয়া দরকার।'

শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি আসাদুল ইসলাম বলেন, 'শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে জকসুর গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম। নেতৃত্ব বিকাশে জকসু নির্বাচন জরুরি।'

তবে সকল ছাত্র সংগঠন জকসু নির্বাচন চাইলেও এখনই নির্বাচন যাচ্ছে না বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সংগঠনটির আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, 'জুলাই-আগস্টের পূর্ববর্তী ও আন্দোলনের সময়ে গত ১৭ বছর যারা আমাদের নেতাকর্মীদের উপর হামলা-মামলা ও নির্যাতন করেছে। আমরা চাই তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক। ফ্যাসিবাদ মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তুলে তারপর জকসু নির্বাচন হোক।'

এদিকে জকসু নীতিমালা সংযুক্তির জন্য ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীন রইছ উদ্দীন বলেন, 'জকসু নীতিমালা প্রণয়নে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আমরা কমিটির সদস্যরা নীতিমালার খসড়া প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছি। এরপর কাজ কতদূর সেটা প্রশাসনিক দপ্তরই বলতে পারবে।'

ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. কে এ এম রিফাত হাসান বলেন, 'আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে জকসু নীতিমালা নেই। তবে খসড়া নীতিমালা প্রস্তাব করা হয়েছে। এই নীতিমালা শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে তারপরই আমরা জকসু নির্বাচন নিয়ে সামনে এগোতে পারবো।'

এবিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-২০০৫ এ ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে কোন ধারা বা বিধি নেই, তাই অনুমোদিত নীতিমালাটি এখন আমাদের আইন উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে। মন্ত্রণালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে অধ্যাদেশ জারি হলে এটি আইন হিসেবে গৃহীত হবে। আমরা আশা করি খুব শিগগিরই রাষ্ট্রপতি থেকে জকসু নীতিমালাটি অধ্যাদেশ আকারে পাশ হয়ে আসবে। এটা আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা জকসু নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করতে পারবো। আমরা এখন ভর্তি পরীক্ষা, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কাজ করছি একারণে এটা নিয়ে আপাতত কাজ কম হচ্ছে। তবে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় আইনে জকসু প্রজ্ঞাপন জারি হলেই নির্বাচনের কাজ শুরু হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে