টাঙ্গাইলে মানসিক ভারসাম্যহীনদের নিয়ে সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহেরের (ভিপি জোয়াহের) ছয়তলা ভবন দখল, ভাংচুর ও চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার নারী সমন্বয়ক মারিয়াম মোকাদ্দেস মিষ্টিকে আদালত চার দিনের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) অনুমতি দিয়েছেন।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক গোলাম মাহবুব খান ওই অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন মঞ্জুর করেন। এর আগে রোববার রাত ১২টার দিকে টাঙ্গাইল শহরের পশ্চিম আকুরটাকুর পাড়া এলাকা থেকে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
আদালত ও পুলিশ সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল সদর থানা পুলিশ মিষ্টিকে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে সোমবার সকালে আদালতে পাঠায়। পরে আদালতের বিচারক শুনানি শেষে চার দিনের অধিকতর রিমান্ড অনুমোদন দেন। গ্রেপ্তারকৃত মারিয়াম মোকাদ্দেস মিষ্টি বাসাইল উপজেলার জশিহাটী গ্রামের শাহ আলমাসের স্ত্রী। তবে তিনি বর্তমানে টাঙ্গাইল শহরের পশ্চিম আকুর টাকুর পাড়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন।
এর আগে ৮ মার্চ সকালে শহরের ছোটকালিবাড়ীতে অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহেরের (ভিপি জোয়াহের) ছয়তলা ভবনের তালা ভেঙে ১৭ জন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে নিয়ে তিনি ভবনে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীনদের জন্য আশ্রম বানানোর ঘোষণা দেন। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এতে প্রশাসন নড়চড়ে বসে। ওইদিনই রাত সাড়ে ১০টার দিকে যৌথবাহিনী অভিযান পরিচালনা করে বাড়িটি দখলমুক্ত করে। সদর উপজেলা সহকারী কমিমনার (ভূমি) রুহুল আমিন শরিফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে ওই অভিযান পরিচালনা করে। পরে মুচলেকা দিয়ে রাতেই মিষ্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ভিপি জোয়াহের বাসায় ভাংচুর, লুটপাট, দখল ও ১০ কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে জোয়াহেরুল ইসলামের স্ত্রী রওশন আরা খান বাদী হয়ে রোববার রাতে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়- শহরের আকুরটাকুর পাড়ার ছয়তলা ভবনের কলাপসিবল গেইটের ছয়টি তালা ভেঙে সমন্বয়ক মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টির নেতৃত্বে ৮-৯ জন পূর্বপরিকল্পিতভাবে ১৭ জন মানসিক ভারসাম্যহীন লোক নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে বাড়িটির দখল নেয়। এ সময় তারা ভেতরে লুটপাট চালায়। বাসার ভেতর থেকে তারা নগদ পাঁচ লাখ টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করে। এছাড়া প্রায় ৫০ লাখ টাকার আসবাবপত্র ভাংচুর করে। এ বিষয়ে মিষ্টিকে জিজ্ঞাসা করলে সে ১০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে বাড়িটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
রোববার রাত ১১টার দিকে মানসিক ভারসাম্যহীন ১৭ জনের মধ্যে ১৬ নারী মানসিক ভারসাম্যহীনকে গাজীপুরের কাশিমপুর সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে এবং দুই জন পুরুষ মানসিক ভারসাম্যহীনকে ময়মনসিংহের ধলা সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এদের মধ্যে একজন সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি ও দুই নারী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য হিসেবে জিহাদী বই নিয়ে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার জোকারচর থেকে পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।