শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

লবণাক্ততা সহনশীল, ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধীসহ ধানের তিন জাত উদ্ভাবন করলো ব্রি

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ২০ জুন ২০২৫, ০৯:৩৯
লবণাক্ততা সহনশীল, ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধীসহ ধানের তিন জাত উদ্ভাবন করলো ব্রি
ছবি: যায়যায়দিন

জাতীয় বীজ বোর্ডের সভায় বাংলাদশে ধান গবেষণা ইনস্টটিউিট (ব্রি) কর্তৃক উদ্ভাবিত আরও তিনটি ধানের জাত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নতুন জাতগুলোর মধ্যে একটি লবণাক্ততা সহনশীল (ব্রি ধান১১২), একটি উচ্চ ফলনশীল বোরো (ব্রি ধান১১৩) ও অন্যটি ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী (ব্রি ধান১১৪)।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) সিনিয়র লিয়াজো কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ব্রির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ জাত অনুমোদন সভায় উপস্থিত ছিলেন।

তিনি আরও জানান, বুধবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নতুন উদ্ভাবিত এ তিনটি জাতসহ এখন পর্যন্ত ব্রি১২১টি জাত উদ্ভাবন করেছে যার আটটি হাইব্রিড।

ব্রি ধান১১২:

লবণাক্ততা সহনশীল ও মাঝারি জীবনকালীন রোপা আমনের জাত। এ জাতের ডিগপাতা প্রচলিত ব্রি ধান ৭৩ এর চেয়ে খাড়া। ব্রি ধান১১২ লবণাক্ততার মাত্রাভেদে হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ১৪, ৬ দশমিক ১২টন ফলন দিতে সক্ষম।

গাছের কাণ্ড মজবুত এবং ঢলে পড়া প্রতিরোধী। এ ধানের শীষে পুষ্ট দানার সংখ্যা গড়ে ২১০টি যা ব্রি ধান৭৩ এর থেকে ৮০—৯০টি বেশি। প্রস্তাবিত জাতটিতে Gn1a জিনের উপস্থিতির কারণে শীষে দানার (স্পাইকলেটের) সংখ্যা বাড়ে। চাল মাঝারি চিকন, সাদা এবং ভাত ঝরঝরে। ব্রি ধান১১২ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো চারা অবস্থায় ১২ ডিএস/মি (৩ সপ্তাহ পর্যন্ত) লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। উপরন্তু এ জাতটি অংগজ বৃদ্ধি থেকে প্রজনন পর্যায় পর্যন্ত লবণাক্ততা সংবেদনশীল সব ধাপে (Salt-sensitive stages) ৮ ডিএস/মি মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করে ফলন দিতে সক্ষম। জাতটির দানা মাঝারি চিকন ও শীষ থেকে ধান সহজে ঝরে পড়ে না। জাতটির জীবনকাল তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে ফসল কর্তনের পর মধ্যম উঁচু থেকে উঁচু জমিতে সূর্যমুখী ও লবণ সহনশীল সরিষা আবাদের সুযোগ তৈরি হবে।

ব্রি ধান১১৩: জাতটি বোরো মওসুমের জনপ্রিয় জাত ২৯ এর বিকল্প হিসেবে ছাড়করণ করা হয়েছে। এটি মাঝারি চিকন দানার উচ্চ ফলনশীল জাত। এ জাতের ডিগপাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা এবং ধান পাকলেও সবুজ থকে। পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০২—১০৫ সে. মি.। এ জাতের গাছ শক্ত এবং মজবুত বিধায় সহজে হেলে পড়ে না। জাতটির গড় জীবনকাল ১৪৩ দিন। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ১৯ দশমিক ৪ গ্রাম। চালের আকার আকৃতি মাঝারি চিকন, এবং রং সাদা, দেখতে অনেকটা নাইজারশাইলের মতো।

এ ধানের চালে এ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৮ ভাগ এবং ভাত ঝরঝরে। এছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৮ দশমিক ৪ ভাগ। প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় এ জাতটি ব্রি ধান৮৮ এর চেয়ে ১১.৫ শতাংশ বেশি ফলন দিয়েছে। এ জাতের গড় ফলন হেক্টরে ৮ দশমিক ১৫ টন। উপযুক্ত পরিবেশে সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে এ জাতটি হেক্টরে ১০ দশমিক ১ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। ব্লাস্ট প্রতিরোধী বোরো মওসুমের দীর্ঘ মেয়াদি জাত ব্রি ধান১১৪।

ব্রি ধান১১৪: বোরো মওসুমের দীর্ঘ জীবনকালীন ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত। এ জাতের ডিগ পাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা, গাছ মজবুত এবং হেলে পড়ে না। পাতার রং গাঢ় সবুজ। এর গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৭ দশমিক ৭৬ টন। তবে উপযুক্ত পরিচর্যায় এর ফলন হেক্টরে ১০ দশমিক ২৩ টন পর্যন্ত পাওয়া যায়। এ জাতের দানা মাঝারি মোটা এবং সোনালী বর্ণের। এ জাতের গড় জীবনকাল ১৪৯ দিন, যা বোরো মওসুমের জনপ্রিয় জাত ব্রি ধান৮৯ এর সমান জীবনকাল।

১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ১৭ দশমিক ৪ গ্রাম। চালে এ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৭ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৭ দশমিক ৭ ভাগ। ভাত ঝরঝরে। জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী। এ জাতটিতে ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী প্রকট জিন পিআই৯ বিদ্যমান এবং আর্টিফিশিয়াল ইনোকুলেশনে উচ্চ মাত্রার রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে