মানব সভ্যতার পেছনে নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। সভ্যতা ও সংস্কৃতি শব্দ দুটি নির্বিচারভাবে ব্যবহৃত হলেও দুটির মধ্যে পার্থক্য আছে। পরারষরুধঃরড়হ (সভ্যতা) ও পঁষঃঁৎব (সংস্কৃতি) এই শব্দগুলোর অর্থ তাত্ত্বিকদের কাছে কখনো এক, কখনো বা আলাদা। সংস্কৃতি হচ্ছে শিল্পিত, রুচিসম্মত, সৌন্দর্যখচিত করে তোলার চেতনা।
ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, নারীকে অবদমনের চেষ্টায় এক শ্রেণির মানুষ মরিয়া হয়ে উঠেছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীর যে শক্ত একটা অবস্থান তৈরি হয়েছে তা ভেঙে দিতে কিছু মানুষ তৎপর। অথচ এই নারীরাই পুরুষদের পাশে থেকে নিজেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করে গড়ে তুলেছেন।
সংস্কৃতির প্যাটার্নের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই নারী-পুরুষের জটিল পার্থক্য,পরিবার, ধর্ম ও রাজনীতির বৈশিষ্ট্য, আইন-শিক্ষা-রাজনীতির বিভেদ। তাই মূল্যবোধের অবক্ষয়, মানবতার গুণাবলির চর্চা ব্যাহত হলে নারী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সভ্যতা বলতে বুঝি আমাদের কামনা-বাসনা আর প্রয়োজনীয়তা।
নারীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা চলছে অনেক জায়গায়। এক ধরনের ভায়োলেন্স সৃষ্টি করে মেনে নেওয়ার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। এভাবে বাধা দিতে থাকলে নারীরা সমাজে পিছিয়ে পড়বে। অন্ধকারের দিকে ধাবিত হবে। শিল্পীর পরিচয় সে শিল্পী। সে নারী নাকি পুরুষ সেটা বড় বিষয় নয়।
কোভিডের পরপরই নারী বাইকার বেশ চোখে পড়েছে। এরা ঘরে বন্দি না থেকে বাইক চালানোর কাজ শিখেছেন। সমাজে অনেকে তাদের ভালোভাবে নিতে পারেননি। অথচ এই বাইকাররা নিজেদের অনেক কাজ সহজেই সামলে নিতে পেরেছেন। আমাদের সমাজে নারীদের কাজকে সব সময়েই হেয়ভাবে দেখা হয়েছে। নারীর কাজের গুরুত্বকে সব সময়েই ভেবেছে টাইমপাস টাইপের। অথচ এই নারীদের সকাল শুরু হয় আলো ফোটার আগেই। ঘরের সব কাজ সেরে বাচ্চাদের স্কুলে পৌঁছে দেওয়া, অফিসে যাওয়া, বাজার-সদাই করা, ইলেকট্রিক বিল,গ্যাসবিল সব গুরুত্বপূর্ণ কাজই নারীর ওপর বর্তায়।
গৃহকর্মই তার জন্য যেন নির্ধারিত একমাত্র কাজ- এ রকম ধারণায় সমাজ চলে যাচ্ছে। বর্তমানে পৃথিবীর নানা দেশে গৃহকাজের জন্য অর্থমূল্য দাবি করা হচ্ছে, নারী ও পুরুষ যৌথভাবে এই কাজ করবে- এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে এখনো গৃহস্থালির কাজ পুরুষের জন্য অবমাননাকর হিসেবে বিবেচ্য-ধনী-গরিব সর্বত্র। নারীদের যেভাবে ঠেকানোর চেষ্টা চলছে সেটা প্রতিহত করতে হবে সবাইকেই। রাষ্ট্র এবং সমাজকেই জরুরিভাবে তা প্রতিহত করতে হবে। নারীদের নিরাপত্তা দিতে হবে। সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখে নারীসমাজ।
পুরুষরা যে সব অধিকার, স্বাধীনতা, সুযোগ ভোগ করেন নারীরা- তা অনেক ক্ষেত্রে পান না। এই বৈষম্যের অবসান প্রয়োজন। নারীর কর্মক্ষেত্র প্রসারিত হলেই সংস্কৃতি বিচিত্ররূপে বিকশিত হতে পারে সব ক্ষেত্রেই।