বিশেষ কিছু কাজে রোবট উন্নতি করলেও প্রকাশ্য রাজপথে এখনো তাদের দেখা যায় না। রোবট এখন শুধু ঘরেই সীমাবদ্ধ থাকবে না- ঘরের বাইরেও দেখা যাবে। জার্মানিতে এমন রোবট তৈরি করা হয়েছে, যে পার্সেল বিলি করবে। তবে সব সময় সেটির ওপর নজর রাখা হবে। অর্থাৎ খুব সহজেই বলা যায়, ভবিষ্যতে ডেলিভারি সার্ভিস হবে রোবটের সাহায্যে। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে, চাকার ওপর বাক্স বসানো আছে। কিন্তু এর ভেতর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অনেক হাইটেক ভরা। প্রায় সম্পূর্ণ স্বাবলম্বী এই রোবট হয়তো অদূর ভবিষ্যতে জার্মানিতে পার্সেল বিলি করতে যাচ্ছে। রোবটটির নাম 'টেও'। হে-টেও কোম্পানি এই রোবট তৈরি করেছে। এটি একটি কার্গোভিত্তিক অটোনমাস ভেহিকেল। একই সঙ্গে হালকা ওজনের বিদু্যৎচালিত যানও বটে। পুরোপুরি ইলেকট্রিক শক্তিতে চলবে এই ভেহিকেল। সেন্সর ব্যবহারের ক্ষেত্রে অটোনমাস কারের সঙ্গে অনেক মিল থাকায় রোবটটি অত্যন্ত নিরাপদ। প্রথম এল-ফোর অটোনমাস ভেহিকেল হিসেবে এটি খুব শিগগিরই জার্মানির রাজপথে দেখা যাবে।
ক্যামেরা ও সেন্সরের দৌলতে রোবট চারদিকে সবকিছুই দেখতে পায়। পথে কোনো বাধাবিপত্তি, পথচারী বা ট্রাফিক লাইটও চিনতে পারে এই যন্ত্রমানব। তবে একা পথে নামার ক্ষমতা থাকলেও সেটি কার্যকর করা এখনই সম্ভব নয়। এখনো এই প্রণালির প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখার সময় আসেনি। মানুষের বুদ্ধির ব্যবস্থাও এতে রাখা হয়েছে- যা সঠিক ফিডব্যাক দিয়ে কম্পিউটারের বুদ্ধিমত্তার সম্পূরক হিসেবে কাজ করবে। অন্যদিকে, জার্মানির এক নতুন আইনের আওতায় রাজপথে এল-ফোর অটোনমির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এজন্য সব সময়ে তত্ত্বাবধায়ক রাখতে হবে, যিনি রোবটের দিকে নজর রেখে রোবটের হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
শুধু এমন ছোট রোবট নয়- অটোনোমাস বাস, গাড়ি বা ট্রাকও জার্মানির রাজপথে নামতে পারে। প্রশ্ন হলো, এমন যান ও রাজপথে বাকি যান বা মানুষ এর ফলে, কতটা নিরাপদ থাকবে? 'ইনোক্যাম এনআরডবিস্নউ' সংগঠনের প্রপাইটর লুৎস একস্টাইন মনে করেন, এটা এ কারণে নিরাপদ যে, সবার আগে প্রস্তুতকারী কোম্পানিকে জার্মান ফেডারেল পরিবহণ কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র পেতে হবে। আইন অনুযায়ী নিরাপত্তার চাহিদা পূরণ করলে তবেই কোনো যান সেই সবুজ সংকেত পাবে।
\হচলার সময়েও এর নিরাপত্তা বজায় থাকে। কারণ আইন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে যানের ওপর নজর রাখা হবে। কঠিন পরিস্থিতিতে রোবট একা সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে সেখান থেকে সাহায্য করা হবে।
'টেও' কোনো দুর্ঘটনা ঘটালে তার দায় মালিকের ঘাড়ে পড়বে। টেওকে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যানপ্রতি একজন করে চালকের আর প্রয়োজন নেই। একজন কর্মী একাধিক রোবট নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। ফলে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ব্যয় কমে যাবে। বর্তমানে ডেভেলপার প্রোটো-টাইপটিকে আরও নিখুঁত করার চেষ্টা করছেন। প্রত্যেকটি বিষয়ই অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। প্রোটো-টাইপটিকে বাক্সে ভরে ইতালিতে পাঠানো হয়েছে। সেখানে খোলা রাজপথে 'টেও' প্রথমবার কয়েকটি ট্রিপ শেষ করেছে। রোবটটি আপাতত পুলিশের পাহারায় থাকলেও একে দেখে শিশুরা ভীষণ আনন্দ পাচ্ছে। আগামী ২০২৪ সালে 'টেও' একাই পথে নামার অনুমতি পাবে। আমরাও দেখতে পাব- রোবট শুধু ঘরেই নয়, প্রকাশ্য রাজপথে বেরিয়ে পার্সেল বিলি করবে।