বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

ভুল থেকেই নতুন কিছু

প্রদীপ সাহা
  ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ভুল থেকেই নতুন কিছু
ভুল থেকেই নতুন কিছু

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে বিভিন্ন জিনিসই আবিষ্কার হয়েছে। প্রত্যেক আবিষ্কারকই একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে গবেষণা চালান। তিনি কী আবিষ্কার করতে যাচ্ছেন এবং তা করতে তার কী কী উপাদান লাগতে পারে, সেটা আগে থেকেই চিন্তাভাবনা করে রাখেন। যদিও সব ক্ষেত্রে একজন উদ্ভাবক সফলতা পান না, তবু তিনি কী আবিষ্কার করতে যাচ্ছেন তা তার কাছে স্পষ্ট এবং সেই লক্ষ্যেই তিনি কাজ করেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, পৃথিবীতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আবিষ্কৃত হয়েছে- যা আসলে আবিষ্কার করতে চাননি আবিষ্কারক। যা হওয়ার তা হয়েছে দুর্ঘটনাবশত।

পটেটো চিপস : জনপ্রিয় এ খাবারটি তৈরি হয়েছে কিছুটা ভুল আর কিছুটা ক্ষোভবশত। আমেরিকার সারাটোগা স্প্রিংস শহরের এক হোটেলের বাবুর্চি ছিলেন জর্জ ক্রোম। ১৮৫৩ সালের ২৪ আগস্ট রাতে তার এখানে এক খদ্দের এসে আলু ভাজার অর্ডার দেন। সরবরাহ করার পর ভদ্রলোক তা ফিরিয়ে দিয়ে বলেন যে, আলুগুলো খুব বেশি মোটা করে কাটা হয়েছে এবং এগুলো খুব বেশি আর্দ্র। আবার সরবরাহ করার পর খদ্দের একই অভিযোগ করেন এবং বলেন, খাবারে লবণও কম দেয়া হয়েছে। ম্যানেজারের ভর্ৎসনা শুনে ক্ষেপে যান বাবুর্চি ক্রোম। তিনি এবার কাগজের মতো পাতলা করে আলুগুলো কাটলেন ও কড়া করে তেলে ভাজলেন, যাতে খদ্দের কাঁটাচামচ দিয়ে খেতে না পারেন। সবশেষে আলু ভাজার ওপর ছড়িয়ে দিলেন মাত্রারিক্ত লবণ। খদ্দেরকে শায়েস্তা করাই ছিল ক্রোমের উদ্দেশ্য। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, নিমেষেই আলু ভাজা সাবাড় করে ফেললেন ভদ্রলোক। অর্ডার দিলেন আরও এমন আলুভাজা নিয়ে আসার জন্য। এভাবেই জন্ম নিল মুখরোচক পটেটো চিপসের।

স্যাকারিন : জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে খনিজ আলকাতরা নিয়ে গবেষণা করছিলেন ইরা রেমসন ও সি ফাহালবার্গ। ১৮৭৮ সালে একদিন কাজ করে ক্ষুধার্ত রেমসন ও ফাহালবার্গ খেতে বসলেন। তড়িঘড়ি খেতে বসায় হাত ধুতে ভুলে গেলেন ফাহালবার্গ। খাওয়ার সময় তিনি টের পেলেন, খাবার মিষ্টি মিষ্টি লাগছে। রেমসনকে এ ব্যাপারে জানালে দু'জনই টের পেলেন, যে পদার্থ নিয়ে তারা গবেষণা করছেন, তা থেকে কৃত্রিম চিনি জাতীয় পদার্থ উৎপাদন করা সম্ভব। পরে ফাহালবার্গ এটি পেটেম্স্নট করে নাম দেয় স্যাকারিন।

ব্রান্ডি : মধ্যযুগে ব্যবসায়ী বা নাবিকরা জাহাজে করে ওয়াইন সরবরাহ করার আগে ওয়াইন থেকে পানি বের করে নেওয়ার জন্য বয়েল করত। কিন্তু একবার এক নাবিক ওয়াইন সিদ্ধ না করে ভুলবশত তা কাঠের বাক্সে সংরক্ষণ করে। দীর্ঘদিন পর পান করার সময় তারা টের পায়, এর স্বাদ সম্পূর্ণ আলাদা এবং আরও উপাদেয়। এভাবেই তৈরি হয় প্রথম ব্রান্ডি।

সুপার গস্নু : স্বচ্ছ পস্নাস্টিক আবিষ্কারের জন্য সিয়ানোএক্রিলেটস নিয়ে ১৯৪২ সালে কোডেক ল্যাবরেটরিসে কাজ করছিলেন ড. হ্যারি কুভার ও তার সহকারী ফ্রেড। তখন তিনি দেখতে পান, নতুন তৈরি হওয়া পদার্থটি খুব বেশি আঠালো এবং তা সবকিছুতেই শক্তভাবে লেগে যাচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় ভেবে প্রকল্পটি বাতিল করলেন কুভার। এর ঠিক ছয় বছর পর আবার একদিন কুভার কাজ করছিলেন বিমানের ককপিটের ওপর স্বচ্ছ আচ্ছাদন তৈরির জন্য। এক্ষেত্রেও তিনি সিয়ানোএক্রিলেটস ব্যবহারে একই সমস্যায় পড়েন। কোনো তাপ বা চাপ ছাড়াই এটি খুব বেশি আঠালো লাগছিল কুভারের কাছে। এবার আর ভুল করলেন না কুভার। প্রকল্পটি বাতিল না করে দুটি গস্নাসকে সিয়ানোএক্রিলেটস দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে সফল হলেন। ১৯৫৮ সালে পেটেম্স্নট করে সুপার গস্নু নামে বাজারে ছাড়লেন নতুন এ আঠা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে