বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাইলেন অধিনায়ক শান্ত

আমরা ব্যাটিং গ্রম্নপ হিসেবে দেশের মানুষকে ভালো কিছু দিতে পারিনি। এটার জন্য আমরা সরি (উই ফিল সরি)। সামনের দিকে আমাদের এটাই চেষ্টা থাকবে, কীভাবে এখান থেকে বের হয়ে আসতে পারি - নাজমুল হোসেন শান্ত
ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ২৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাইলেন অধিনায়ক শান্ত
সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাইলেন অধিনায়ক শান্ত

সুপার এইটের নিজেদের শেষ ম্যাচে সেন্ট ভিনসেন্টে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেমিফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে নিজেদের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা হয়নি বাংলাদেশের। এমনকি বৃষ্টি আইনেও শেষ পর্যন্ত ৮ রানের ব্যবধানে হেরে শেষ হয়েছে টাইগারদের বিশ্বকাপ যাত্রা।

টি২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার সুবর্ণ সুযোগ ছিল বাংলাদেশের সামনে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সমীকরণ মিলিয়ে ম্যাচ জিততে পারলেই যে কোনো বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শেষ চারে পৌঁছানোর সুযোগ থাকতো। শেষ চার নিশ্চিতের লক্ষ্যে শুরুতে আশা দেখিয়েছিলেন টাইগার বোলাররা।

1

ব্যাট করতে নেমে ম্যাচের একটা সময়ে দলের ব্যাটারদের দেখে মনে হয়েছে পরের পর্বে যাওয়ার ইচ্ছাটাই যেন নেই! কোনো রকমে ম্যাচ জিতলেই যেন বেঁচে যায়। অবশ্য শেষ পর্যন্ত টাইগারদের জয়টাও অধরা থেকে গেছে।

এই ম্যাচের চিত্র ভিন্নও হতে পারতো যদি ব্যাটসম্যানরা দায়িত্ব নিয়ে খেলত। শুধু এক লিটন দাস বাদে কোনো ব্যাটসম্যানই এদিন ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।

সাত ম্যাচে জয় তিনটি। জয়ের সংখ্যা হিসেব করলে আগের সব আসরকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, প্রথম আসরের পর এবারই প্রথম খেলল সেরা আটে। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্স বিশেষ করে, ব্যাটিং বিভাগ ছিল খুবই নড়বড়ে। ব্যাটিং ব্যর্থতা মাথায় নিয়েই শেষ ম্যাচ হেরে টুর্নামেন্ট শেষ করল তারা।

হতাশায় ভরা এই বিশ্বকাপে নিজেদের সামগ্রিক পারফরম্যান্স নিয়ে সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাইলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ের পর ব্যাটিং ব্যর্থতা মেনে নিয়ে কয়েকবার 'সরি' বললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

ম্যাচের শুরুতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান সংগ্রহ করে ১১৫ রান। জয়ের জন্য ব্যাট করতে নেমে টাইগারদের ইনিংস থামে ১০৫ রানে। এই জয় নিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে আফগানরা। বাংলাদেশের হারের সাথে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকেও।

বিশ্বকাপ শেষ টাইগারদের পরে ব্রডকাস্টকে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, 'আমি মনে করি আমরা ভালো বোলিং করেছি। কিন্তু ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে আমরা খারাপ খেলেছি, সিদ্ধান্ত ভালো নেয়নি বিশেষ করে মাঝের ওভারে।'

অধিনায়ক শান্তর কণ্ঠে আসরের সবচেয়ে হতাশার জায়গা সেই ব্যাটিং ইউনিট, 'পুরো টুর্নামেন্টে আমরা সত্যিই ভালো বোলিং করেছি, বিশেষ করে রিশাদ, পেসাররা সত্যিই ভালো করেছে। ব্যাটিংয়ে উন্নতি করতে হবে, টপ অর্ডার ভালো পারফর্ম করতে পারেনি। আমরা ব্যাট হাতে ভালোভাবে খেলতে পারিনি এবং অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'

সেমিফাইনালের সমীকরণ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, 'পরিকল্পনাটা এমন ছিল যে আমরা প্রথম ৬ ওভার চেষ্টা করব। পরিকল্পনা ছিল, যদি আমরা ভালো শুরু করি, দ্রম্নত উইকেট যদি না পড়ে, তাহলে আমরা সুযোগটা নেব। কিন্তু যখন আমাদের দ্রম্নত ৩ উইকেট পড়ে গেল, তখন আমাদের পরিকল্পনা ভিন্ন ছিল, যেন আমরা ম্যাচটা জিততে পারি। তারপরও আমি বলব, মিডল অর্ডার ভালো সিদ্ধান্ত নেয়নি। যার কারণে ম্যাচটা আমরা হেরে গেছি।'

নিজেদের বোলিং নিয়ে শান্ত বলেন, 'বোলিংয়ে আমাদের পরিকল্পনা ছিল শুরুর দিকে উইকেট নেওয়া। কিন্তু গুরবাজ ও ইব্রাহিম খুব ভালো ব্যাটিং করেছে। মাঝের ওভারে আমরা খেলা নিয়ন্ত্রণ করেছি। বোলাররা দারুণ করেছে। আমি ব্যাটিং গ্রম্নপের কথা বলব যে বিশেষ করে মিডল অর্ডারে খুব বাজে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এটারই মূল্য দিতে হয়েছে আমাদের।'

তাওহিদ হৃদয়কে ৬ নম্বরে খেলানোর কারণ জানিয়ে শান্ত বলেন, 'ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে আমি বলব, আজকে আমরা যে পরিবর্তনটা করার চেষ্টা করেছি, সেটা বাঁহাতি-ডানহাতি সমন্বয়ের কারণে। লিটন এক দিকে ব্যাটিং করছিল। ওদের বোলিংয়ে অনেক বৈচিত্র্য ছিল। এ কারণে বাঁহাতি-ডানহাতি সমন্বয়ের প্রয়োজন ছিল। এটা সবাই জানত। সবাই এ ব্যাপারে পরিষ্কার ছিল।'

সমর্থকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারায় ক্ষমা চেয়েছেন শান্ত। টাইগার অধিনায়ক বলেন, 'বিশ্বকাপের পুরো যাত্রা সম্পর্কে বলব, আমরা দল হিসেবে বাংলাদেশের সব সমর্থককে হতাশ করেছি। যারা আমাদের খেলা অনুসরণ করেন, সবসময় অনুসরণ করেন তাদের লেট ডাউন করেছি। আমি দলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইছি (টিমের পক্ষ থেকে এপোলোজাইজ)।'

সামনে ভালো করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা ব্যাটিং গ্রম্নপ হিসেবে দেশের মানুষকে ভালো কিছু দিতে পারিনি। এটার জন্য আমরা সরি (উই ফিল সরি)। সামনের দিকে আমাদের এটাই চেষ্টা থাকবে, কীভাবে এখান থেকে বের হয়ে আসতে পারি।'

বিশ্বকাপের ভালো দিক নিয়ে শান্ত বলেন, 'ইতিবাচক দিক অবশ্যই বোলাররা খুবই ভালো বোলিং করেছে। রিশাদ এরকম একটা টুর্নামেন্টে এসে সবগুলা ম্যাচে ভালো বোলিং করেছে। বেশ কিছু ইতিবাচক দিকও ছিল। তবে ব্যাটিং দিক থেকে আমরা সমর্থকদের হতাশ করেছি। দেশের মানুষকে আমরা বলতে গেলে কষ্ট দিয়েছি। তবে এটাও আমি বলতে চাই, চেষ্টার কমতি ছিল না। শতভাগ দিয়ে সবাই চেষ্টা করেছে। সবাই নিজের কাজে সৎ ছিল। তবে আমরা দিন শেষে পারিনি। তাই এটার জন্য দলের পক্ষ থেকে সরি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে