টিকেট বুথের সামনে থেকে দর্শকের লাইন চলে গেছে এক নম্বর ফটক ছাড়িয়ে আরও দূরে। কিন্তু বুথ বন্ধ। লাইনে থাকা দর্শকেরা জানেন না, বুথ কখন খুলবে বা আদৌ খুলবে কি না। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মূল ফটকের সামনে তখন উত্তেজনা তুঙ্গে। সেখানে স্স্নোগান, চিৎকার, গালিগালাজ চলছে সমানে। তাদের কথা, টিকেট না নিয়ে যাবেন না কেউ।
আজ সোমবার থেকে শুরু হবে বিপিএলের এবারের আসর। কিন্তু টিকিট নিয়ে কোনো তথ্য বিসিবি জানায়নি রোববার সকাল পর্যন্ত। টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন অন্তত টিকিট ছাড়া হবে, এই আশায় বুথের সামনে সকাল থেকেই দাঁড়িয়ে যান অনেক দর্শক। তাদেও কারো কারো দাবি, ভোর চারটা-পাঁচটা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন না। কিন্তু কারও কাছ থেকে টিকিট সংক্রান্ত কিছু তারা জানতে পারেননি।
এক পর্যায়ে দর্শকদের বড় অংশ ভিড় জমায় মূল ফটকের (দুই নম্বর) সামনে। নিরাপত্তাকর্মীরা ফটকবন্ধ করে দেন আগেই। বিসিবির নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে সেখানে ছিলেন পুলিশ সদস্যরাও। ফটকের সামনে জড়ো হয়ে বিসিবির বিরুদ্ধে নানা রকম স্স্নোগান দিতে থাকেন দর্শকেরা। ফটক খুলে ফেলার চেষ্টা করেন তারা অনেকটা সময় ধরে। তাদের প্রবল ধাক্কাধাক্কিতে এক পর্যায়ে ফটক খুলে যায়। স্রোতের মতো ভেতরে ঢুকতে থাকেন দর্শকেরা। তাদের ধাওয়া দিয়ে তখন সরিয়ে দেন পুলিশ সদস্যরা। দৌড়ানোর সময় পড়ে গিয়ে আঘাত পান দর্শকদের বেশ কয়েকজন।
পরমুহূর্তেই দর্শকেরা আবার সংগঠিত হয়ে জড়ো হন ফটকের সামনে। ততক্ষণের লোহার ফটক তালাবদ্ধ করে লোহার বড় খিল এঁটে দেওয়া হয়। এরপর অনেক ধাক্কাধাক্কি করেওআর ফটক খুলতে পারেননি দর্শকেরা। তবে বিসিবির বিরুদ্ধে গালিগালাজ ও স্স্নোগান চলতে থাকে লম্বা সময় ধরে।
ক্ষুব্ধ দর্শকদের একজন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন,' নতুন দেশে এবার বিপিএল নতুনভাবে করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল বিসিবি। কিন্তু কিছু কনসার্ট করা ছাড়া নতুন কিছু আর দেখি না। সবকিছু আগের মতোই। টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিনও টিকেটের কিছু জানানো হয়নি। দর্শকদের কোনো গুরুত্বই দেয় না বিসিবি।' পাশ থেকে আরেক দর্শক যোগ করেন, "এটা কি পাড়া-মহলস্নার টুর্নামেন্ট? বিশ্বের আর কোন দেশের লিগে শুরুর আগের দিনও টিকিট পাওয়া যায় না? এটা কেবল বিপিএলেই সম্ভব।'
প্রবল ক্ষোভ ও হতাশার কথা জানান ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা এক দর্শক,' চার-পাঁচ ঘণ্টা কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু কাউন্টার খোলেই না। পরে আমরা এই গেইটে আসি। এখানে আমাদেরকে বারবার বলা হয়েছে যে '১০ মিনিট পর জানাবে', '১৫ মিনিট পর জানাবে', কিন্তু জানানো আর হয়নি। সকাল থেকে আমরা না খেয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের কোনো মূল্য কি বিসিবির কাছে নেই? তারা কালোবাজারি করে, সিন্ডিকেটবাজির জন্য টিকেট ছাড়ছে না।" দর্শকদের কেউ কেউ তখন উত্তেজিত হয়ে বলেন, "কালকেই বিসিবির আনসারদের কাছে ২০০-৪০০ টাকায় টিকিট পাওয়া যাবে।"
দর্শকদের এমন হট্টগোলের পর অবশেষে পৌনে ১২টায় টিকেট সংক্রান্ত তথ্য বিস্তারিত জানানো হয়। অনলাইনে ওয়েব ঠিকানায় টিকিট পাওয়া যাবে। তবে সেখানে টিকেট করার পর আবার বুথ থেকে তা সংগ্রহ করতে হবে কি না, এসব বিস্তারিত জানানো হয়নি। এছাড়াও মধুমতি ব্যাংকের সাতটি শাখায় টিকেট পাওয়া যাবে- মিরপুর, মতিঝিল, উত্তরা, গুলশান, ধানমন্ডি, কামরাঙ্গির চর ও পল্টন।
দেশের রাজনৈতিক পালাবদলের পর ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব নিয়ে বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেছিলেন, যতটা সম্ভব গোছানোভাবে টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চান তারা এবং প্রায় শতভাগ টিকেট অনলাইনে পাওয়া যাবে। কিন্তু টিকিট নিয়ে টানাপোড়েন শেষ পর্যন্ত আগের বিপিএলগুলোর মতোই রয়ে গেল। বিসিবি পরিচালক ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব নাজমুল আবেদীন পরে সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের ব্যর্থতার দায় নিয়েই দাবি করলেন, ব্যাপারটি শুধু বিসিবির নিয়ন্ত্রণে ছিল না। তিনি বলেন,' দায়ভার তো অবশ্যই আমাদের নিতে হবে। অ্যাজ সিম্পল অ্যাজ দ্যাট। যারা খেলা দেখতে চান বা যারা আগ্রহী, তাদের কাছে তথ্যগুলি আরও আগে যাওয়া উচিত ছিল। না যাওয়ার দায় পুরোপুরি আমাদের।'
আগের মতো না হলে ভালো হতো। আমি ঠিক জানি না, সুনির্দিষ্ট করে কী হয়েছে। তবে শুধু বিসিবির ব্যাপার নয়। এখানে ব্যাংক ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের ব্যাপার ছিল, টিকেট দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য। সেখানে কিছু ঘাটতি হয়তো রয়ে গেছে। তবে দায়টা অন্য কাউকে দেওয়া যাবে না, দায় ক্রিকেট বোর্ডেরই এবং মাথা পেতে নিতে হবে দায়।'