চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) যেন অজেয় হয়ে পড়েছিল রংপুর রাইডার্স। কোনো দলই তাদের সামনে পাত্তা পাচ্ছিল না। এবারের আসরে টানা আট ম্যাচ জিতে সবার আগে পেস্ন-অফে খেলা নিশ্চিত করেছিল নুরুল হাসান সোহানের দল।
আট ম্যাচের আটটিতেই জয়। এমন অপ্রতিরোধ্য দলকে কে ঠেকাবে! অবশেষে সেই রংপুরও হোঁচট খেল, সেটাও এমন এক দলের বিপক্ষে, যারা চলতি বিপিএলে মাঠ ও মাঠের বাইরে পার করছে সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত সময়-দুর্বার রাজশাহী। অবশেষে রাইডার্সদের জয়রথ থামালো দুর্বার রাজশাহী। বৃহস্পতিবার ২৪ রানের জয়ে নিজেদের পেস্ন-অফের সম্ভাবনাও জোরালো করলো তাসকিন আহমেদের দল রাজশাহী। নয় ম্যাচে চতুর্থ জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে সেরা চারে উঠে এসেছে তারা।
ব্যাট হাতে কিছুই করতে পারতে পারেননি রায়ান বার্ল। তবে বল হাতে গর্জে উঠলেন এই জিম্বাবুইয়ান। রংপুর রাইডার্সকে আশা দেখানো অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে তো ফিরিয়েছেনই, সঙ্গে তুলে নিয়েছেন আরও দুটি উইকেট। তাতে রংপুরকে আসরের প্রথম হারের স্বাদ দিল দুর্বার রাজশাহী।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার বিপিএলের গ্রম্নপ পর্বের ম্যাচে রংপুর রাইডার্সকে ২৪ রানে হারিয়েছে তাসকিন আহমেদের দল। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৭০ রান করে রাজশাহী। জবাবে ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায় রংপুর।
বিপিএল মানেই নেতিবাচক খবরে ছড়াছড়ি, সেটা ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে নিয়েও। কোন দল নিয়ে নেতিবাচক আলোচনাটা বেশি জমে উঠছে, সেটাই দেখার থাকে। খেলোয়াড়দের টাকা-পয়সা সময়মতো না দেওয়ার অভিযোগে এবারের বিপিএলে যেমন এখন পর্যন্ত আর সবাইকে এদিক দিয়ে ছাড়িয়ে গেছে দুর্বার রাজশাহী। কিছু কারণে তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বলা যায় চিটাগাং কিংস ও ঢাকা ক্যাপিটালকে। বিপিএলের অন্য চার ফ্র্যাঞ্চাইজিকে নিয়ে অবশ্য এখন পর্যন্ত সেরকম কোনো খবর নেই।
টানা আট ম্যাচ জেতার পর যে কোনো দলের বিপক্ষেই রংপুরের হার অঘটন হতো। সেটি রাজশাহীর বিপক্ষে হওয়ায় তো বিরাট বড় অঘটন! রাজশাহীর ৯ উইকেটে করা ১৭০ রানের জবাবে রংপুর জেতার মতো অবস্থায় ছিল না কখনোই। ১৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে শুরুটাই নড়বড়ে হওয়ার পর আর একবারের জন্যও খেলায় ফিরতে পারেনি তারা। সাইফ হাসানের ২৯ বলে ৪৩ এবং অধিনায়ক নুরুল হাসানের ২৬ বলে ৪১ রানের ইনিংস দুটি আরেকটু বড় হলে সম্ভাবনা ছিল শেষটা ভালো হওয়ার। কিন্তু দুজনের কেউই তা পারেননি।
রাজশাহীর ইনিংসের শেষটাও ছিল খুবই বাজে। ৩ উইকেটে ১৫২ রান থেকে ইনিংসের শেষ ৪.১ ওভারে আর ১৮ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলাটাকে আর কী বলবেন! তাদের ৯ উইকেটে করা ১৭০ রানে ইয়াসির আলীর অবদানই জ্বলজ্বলে বেশি। ছয় ছক্কা আর দুই বাউন্ডারিতে ৩২ বলে ৬০ রান করেছেন খুশদিল শাহর বলে কট বিহাইন্ড হওয়ার আগে। ১৫২ রানের মাথায় ওটা ছিল রাজশাহীর চতুর্থ উইকেট হারানো এবং এরপরই ধস, যেটি ত্বরান্বিত হয়েছে পরের ওভারে এনামুল হকের অদ্ভুত রান আউটে।
১৭তম ওভারে আকিফ জাভেদের প্রথম বলটা ডিফেন্স করেছিলেন আকবর আলী। রান নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না, তাকিয়ে ছিলেন মিড অনের দিকে যাওয়া বলের দিকে। ওদিকে এনামুল কোনো দিকে না তাকিয়েই এক দৌড়ে উল্টো দিকের ক্রিজে। ফিল্ডার খুশদিল শাহ বেশ আয়েশ করেই রান আউট করে দেন তাকে।
ওই ওভারের শেষ বলে আকবরও ফেরেন বোল্ড হয়ে। ১৯তম ওভারে সানজামুল ইসলাম আর অধিনায়ক তাসকিন আহমেদকে ফিরিয়ে ২৩ রানে মোট তিন উইকেট আকিফের। ৩১ রানে ৩ উইকেট নেন রংপুরের আরেক পাকিস্তানি খুশদিল শাহও। অষ্টম ওভারে সাব্বির হোসেন ও রায়ান বার্লকে পরপর দুই ওভারে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন খুশদিল।
রাজশাহীর রায়ান বার্ল ২২ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন। তাসকিন ও মেহরবের উইকেট দুটি করে। ১ উইকেট করে পেয়েছেন শফিউল ও সাব্বির। আগের ম্যাচগুলোর ভ্রম্ন কুঁচকে দেওয়া বোলিংয়ের কারণেই শফিউলের বৃহম্পতিবার ৩ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে ১ উইকেট নেওয়াটাকে বিশেষ কিছুই মনে হচ্ছে। মেহেদী হাসানের কাছে শেষ বলে বাউন্ডারি না খেলে নিজের তৃতীয় ওভারটা তো মেডেনই পেয়ে যাচ্ছিলেন এক সময় জাতীয় দলে খেলা এই পেসার!