বলিউডের সফল তারকাদের একজন হৃতিক রোশন। ভক্তের সংখ্যার দিক দিয়েও তিনি বেশি এগিয়ে। ২০ বছরের বেশি সময় দর্শকদের মুগ্ধ করে চলেছেন এই তারকা। তার আকর্ষণীয় লুক, ক্যারিশমাটিক উপস্থাপনা ও বহুমুখী প্রতিভা ভক্তদের খুবই পছন্দ। অভিনয় ক্যারিয়ারে তিনি কেবল তারকাচালিত ভূমিকাতে অভিনয় করেননি, চরিত্রচালিত চ্যালেঞ্জও নিয়েছেন, সফলও হয়েছেন। বক্স অফিসে তার সিনেমাগুলো ভালো দাপট দেখাতে পেরেছে। চলতি বছরে মুক্তি পেতে চলেছে হৃতিকের তিনটি সিনেমা। যেখানে তার পাশাপাশি জুনিয়র এনটিআর, কিয়ারা আদভানি এবং আলিয়া ভাটকে অভিনয় করতে দেখা যাবে।
ওয়ার-২: হৃতিক রোশন তার অ্যাকশন লুক, চমৎকার নাচের ভঙ্গি এবং ভিন্ন ধারার স্টাইল দিয়ে 'ওয়ার' সিনেমায় কবির চরিত্রে ভক্তদের মুগ্ধ করেছিলেন। সিনেমাটিতে তার সহ-অভিনেতা ছিলেন টাইগার শ্রফ। এবার সেই সিনেমার সিকু্যয়েল 'ওয়ার-২'তে ফিরে আসতে চলেছেন হৃতিক। যেখানে প্রথমবারের মতো তার বিপরীতে অভিনয় করছেন কিয়ারা আদভানি ও দক্ষিণী সুপারস্টার জুনিয়র এনটিআর। সিনেমাটির শুটিং ফেব্রম্নয়ারি ২০২৪ সালে শুরু হয়েছিল এবং এটি ২০২৫ সালের ১৪ আগস্ট মুক্তি পাবে।
কৃষ-৪: হৃতিক রোশন যখন বি-টাউনে তার ভারতীয় সুপার হিরো ফ্র্যাঞ্চাইজি কৃষ নিয়ে এসেছিলেন, তখন তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে নিজের শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছিলেন। সিনেমাটির সাফল্যে হৃতিকের ক্যারিয়ার উত্থান তো ঘটেই এবং দর্শকরাও ছবিটির সব কিস্তি ভীষণভাবে উপভোগ করেছিলেন। তবে নতুন বছরে ভক্তদের চমকে দিয়ে আসতে চলেছে 'কৃষ-৪' সিনেমা।
পিঙ্কভিলা সূত্রে জানা যায়, ওয়ার-২ এর শুটিং শেষ করার পর হৃতিক ২০২৫ সালের গ্রীষ্মে কৃষ-৪ শুটিং শুরু করবেন। সিনেমাটি পরিচালনা করবেন আগ্নিপথ সিনেমার পরিচালক করণ মালহোত্রা এবং অভিনেতার বাবা রাকেশ রোশন প্রযোজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সিনেমাটির শুটিং মুম্বাই এবং ইউরোপের কিছু অংশে করা হবে। তবে সিনেমা ২০২৫ সালে মুক্তির কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তারিখ নিশ্চিত করেননি নির্মাতা। চলচ্চিত্রটিতে হৃতিকের পাশাপাশি অভিনয় করবেন নোরা ফাতেহি, প্রীতি জিনতা, নাসির উদ্দিন শাহসহ আরও অনেকে।
আলফা: পাঠান, টাইগার এবং ওয়ার সিরিজের পর যশরাজ ফিল্মস তার স্পাই ইউনিভার্সকে আরও সম্প্রসারণ করতে চলেছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তি পেতে চলেছে 'আলফা' সিনেমা। ছবিটির প্রধান চরিত্রে আলিয়া ভাট ও শর্বরী ওয়াগ থাকলেও সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে ক্যামিও চরিত্রটি নিয়ে। যেখানে হাজির হবেন হৃতিক রোশন।
পিঙ্কভিলার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হৃতিক ২০২৪ সালের ৯ নভেম্বর মুম্বাইয়ে আলফার শুটিং শুরু করেন। তিনি আলিয়া ভাট ও শর্বরীর সঙ্গে অ্যাকশন-প্যাকড সিকোয়েন্স শুটিংয়ের আগে তিন দিনব্যাপী কঠোর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, পরিচালক শিব রাওয়াইল এবং প্রযোজক আদিত্য চোপড়া অভিনেতার জন্য একটি বিশেষ অ্যাকশন সিকোয়েন্স ডিজাইন করেছেন, যাতে দর্শকদের জন্য একটি স্মরণীয় সিনেমাটিক মুহূর্ত তৈরি করা যায়। সিনেমাটি ২০২৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে।
হৃতিক রোশান ১৯৭৪ সালের ১০ জানুয়ারি বোম্বে শহরে বলিউডের এক প্রখ্যাত পাঞ্জাবি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা চলচ্চিত্র পরিচালক রাকেশ রোশন ও মাতা পিঙ্কি রোশন। তার পিতামহ সঙ্গীত পরিচালক রোশনলাল নাগরথ ও মাতামহ পরিচালক জে. ওম প্রকাশ। তার চাচা রাজেশ রোশন একজন সুরকার। তার বড় বোন সুনয়না। হৃতিক বোম্বে স্কটিশ স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। তিনি তার পিতামহের দিক থেকে বাঙালি বংশোদ্ভূত। হৃতিক প্রায়শই তার বাবা রাকেশ রোশনের সঙ্গে কাজ করে থাকেন। ১৯৮০-এর দশকে বেশ কয়েকটি ছবিতে হৃতিক শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছিলেন। পরে রাকেশ রোশন পরিচালিত চারটি ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবেও কাজ করেন তিনি। কাহো না... প্যায়ার হ্যায় (২০০০) ছবিতে তিনি প্রথমবার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিটি বক্স-অফিসে সাফল্য অর্জন করেছিল এবং এতে অভিনয় করে হৃতিক বেশ কয়েকটি পুরস্কারও অর্জন করেছিলেন। ২০০০ সালে সন্ত্রাসবাদ নাট্যধর্মী ফিজা এবং ২০০১ সালে একাধিক তারকাসংবলিত প্রণয়মূলক নাট্যধর্মী কভি খুশি কভি গম... ছবি দু'টি তাকে বিশেষ খ্যাতি অর্জনে সাহায্য করে। কিন্তু তার অভিনীত পরবর্তী কয়েকটি ছবি সাফল্য অর্জনে ব্যর্থ হয়।
২০০৩ সালে বিজ্ঞান কল্পকাহিনীনির্ভর কোই... মিল গয়া চলচ্চিত্রে অভিনয় করে হৃতিক দু'টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও সমালোচকদের বিচারে) পান। এই ছবিটি তার অভিনয় জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এই ছবিটির দু'টি অনুবর্তী পর্ব নির্মিত হয় : কৃষ (২০০৬) ও কৃষ ৩। এই দু'টি ছবিতেও নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন হৃতিক এবং ছবি দু'টিও প্রভূত সাফল্য অর্জন করেছিল।
২০০৬ সালে রোমাঞ্চকর চলচ্চিত্র ধুম-২ এ তিনি এক চোরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ২০০৮ সালে ঐতিহাসিক প্রণয়ধর্মী জোধা আকবর ছবিতে মুঘল সম্রাট আকবরের ভূমিকায় এবং ২০১০ সালে নাট্যধর্মী গুজারিশ চলচ্চিত্রে একজন কোয়াড্রিপেস্নজিক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি সর্বত্র প্রশংসা অর্জন করেন। এরপর তার অভিনীত নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র জিন্দগি না মিলেগি দোবারা (২০১১), প্রতিশোধমূলক চলচ্চিত্র অগ্নিপথ (২০১২) ও মারপিটধর্মী হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র ব্যাং ব্যাং! (২০১৪, তার অভিনীত সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র) এবং জীবনীমূলক সুপার থার্টি (২০১৯) সাফল্য অর্জন করে।
হৃতিক মঞ্চেও কাজ করে থাকেন এবং জাস্ট ড্যান্স (২০১১) অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি প্রথম টেলিভিশনে উপস্থিত হন। এই অনুষ্ঠানের বিচারক হিসেবে তিনিই ভারতীয় টেলিভিশনের সর্বাধিক পারিশ্রমিক-প্রাপ্ত চলচ্চিত্র তারকা হয়ে ওঠেন। অভিনয়ের পাশাপাশি হৃতিক একাধিক দাতব্য ক্রিয়াকান্ডের সঙ্গেও জড়িত রয়েছেন। সেই সঙ্গে একাধিক ব্র্যান্ড ও উৎপাদিত সামগ্রীর হয়ে বিজ্ঞাপন করেছেন এবং নিজস্ব পোশাক লাইনও সর্বসমক্ষে এনেছেন। হৃতিক ২০০০ সালে সুজান খানকে বিয়ে করেছিলেন। তাদের দুই পুত্রসন্তান রয়েছে। ২০১৪ সালে তাদের চৌদ্দ বছরের বৈবাহিক সম্পর্কের ইতি ঘটে।