শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আমদানি নিষেধাজ্ঞায় শ্রীলংকার মসলা বাজারে অস্থিরতা

যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

নগদ অর্থ সংকটে ভোগার কারণে আমদানি নিষেধাজ্ঞায় শ্রীলংকার মসলাসহ বিভিন্ন পণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ হলুদের সরবরাহ সংকটে শ্রীলংকানদের নিত্যদিনের রসনায় প্রভাব পড়েছে। এছাড়া চোরাকারবারিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে মসলা ব্যবসা। খবর এএফপি।

কভিড-১৯ মহামারীর কারণে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন খাত স্থবির হয়ে পড়ায় নগদ অর্থ সংকটে ভুগছে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রটি। চলতি বছর ৪৫০ কোটি ডলারের আন্তর্জাতিক ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতায় গত মার্চ থেকে বেশকিছু পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে শ্রীলংকা সরকার।

আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়া সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে গাড়ি, ফ্লোর টাইলস ও মেশিনারি যন্ত্রাংশ। তবে হলুদ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞায় ক্ষোভে ফাটছে রসনাবিলাসীরা। মসলাটি সব তরকারি রান্নাবান্না ও স্থানীয় কুইজিনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া হেলথ সাপিস্নমেন্ট হিসেবেও অনেকে এটা ব্যবহার করে। কিন্তু প্রতি বছর লংকানরা যে ৭ হাজার ৫০০ টন হলুদ গ্রহণ করে তার এক-পঞ্চমাংশ কেবল দেশে উৎপাদন হয়।

মহামারী শুরুর পর থেকে হলুদের দাম ২০ গুণ বেড়ে কেজিপ্রতি রেকর্ড ৯ হাজার রুপি (৪৮ ডলার) পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে। এটা অনেক শ্রীলংকান শ্রমিকের সাপ্তাহিক বেতনের সমান।

প্রার্থনা ভীরাসিংহে নামে এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, মহামারী শুরুর পর থেকে আমাদের তরিতরকারি পুরো পাল্টে গেছে। বাজারে যে হলুদ মিলছে তা বেশির ভাগই নিম্নমানের। আমরা কখনই মনে করিনি হলুদ এতটা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে। আমরা এটাকে খুবই স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের নিত্য রান্নাবান্নায় তা ব্যবহার করতে পারছি না।

বাজারে গুরুত্বপূর্ণ এ মসলার ঘাটতিতে সুযোগ নিচ্ছে চোরাকারবারিরা। সম্প্রতি শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা ২৫ টন মসলা আটক করেছেন, যেগুলো কন্টেইনারের পেঁয়াজ চিহ্নিত করা ছিল। এছাড়া ভারতীয় জেলেদের নৌকা থেকেও কয়েক টন মসলা আটক করেছেন নৌবাহিনীর সদস্যরা।

যারা হলুদের জন্য অপেক্ষা করছিল তাদের চোখের সামনেই জব্দ হওয়া পণ্য পুড়িয়ে দেয়া হয়। কর্তৃপক্ষ বলছে, বাজারে দামের অস্থিরতা ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সস্তা পণ্য আমদানির বিপরীতে স্থানীয় বাজারকে শক্তিশালী করতে চাচ্ছে সরকার। গত বছর রেকর্ড ৩ দশমিক ৯ শতাংশ সংকোচনের পর থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন রক্ষণমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রটি। অগুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী রফতানিতে শ্রীলঙ্কা সরকারের নিষেধাজ্ঞায় গাড়ির টায়ার, ফ্লোর টাইলস ও টয়লেট সামগ্রীর মতো অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়েছে। শিগগিরই এ রফতানি নিষেধাজ্ঞা চক্র থেকে শ্রীলংকা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে করছেন না সংশ্লিষ্টরা। শুরুতে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দিলেও বর্তমানে তা ২০২১ সালের শেষ নাগাদ বহাল থাকছে। এ রক্ষণশীল ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে শ্রীলংকার প্রধান বাণিজ্য অংশীদারগুলো।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বলছে, কলম্বোর বিরুদ্ধে তারা শিগগিরই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডবিউটিও) নালিশ করতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর শ্রীলংকার দ্বিতীয় বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার হচ্ছে ইইউ। এদিকে শ্রীলংকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থনৈতিক গবেষণাপ্রধান চন্দ্রনাথ অমরাসেকারা গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রা খোয়ানোর চেয়ে জরিমানার মুখোমুখি হওয়ায় সমস্যা দেখছি না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে