বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
শেয়ারবাজার কারসাজি

গোয়েন্দা প্রতিবেদন সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেয়নি তৎকালীন সরকার

অর্থ-বাণিজ্য রিপোর্ট
  ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
গোয়েন্দা প্রতিবেদন সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেয়নি তৎকালীন সরকার
শিবলী রুবাইয়াত সালমান এফ রহমান

বিগত সরকারের আমলে কারসাজি, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে অধিকাংশ সময় দেশের শেয়ারবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছিল। সালমান এফ রহমান ও শিবলী রুবাইয়াত কারসাজিতে জড়িত উলেস্নখ করে গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি প্রতিবেদন দিয়েছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। কিন্তু তৎকালীন সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

প্রতিবেদনে পদচু্যত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নাম উঠে আসে। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পদত্যাগী চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, সাবেক কমিশনার শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ এবং বর্তমান নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানের নাম উঠে আসে।

1

প্রতিবেদনে বলা হয়, আইন লঙ্ঘন করে সালমান এফ রহমানকে বন্ডের অনুমোদন দেওয়ায় দ্বিতীয়বার বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসাবে পুনঃনিয়োগ পান শিবলী রুবাইয়াত ইসলাম।

প্রতিবেদনে বিএসইসির পরিচালক শেখ মাহবুব-উর-রহমান, সরকারি সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্টার আবুল খায়ের হিরু, তার প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ, হিরুর বাবা আবুল কালাম মাদবর, আলোচিত কারসাজিকারী আব্দুল কাইয়ুম, হিরুর প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংস, ক্রিকেটার ও সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান, বহুল বিতর্কিত ও যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকা নিষিদ্ধ ব্যবসায়ী জাবেদ এ মতিন এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট সায়েদুর রহমানের নাম উঠে আসে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টের সত্যতা যাচাই করে সিআইডি এই প্রতিবেদন তৈরি করে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সেরা ১০টি প্রতিবেদনের রেফারেন্স উলেস্নখ করেছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়, বাজারে বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ড ছেড়ে সালমান এফ রহমান ৩ হাজার কোটি টাকা তুলে নেন। এক্ষেত্রে প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ১০০ টাকা দরে ওই বন্ড কিনতে বাধ্য করা হয়।

এছাড়াও বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারের দাম ১০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন সালমান। এতে সহায়তা করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সম্মতি না দিলেও বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ও তার চক্রটি অবৈধভাবে সুবিধা নিয়ে শেয়ার মার্কেটে দুর্বল কোম্পানি সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, এস আলমের মালিকানাধীন গেস্নাবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, শিকদার ইন্সু্যরেন্স, ক্যাপিটেপ গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ড, এশিয়াটিক ল্যাব, বেস্ট হোল্ডিংসসহ বিভিন্ন দুর্বল কোম্পানির আইপিও (প্রাথমিক শেয়ার) অনুমোদন দেয়। এ প্রক্রিয়ায় বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নিতে সহায়তা করেন শিবলী। এর ফলে মার্কেটে তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়ে ধারাবাহিক পতন হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেয়ার মার্কেটে দুর্বল আইপিও অনুমোদন দিলে বিপুল অঙ্কের টাকা মার্কেট থেকে চলে যায়। এরপর সেকেন্ডারি মার্কেটে কারসাজির কারণে ধারাবাহিক পতন হয়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হয়ে যান। এছাড়াও বেক্সিমকো লিমিটেডকে ২ হাজার ৬শ' কোটি টাকার জিরো কুপন বন্ড অনুমোদন দেন শিবলী রুবাইয়াত। এরপর বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসাবে শিবলী রুবাইয়াতের পুনঃনিয়োগে সরাসরি সহায়তা করেন সালমান এফ রহমান। কিন্তু সিআইডি তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এই বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে তদন্ত প্রতিবেদনের পর সালমান এফ রহমান এবং শিবলী রুবাইয়াত আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েন। শেয়ারবাজার পতনের প্রতিবাদের বিনিয়োগকারীরা ডিএসইর সামনে প্রতিবাদ জানালে মিথ্যা মামলা দিয়ে ডিবির হারুনকে দিয়ে তাদের জেল-হাজতে পুরে দেন। এতে অন্যান্য বিনিয়োগকারীরা ভয় পেয়ে যান। এরপর পতন আরও ঘনীভূত হলেও বিনিয়োগকারীরা আর প্রতিবাদ জানাতে সাহস পায়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে