চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে সরকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ, প্রায় ৫৮,০০০ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায়ে এত বড় ঘাটতির জন সাবেক সরকারের অস্বাভাবিক রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নেওয়াকে দায়ী করেছেন বিশ্লেষকরা। এছাড়াও জুলাই-আগস্টে দেশব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতা, পরবর্তী মাসগুলোতে অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত গতি না ফেরাসহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাঠ পর্যায়ের অফিসে কর্মকর্তাদের কার্যক্রমে ধীরগতি অন্যতম বলেও জানান তারা।
অবশ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত অক্টোবর থেকে রাজস্ব আদায়ে কিছুটা গতি বেড়েছে এবং সর্বশেষ ডিসেম্বরে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আদায় বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। তবে তা সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরে রাজস্বে বড় ঘাটতি অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন তারা।
এদিকে, রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড (আইএমএফ) সরকারকে ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছে, যার কারণে গত ৯ জানুয়ারি প্রায় ১০০ পণ্য ও সেবায় ব্যাপকহারে ভ্যাট বাড়িয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে বাড়তি ১২,০০০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
গত বাজেটে সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য এনবিআরকে ৪.৮০ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল। এনবিআরের কর্মকতারা হিসাব করে দেখেছেন, অর্থবছরের প্রথমার্ধে আদায় হয়েছে মাত্র ১.৫৮ লাখ কোটি টাকারও কম।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আবদুল বলেন, গত সরকারের সময়ে বাস্তবতা বিবেচনা না করেই বড় রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল, যার কারণে এখন প্রায় ৫৮,০০০ কোটি টাকার গ্যাপ দেখা যাচ্ছে।
জুলাই, আগস্টের গণঅভু্যত্থান এবং পরবর্তীতে অর্থনীতিতে একটা প্রভাব পড়েছে। একদিকে ব্যবসায়ে গতি কম, অন্যদিকে মাঠ পর্যায়ের আদায়কারী অফিসগুলোর মধ্যেও গা-ছাড়া ভাব রয়েছে। এটিও রাজস্ব আদায়ে প্রত্যাশিত গতি না আসার অন্যতম কারণ বলেও মনে করেন তিনি।
উলেস্নখ্য ড. মুহাম্মদ আবদুল মজিদ ২০০৭-০৮ সময়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ওই অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে এ যাবতকালে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।সাবেক এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বকেয়া রাজস্ব আদায়, কর ফাঁকিবাজদের খুঁজে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে হয়তো ততটুকু গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত ছয় মাসে আয়কর আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২.৫৯ শতাংশ, আমদানি কর আদায় বেড়েছে প্রায় ০.৬১ শতাংশ্ত কিন্তু একই সময়ে ভ্যাট আদায় কম হয়েছে প্রায় ৫.৪৫ শতাংশ। মূলত ব্যবসা বাণিজ্যের সঙ্গে ভ্যাট ও আমদানি আদায়ে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
এনবিআরের ভ্যাট শাখার সাবেক সদস্য আলী আহমেদ বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি মন্থরতা রয়েছে। আবার সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কাটছাঁট হয়েছে। আবার অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগেও গতি নেই। এসব কারণে ভ্যাট আদায় কম হচ্ছে।
অবশ্য রাজস্ব আদায়ের গতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ডিসেম্বরে আয়কর আদায় বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ এবং আমদানি কর প্রায় ১০ শতাংশ। কিন্তু আলোচ্য সময়ে ভ্যাট আদায় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আগামী মাসগুলোতে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড় বাড়তে পারে। তাতে অর্থনীতিতে গতি বাড়বে। তা সত্ত্বেও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বড় ঘাটতি হতে পারে। এ অবস্থায় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে কমিয়ে আনার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোর কর্মকর্তাদের আরও সক্রিয় হতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন।